শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন

চাষিদের মাথায় হাত ! পীরগঞ্জে প্রায় ১৮ লাখ টাকার ফুলকপি কুকড়ে গেছে

পীরগঞ্জ(রংপুর) প্রতিনিধি :  রংপুরের পীরগঞ্জে ফুল কপি চাষিদের স্বপ্ন কেড়ে নিলো জেনেটিক কোম্পানির ছত্রাক নাশক কীটনাশক ওষুধ। ওই কোম্পানির ছত্রাক নাশক ওষুধ প্রয়োগের ফলে দিনদিন কপির চারা লুটিয়ে পড়ে নিস্তেজ হয়ে আসছে। ফলে ডজন খানেক চাষির প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লাগানো প্রায় ১৮ লাখ টাকার ফুলকপি বিনষ্ট হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর কৃষি পল্লী কালসার ডারা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

গত শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আব্দুল্লাপুর কালসারডারা বাজারের আশপাশে ও সংলগ্ন সাদুল্লাপুর সীমানায় ডজনখানেক চাষীর ফুলকপির চারা গাছের মাথা পুড়িয়ে কুঁকড়ে গেছে। ফলে ফুলকপি চাষিরা কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। আব্দুল্লাপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ ফুলকপি চাষি রনজু মিয়া জানান, গত সপ্তাহে ঝড়বৃষ্টির কারনে আমরা কালসার ডারা বাজারের হৃদয় ট্রেডার্স থেকে জেনেটিক কোম্পানির এগবেন ৫০% এফ নামের ছত্রাক নাশক ওষুধ নিয়ে ফসলের ক্ষেতে স্প্রে করি। ৩০ শতাংশ জমিতে ওষুধ স্পে্র করার ২ দিন পর থেকে ফুলকপির চারাগাছগুলো হলুদ হয়ে মাথা নুইয়ে পুড়িয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া শুরু করে। দ্রুত হৃদয় টেডার্সের মালিক রেজ্জাকুল ইসলামকে বিষয়টি জানানো হয়। একই অভিযোগ পার্শ¦বতীর্ সাদুল্লাপুর উপজেলার আলীনগর বাদুরপুর ও আব্দুল্লাপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষকের। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে হৃদয় টেডার্সের মালিক রেজ্জাকুল ইসলাম নিজের জমিতে চাষকৃত ফুলকপির ক্ষেতে ওই ছত্রাক নাশক ওষুধ স্পে্র করেতার ফুলকপির চারাগাছের একই পরিনতি দেখতে পায়। ওই এলাকার অপর ক্ষতিগ্রস্থ চাষি লাটু মিয়া জানান, ৪০ শতক জমির ফুলকপির চারা গাছ মাটিতে মিশে যাচ্ছে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদন করা ফসল ধুলিস্যাতের পথে। অথচ উৎপাদিত ফসল ১০/১৫ দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রি করা যেতো।

সেই ফুলকপির গাছ মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। আমরা কীটনাশক কোম্পানির কাছ থেকে ন্যুনতম ক্ষতিপুরণ দাবি করছি। লাটু মিয়ার মতো ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক রনজু মিয়া, মুহিদুল ইসলাম, আফজাল হোসেন, সাদেকুল ইসলাম, সেরাজুল, শফিকুল, রেজ্জাকুল, জাহিদুল ও শফিকুল ইসলামও ক্ষতিপুরণ দাবি করেন। এ প্রসঙ্গে হৃদয় টেডার্স এর স্বত্বাধিকারী রেজ্জাকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কথা শুনে তিনিও জমিতে একই গ্রুপের ছত্রাক নাশক ওষুধ প্রয়োগ করে দেখতে পান, ১ দিন পর থেকে জমিতেও কপির গাছ হলুদ হয়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জেনেটিক কোম্পানির মার্কেটিং অফিসারকে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ পেয়ে গত ১৫ অক্টোবর কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার কালসার ডারা বাজারে আসেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা তার নিকট হইতে ক্ষতিপুরণ দাবি করেন। এ সময় মার্কেটিং অফিসার কৃষকদেরকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস প্রদান করে মুচলেকা দিয়ে চলে যান। গত ১৮ অক্টোবর কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে চাষিদের ফসলের ক্ষেত পরিদর্শনসহ ক্ষতিপুরণ দেবার কথা থাকলে কেউ না আসায় কৃষকরা এখন চোখে সষের্র ফুল দেখতে শুরু করেছে। তারা প্রতিদিন ওই দোকানির কাছে ধরনা দিচ্ছে।

এদিকে হৃদয় টেডার্স এর স্বত্বাধিকারীও বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে মাকের্টিং অফিসার অদিন সরকার ডিপো রিজিওনাল ম্যানেজার (ডিআরএম) জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি সুরাহার দায়িত্ব নিয়েছেন। ডিপো রিজিওনাল ম্যানেজার (ডিআরএম) জাহাঙ্গীর আলম জানান, যে প্রডাক্টটি সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে সেই প্রডাক্টটি আদৌ আমাদের কি না সেটা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আবার অন্য কোন কোম্পানির প্রডাক্টের সাথে মিশ্রনে প্রয়োগ হয়েছে কি না সেটাও দেখার বিষয়।

তিনি আরও বলেন নিয়ম বহিভুর্তভাবে মাত্রতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগেও এমনটা ঘটতে পারে। উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবীদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, ওই এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ—সহকারি কৃষি কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন বিনষ্ট ফসলের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের নমুনাসহ অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওষুধ প্রয়োগে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হলে এবং তদন্ত করে প্রমান পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আব্দুল্লাহীল বাকী বাবলু
পীরগঞ্জ,রংপুর

  ()

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335