শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৮ অপরাহ্ন

লক্ষ্মীপুর ‘রহস্যময়’ খোয়াসাগর দিঘি এখন বিনোদন কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় আড়াইশ বছর আগে দিঘিতে পানি পান করতে নেমে উধাও হয়ে যান এক নববধূ। এরপর সবার মুখে মুখে কাহিনি। সময়ের পরিক্রমায়ও গল্প মুছে যায়নি। জনশ্রুতি লক্ষ্মীপুরের খোয়াসাগর দিঘিকে ঘিরে। রহস্যময় দিঘিটি এখন বিনোদন কেন্দ্র

 জেলা প্রশাসন স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ২৫ একর বিস্তৃত দিঘিটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত কুয়াশাচ্ছন্ন দেখায়। কুয়াশাকে স্থানীয় ভাষায়খোয়াবলা হয়। দিঘির পানিও সাগরের মতো মনে হয়। দুই মিলেই দিঘিটির নাম দেওয়া হয়খোয়াসাগর

সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটন মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনের আর্থিক সহায়তায় দিঘিটি বিনোদন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। জেলায় উল্লেখযোগ্য কোনো পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দালালবাজার খোয়াসাগর দিঘিটি প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে

জেলা শহরের লক্ষ্মীপুররায়পুর আঞ্চলিক সড়কের দালালবাজার এলাকার পূর্ব পাশে এর অবস্থান। দর্শনার্থীরা জানান, একসময় দিঘিটির নাম সবাই শুনতেন। কিন্তু দেখতে আসা হতো না। সম্প্রতি দিঘিটির সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগ জেলা প্রশাসনের তদারকিতে দিঘিটি এখন স্থানীয়দের কাছে অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় কোনো পর্যটনকেন্দ্র নেই। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিঘির চারপাশ বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। দিঘির উত্তর পশ্চিম পাশে গাইডওয়াল এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বেঞ্চ দিয়ে দর্শনার্থীদের বসার সোলার ল্যাম্পপোস্ট দিয়ে রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে

দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে দুটি নৌকা। একই সঙ্গে ওয়াকওয়েতে রেলিং দিয়ে শিশুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিঘি এলাকায় বিনোদনের ব্যবস্থা করতে এরই মধ্যে প্রায় দুই কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। দিঘির পাশে রায়পুরলক্ষ্মীপুরের সড়কের একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। সড়ক জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে সড়কের বাঁকটি ঠিক করতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে

অন্যদিকে দিঘিকে ঘিরে গড়ে উঠছে বেশ কয়েকটি মিনি চাইনিজ রেস্তোরাঁ। শিশুদের মনোমুগ্ধকর বিনোদনের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে শিল্পাঙ্গন

লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দালালবাজারের জমিদার ব্রজ বল্লভ রায় মানুষের পানীয় জল সংরক্ষণের জন্য ১৭৭৫ সালে দিঘিটি খনন করেন। তবে দিঘি নিয়ে রয়েছে গা শিহরিত একটি জনশ্রুতি। তা হলো এক নববধূ নিয়ে বরযাত্রীরা দিঘিটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন পালকিতে করে বধূকে নেওয়া হতো। দূরের পথ হওয়ায় দিঘির পানি দিয়ে তৃষ্ণা মেটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন নববধূ। পরে পালকি থেকে নেমে তিনি দিঘির পানি পান করতে যান

অঞ্চলি ভরে পানি পান করতে যাওয়ার সময় পানির নিচের দিক থেকে কে যেন তাকে টেনে নিয়ে যায়। এরপর আর ওই নববধূকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। নববধূ ছাড়া সবাই বাড়ি ফিরেছেন। তবে বর নববধূর নাম অজানাই থেকে গেছে। কেউ তাদের নাম বলতে পারেননি। যুগে যুগে প্রচণ্ড খরাতেও নববধূ হারিয়ে যাওয়া দিঘির সেই অংশটুকু কখনো শুকায়নি। সেখানে একটি গভীর গর্ত রয়েছে। দিঘির পশ্চিম পাশের রাস্তার বিপরীত পাশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুটি মঠ রয়েছে

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম ভুলু বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল প্রথম খোয়াসাগর দিঘি দালালবাজার জমিদার বাড়ির সংরক্ষণে প্রকল্প দেন। এরপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিঘি জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। এখন জেলাবাসীর জন্য দুটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। ছুটির দিন ছাড়াও প্রতিদিন এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, খোয়াসাগর দিঘি পার্কটি এখন জেলাবাসীর বিনোদনের জন্য অন্যতম স্থান। তবে পার্শ্ববর্তী সড়কের বাঁকটি ঝূুকিপূর্ণ। এটি সোজা করলে এলাকাটি ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। পার্ক এলাকারও জায়গা বৃদ্ধি হবে। পার্কটির সৌন্দর্যও বেড়ে যাবে

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335