শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশায় গবাদি পশু পালনে হিমশিম খাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের কৃষক ও গো খামারিরা। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট ও শীতজনিত নানা রোগ। এতে করে কমছে দুধ উৎপাদন।
গো খামারিরা বলছেন, দুধ উৎপাদন বাড়িয়ে যদি সঠিক বাজারজাত নিশ্চিত করা না হয়, তবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের দুগ্ধ খামারিদের টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে দুগ্ধ উৎপাদনে। ব্যাহত হতে পারে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার এ যাত্রা। একই সঙ্গে উৎপাদন ব্যয়ের লাগাম টানা না গেলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে এ খাত।
জেলার শাহজাদপুর উপজেলার রাউতাঁরা গ্রামের গো খামারি হাসিব খান তরুন বলেন, আমার খামারে ৫০টি গাভী রয়েছে। কিছুদিন আগে প্রতিদিন ৩৮০ থেকে ৩৯০ লিটার দুধ উৎপাদন হলেও শীতে তা নেমে দাড়িয়েছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ লিটারে। ঠান্ডায় ঘাসের উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমাকে নির্ভর করতে হচ্ছে বাজারের দানাদার খাদ্যের ওপর। তবে গো খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের তারা উদ্দিন বলেন, আমার ছয়টি গাভী আছে। গাভীগুলো শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দেড় মাস ধরে তিনটি গাভী থেকে নিয়মিত দুধ পাচ্ছি। দুই সপ্তাহ আগেও প্রতিদিন গড়ে ১২ লিটার দুধ পেতাম, এখন পাচ্ছি মাত্র সাড়ে ৭ থেকে ৮ লিটার।
একই গ্রামের আছের আলী মাঠে ছেড়ে রেখে গাভী পালন করেন। ঠান্ডার কারণে তিনি গাভী বাইরে বের করতে পারছেন না। এতে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।
তিনি বলেন, আমার পাঁচটি গরু, তার মধ্যে দুটি গাভী। একটি গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে বাইরে বের করতে পারছি না, কেনা খাবার খাওয়াতে হচ্ছে। আরও কিছুদিন আবহাওয়া এ রকম থাকলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
এনায়েতপুর পুরানবাজার এলাকার গো খামারি আলী আজম শিবলী বলেন, আমার খামারে ১৭টি গাভী রয়েছে। শীতের কারণে গড়ে প্রতিদিন ৩০ লিটার দুধ উৎপাদন কমে গেছে। নির্ভর করতে হচ্ছে দানাদার খাদ্যের ওপর। খাদ্যের দাম অনুযায়ী দুধের দাম কম থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে গাভী বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট গরু রয়েছে আট লাখ ৮৮ হাজার। এর মধ্যে
দুগ্ধ খামার রয়েছে ১৩ হাজার ৪৮০টি। এগুলো থেকে প্রতি বছর ছয় দশমিক ৪৯ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাংগ কুমার তালুকদার বলেন, প্রচুর ঠান্ডা ও গরমে মূলত দুধ উৎপাদন কমে যায়। তবে ঠান্ডা বাড়লেও এখনো ক্ষুরা রোগের বিস্তার ঘটেনি। শীতজনিত জ্বর-সর্দি হচ্ছে, চিকিৎসায় ভালোও হচ্ছে। এ শীতে গবাদি পশুর গায়ে চটের বস্তা জড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সবাইকে।