শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন

পোশাকশিল্পের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি এনেছে ‘স্মার্ট সলিউশন’

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরেই তৈরি পোশাকশিল্পে (আরএমজি) লেজার কাটার, থ্রি-ডি প্রিন্টিং এবং সিউবট ব্যবহার হচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে এখন পোশাকশিল্প রোবোটিক্স এবং অটোমেশন প্রযুক্তির দিকে নজর দিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়ছে, পাশাপাশি শোরিং (সাময়িক বিপদগ্রস্ত কাঠামোকে সাপোর্ট দেওয়া) প্রক্রিয়া সহজ করছে। রাজধানীতে শুরু হওয়া গার্মেন্টস মেশিনারিজ অ্যান্ড এক্সেসরিজ মেলায়ও প্রদর্শিত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তির টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি।

এবারের মেলায় পোশাক খাতের বিভিন্ন নতুন নতুন সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলাদেশসহ ১৮ দেশের নামকরা সব প্রতিষ্ঠান। মেলায় একই ছাদের নিচে বাহারি রংয়ের সুতা, বোতাম, জল ছাপ দেওয়ার সামগ্রী ও যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী হচ্ছে। রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে (আইসিসিবি) আয়োজিত চার দিনের এ প্রদর্শনীর আজ (শুক্রবার) তৃতীয় দিন চলছে।

মূলত আঠারো শতকের দিকে টেক্সটাইল শিল্পের ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে প্রথম শিল্পবিপ্লব শুরু। তখন থেকে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহারের প্রথম ধাপের সূচনা। এরপরই পাওয়ার তাঁত, কটন জিন, সেলাই মেশিনের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির আবির্ভাব হয়। এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে টেক্সটাইল শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও নুতন নতুন উদ্যোগ নিয়েছে।

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তৈরি পোশাকশিল্প মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ ১০ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য অর্জনে ৯ বছরের মধ্যে বাড়তি ৫ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে হবে শিল্প মালিকদের। পোশাক রপ্তানির এ লক্ষ্য অর্জন আর পণ্যের আধুনিকায়নে প্রয়োজন প্রযুক্তির ছোঁয়া। এ খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারে একদিকে কমবে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পণ্য ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হবে।

এসব চিন্তা মাথায় নিয়েই এবারের মেলায় সর্বাধুনিক টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে ‘স্মার্ট সলিউশন’। প্রতিষ্ঠানটির আনা এসব যন্ত্রপাতি কম সময়ের মধ্যেই পণ্য তৈরিতে কার্যকর। একই সঙ্গে বাড়তি শ্রমিকেরও প্রয়োজন হবে না। এতদিন কাজ করে আসা শ্রমিকদের অন্য কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন শিল্প উদ্যোক্তারা। এতে বাঁচবে কর্মঘণ্টা, দ্রুত সময়ে হবে অধিক পণ্য উৎপাদন। আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন পোশাক মালিকরা।

মেলায় প্রদর্শিত টেক্সটাইল শিল্পের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে- কম্পিউটারাইজড মেশিন, মর্ডান স্পিনিং মেশিনারি এবং উন্নত স্পিনিং টেকনিক, নিটিং মেশিন, প্লিটিং, লেজার প্রিন্টিং, থ্রি-ডি প্রিন্টিং, সিউবট, ন্যানো প্রযুক্তি প্রভৃতি।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) আইসিসিবির তিন নম্বর হলে কথা হয় স্মার্ট সলিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোয়েবউল্লাহ শোয়েবের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা আরএমজি সেক্টরের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছি। যেগুলো দিয়ে একেবারে কম শ্রমিক দিয়ে সর্বোচ্চ পোশাক উৎপাদন করা সম্ভব। রয়েছে লেবেল মেকিং সলিউশন মেশিন। এর মাধ্যমে অন্তত ১০ জন শ্রমিকের কাজ হবে। ওইসব শ্রমিককে অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে। ফলে আমাদের এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সর্বনিম্ন খরচে সর্বোচ্চ পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন শিল্প মালিকরা।

শোয়েবউল্লাহ শোয়েব বলেন, একটা সময় পোশাকশিল্পের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হতো দেশের বাইরে থেকে। এখন সেগুলো দেশেই তৈরি হচ্ছে। আমাদের পোশাকশিল্প যত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে অন্য দেশে এত দ্রুত এগোতে পারেনি। শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, দেশের বাইরে বেড়েছে পোশাকের চাহিদা। ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। এই লক্ষ্য অর্জনে ৯ বছরের মধ্যে বাড়তি ৫ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে হবে তাদের। শিল্প মালিকদের লক্ষ্য পূরণে সহযোগিতা করবে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি। আমরা গার্মেন্টস এক্সেসরিজের বিভিন্ন মেশিনারিজ সরবরাহ করে থাকি। বিদেশি উন্নত প্রযুক্তির এসব মেশিন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও টেকসই। দামও ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে।

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিজিএমইএ। লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ সময়ে শ্রমিকের সংখ্যা হবে ৬০ লাখ। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। লক্ষ্যে যেতে আগামী ৯ বছরের মধ্যে বাড়তি ৫ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে হবে। এর আগে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে (২০২১ সালে) ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল বিজিএমইএ। শেষ পর্যন্ত করোনাসহ নানা কারণে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি উদ্যোক্তাদের।

গত বুধবার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও মেশিনারিজের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী (গ্যাপেক্সপো) শুরু হয়েছে। গার্মেন্ট টেকনোলজি, ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ট্রেড ফেয়ার বাংলাদেশ ও ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন এবং ফেব্রিক্স এক্সপোও একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) এ প্রদর্শনীর আয়োজক। সহ-আয়োজক ভারতের এএসকে অ্যান্ড এক্সিবিশন। এবারের এক্সপোতে মোট ৬৬০টি প্যাভিলিয়নে দেশি-বিদেশি ২৫০ প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য এবং মেশিনারিজ প্রদর্শন করছে। অংশ নিয়েছে চীন, জাপান, জার্মানি, ভারত, কোরিয়াসহ ১৮ দেশ।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335