শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

ডিম-সবজিতে টিকে আছে মেসের শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ‘আগে সপ্তাহে দুই দিন গরুর মাংস খেতাম। দাম বেড়ে যাওয়ায় সেটা খাইনি ছয় মাস। ব্রয়লার মুরগি আমিষের চাহিদা মেটাতো, এখন সেটারে দামও বেড়ে গেছে। ফলে সেটাও আর মেসে আসে না। ডিম আর সবজি এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। যেভাবে দাম বাড়ছে হয়ত ডিমও মেসে আসা বন্ধ হয়ে যাবে। মিল আগে ২০-২৫ টাকায় হতো এখন সেটা ৩০-৩৫ টাকা। তারপরও ভালো খেতে পারছি না। এমনকি সবজির পরিমাণটাও কম পাই। এভাবে না পারছি খেতে না পারছি কাউকে কিছু বলতে।’

অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর মিতি-তাছিন ছাত্রাবাসের ছাত্র সাজ্জাদুর রহমান সাজু। সাজুর মতো একই অভিযোগ উত্তরের জেলা নীলফামারীর মেস ও ছাত্রাবাসে অবস্থান করা প্রায় ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির ফলে মেসের খাবারের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে গরু ও মুরগির মাংসসহ পুষ্টিকর খাবার। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে জেলা শহরের খালিদ ছাত্রাবাসা, মহসিন ছাত্রাবাসসহ বেশ কয়েকটি ছাত্রাবাসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মেসের চুলায় রান্না হয় না গরুর মাংস। আমিষের চাহিদা মেটাতে মেসগুলোতে ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া হলেও দু’মাস ধরে সেটিও প্রায় বন্ধের উপক্রম। তাই বাধ্য হয়েই অনেক মেসে দুপুরে ডিম-সবজি ও রাতে শুধু সবজি খেয়ে কোনো রকম টিকে আছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ডিমের দাম বাড়লে সেটিও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা৷ এমন অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের আমিষের পাশাপাশি পুষ্টির অভাব হতে পারে বলে ধারণা স্বাস্থ্য সচেতনদের।

জেলা শহরের উকিলের মোড় এলাকার খালিদ ছাত্রাবাসের ছাত্র মো. রাসেল ইসলাম। চার মাস আগে গরুর মাংস খেয়েছিলেন মেসে এমন আক্ষেপ জানিয়ে বলেন, আগে মিল ছিল ২০-২৫ টাকা। সপ্তাহে ২-৩ দিন গরুর মাংস খেতাম৷ মুরগিতো প্রতিদিনই থাকতো। ইদানিং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গরুর মাংসতো দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মুরগিও সচরাচর থাকে না। প্রতিদিন ডিম খেতে হচ্ছে। অনেক সময় পুরো ডিমও পাই না, অর্ধেক খেতে হয়।

আরেক ছাত্র মোস্তাকিম ইসলাম বলেন, ‘ভাই সত্যি বলতে প্রতিদিন মাছ-মাংস খাইতাম, এখন খাইতে পাই না। গরুতো কিনতে যাওয়ার সাহসই নেই, মুরগিও এখন বিলাসিতা। মাছ কিনলেও ছোট ছোট পিস করে নিতে হয়। ডিমও অর্ধেক খাইতে হয়। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হয়ে অন্তত এটা বুঝতে পারি আমাদের পুষ্টির যে চাহিদা তা পুরণ হচ্ছে না। সবজিও অল্প করে খাই এখন।’

কলেজপাড়া এলাকার নিরিবিলি ছাত্রীনিবাসের অনুরাধা রায় বলেন, আগে প্রতিদিন মুরগি কিনতাম। এখন আর হয় না। তেল, মশলা কম কিনতে হয়। অল্প তেল, মশলার রান্না খেতে হয়। মুরগিও তো খাওয়া হয় না এখন। এক বেলা ডিম খাচ্ছি ১৫ দিন ধরে৷ আরেক বেলা সবজি দিয়ে খেতে হয়। সকালেতো ডাল-ভর্তা।

মীম ছাত্রীনিবাসের ছাত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, মেসে খাওয়া আর না খাওয়া সমান। মিলচার্জ ৪০ টাকা দিয়েও মাংস খেতে পারছি না। সে জায়গায় আগে আমরা গরুর মাংস খেতাম ২৫ টাকা মিল দিয়ে। বাজারের অবস্থা এতটাই খারাপ, আমরা যে খেয়ে ভালো করে পড়াশুনা করবো সে সুযোগও নেই। সরকার ছাত্রাবাসগুলোর দিকে তাকালে হাজার শিক্ষার্থীর আজাহারি শুনতে পারবে। আমাদের জন্য হলেও একটু দাম কমান, আমরা একটু ভালো খেয়ে বাঁচতে চাই।

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. গোলাম রসুল রাখি বলেন, খেতে না পারা ছাত্র-ছাত্রীদের যেমন সমস্যা, এর থেকে বড় সমস্যা মানসিক ও আর্থিক চিন্তা। এমন অবস্থা থেকে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা হতে পারে। তাদের ঘুম কম হওয়া, হতাশা, হীনমন্যতা, অবস্বাদ, ক্লান্তিভাবসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও রক্তশূন্যতাও দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এখানে মনিটরিং করে অন্য খাবারের মধ্যে যেমন ডিম, উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি, কলাসহ এ ধরনের খাবার দিয়ে তাদের নিয়মিত পুষ্টিমানটা ঠিক রাখা প্রয়োজন। তবে বর্তমানে প্রোটিনের যে সংকট এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপও বেড়ে যেতে পারে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335