শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন

পূণ্য স্মৃতি বিজড়িত আদমদীঘি বাবা আদম (রঃ) মাজারে আজ ওরশ মোবারক

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ  ২৪ ফাল্গুন, ৯মার্চ বৃহস্প্রতিবার পূণ্য স্মৃতি বিজড়িত আদমদীঘি বাবা আদম (রঃ) মাজারে ঐতিহাসিক ওরশ মোবারক। ওরশকে ঘিরে আয়োজক কমিটি সকল প্রস্তুতি নিয়েছে। ওরশ মোবারকে প্রধান অতিথি থাকবেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজু। প্রধান বক্তা বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ প্রখ্যাত ওয়ায়েজিন পাবনা সিনিয়র মোদাররেছ খয়ের বাগ দাখিল মাদ্রাসার আলহাজ্ব হযরত মাওঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন আনছারি সাহেব। এই মাজারের রয়েছে ব্যাপক বিস্মৃতি-হযরত বাবা আদম (রহঃ) এর পূর্ণ্য স্মৃতি বিজরিত এলাকা বগুড়া জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত আদমদীঘি উপজেলা। অতি প্রাচীন ও ইসলামী চিন্তাবিদদের মাজারে পরিপূণ্য এই আদমদীঘি। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ লোক অধ্যুষিত এ উপজেলায় আয়তন ১৬৮.৮৪ বর্গ কিলোমিটার। ইতিহাস থেকে জানাযায়, প্রাচীনকালে আদমদীঘি অঞ্চল পৌন্ড্র রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এক অংশ হিসাবে বিবেচিত হতো। প্রাগৌতিহাসিক যুগ থেকে এ অঞ্চলে পৌন্ড্র রাজ্যের প্রশাসকগন সহ মৌর্য গুপ্ত এবং গৌর শাসনাধিনে ছিল। অষ্টম শতাব্দির মাঝামাঝি সময় থেকে পাল রাজ্যের শাসনাধিনে আসে এবং তা একাদশ শতাব্দির পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আদমদীঘির নাম করণের পিছনে রয়েছে বিশাল কাহিনী। বগুড়ার মহাস্থান গড়ের সুলতান ইব্রাহিম বখলীর (রহঃ) মুত্যুর পর ক্রমান্বয়ে ইসলাম প্রচার স্থিমিত হয়ে আসে।

এসময় বিক্রমপুরের রাজা বল্লালসেন এই এলাকায় শাসন করতেন। তার শাসনামলে নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে খোরাসান থেকে বাবা আদম (রহঃ) তার ১২ জন সহচর নিয়ে এইখানে আস্তানা গড়ে তোলেন। বাবা আদম (রহঃ) এর ব্যবহার এতই ভাল ছিল যে অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। বাবা আদম (রহঃ) হিন্দু ও মুসলমানদের নিকট খুব সম্মান পেতেন। সেই সময় পানির কষ্ট দেখে বাবা আদমের সমসসাময়িক নাটোরের মহিয়সী রাণী ভবানী, বাবা আদমের অলৌকিক ক্ষমতাবলির উপর আস্থা বা বিশ্বাস স্থাপন করে একাট দীঘি খনন পূর্বক এই সাধকের নামে উৎসর্গ করেন। এর কিছু দিন পর মাজারের উত্তরে আরও একটি দীঘি খনন করা হয়। এই দীঘি বাবা আদমের নামানুসারে পরবর্তি কালে এই স্থানের নাম হয় ”আদমদীঘি”। দীঘির উত্তর পার্শ্বে বাবা আদম (রহঃ) এর মাজার ও একটি বিশাল মসজিদ ও মিনার নির্মানাধীন রয়েছে।

বাবা আদম (রহঃ) বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর শিষ্য ছিলেন। এছাড়া শিয়ালশন গ্রামের হযরত শাহ রেজা দরবেশের মাজার, শাহাপুরে দেওয়ান গাজী রহমানের মাজার, গোবিন্দপুরে দেওয়ান চাচার মাজার, বশিপুরে দুর্লব বাবার মাজার, সহ এ উপজেলায় বহু পীর কামেলের মাজার রয়েছে।কথিত রয়েছে রাজা বল্লাল সেনের অত্যাচারে সমুচিত জবাব দিতে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে বাবা আদম (রহঃ) বিক্রমপুরের পার্শ্বে আস্তানা গড়ে তোলে। সেখানে হাজার হাজার মানুষকে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা গ্রহন করান। গরু জবাই করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। এমন সময় একটি পাখি এক টুকরো গরুর মাংস মুখে নিয়ে উড়ে এসে বল্লাল সেনের দেব মন্দিরের পার্শ্বে ফেলে দেয়। এ দৃশ্য দেখে রাজা বল্লাল সেন আর স্থির থাকতে পারেনি। বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধে আহত হয়ে বাবা আদম (রহঃ) ফিরে এলেন আদমদীঘিতে। এর কিছুদিন পর তিনি এখানে ইহলোক ত্যাগ করেন। তাকে কবর দেয়া হয় ওই দীঘির পাড়ে। এখানে গড়ে উঠেছে মসজিদ ও মাদরাসা।

বাবা আদমের নামের সাথে দীঘির নাম যোগ করে নাম করন হয় “আদমদীঘি”। এই মাজারকে ঘিরে প্রতি বছরের ফাল্গুন মাসে বাৎসরিক ওরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মাজার কমিটির সভাপতি আদমদীঘি থানার অফিসার ইনর্চাজ রেজাউল করিম রেজা ও সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান,প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাৎসরিক ওরস মোবারকের আয়োজন করা হয়েছে। ওরশ মোবারকের ধারাহিকতায় মুসল্লীদের তবারকের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়দের জন্যও আলাদা খাবার ব্যবস্থা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335