বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন

টাঙ্গাইলে ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে একদিকে সরকারিভাবে বৃহৎ পরিমাণের কৃষককে বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ ও সার প্রদান অপরদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্বার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া চলতি রবি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ভুট্টার আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে।

জেলার ১২টি উপজেলায় বিশেষ করে চরাঞ্চলজুড়ে এখন শুধু ভুট্টার উঠতি চারা শোভা পাচ্ছে। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরাও অধীর আগ্রহে জমিতে কাজ করছেন।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগ ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল পাঁচ হাজার ৫০০ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে সাত হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় আবাদ বেড়েছে ১ হাজার ৭৭৬ হেক্টর বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ছয় হাজার ৭৫০ কৃষককে দুই কেজি করে মোট ১৩ হাজার ৫০০ কেজি ভুট্টার বীজ দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে। এছাড়াও ২০ কেজি করে ডি.এ.পি সার এবং ১০ কেজি করে এম.ও.পি সার দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ মৌসুমে বৃহৎ পরিমাণের কৃষক ভুট্টার প্রণোদনা পেয়েছেন।

কৃষকরা জানান, গত বছর বাজারে ভুট্টার দাম বেশি থাকায় অধিক লাভবান হয়েছেন। এ কারণে প্রণোদনা কর্মসূচির বাইরেও অনেক কৃষক তাদের জমিতে এ মৌসুমে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এছাড়াও ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি ও ফলন ভালো করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোতিা করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা আরও জানান, নদীবেষ্টিত বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা রবি মৌসুমে গত কয়েক বছর যাবৎ আগাম জাতের হাইব্রিড ভুট্টার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চরাঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হয়। কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভুট্টাচাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গমের পাশাপাশি ভুট্টার ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্টা গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক বিঘা জমিতে ভুট্টা হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। বিঘা প্রতি আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারেন।

চলতি রবি মৌসুমে জমিতে ফলনের আকৃতি ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটেছে। তারা এখন জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেক কৃষক ভুট্টার জমিতে সাথী ফসল হিসেবে শীতকালীন শাক-সবজিরও আবাদ করেছেন।

ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের ভুট্টাচাষি সোহরাব বলেন, এবছর বন্যায় আমাদের বীজতলা, সবজি ক্ষেতসহ সকল ফসল তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এর ফলে আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হই। আর এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা পরবর্তী সময়ে যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরে আমরা ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম। আর লাভ অনেক বেশি। আশা করি ভুট্টা চাষ করে বন্যার ক্ষতি অনেকটাই আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো।

ভুট্টাচাষি আক্কাস বলেন, এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ার আমাদের চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়। এবছর আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আশা করছি বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ফলন পাবো। গত বছর চরাঞ্চলে ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এবছর আরও অধিক জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আমার দেখা-দেখি যারা অন্য ফসল আবাদ করতো তারাও এবছ ভুট্টা চাষ করেছে।

দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারহানুল কবির বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন ফসল হিসেবে কৃষক যেন চাষাবাদের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য আমরা সরাসরি কৃষককে সঠিকভাবে ভুট্টাচাষ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। ভুট্টায় বিভিন্ন রোগ ও পোকা আক্রমণ করলে সেগুলো দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরও ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335