শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনা অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা ৫০০ শয্যার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (খুমেক)। খুলনাসহ ১২/১৩টি জেলার রোগীরা সেবা নেন এ হাসপাতালে। কিন্তু এখানে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের। চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সংকটের কারণে ভোগান্তি তো রয়েছেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তীব্র শীত।
তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে খোলা বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। চেষ্টা করেও মিলছে না শয্যা। এতে করে আরও বেশি কাহিল হয়ে পড়ছেন রোগীরা। দিনে একটু উষ্ণতা পেলেও রাতে শীতে জুবুথবু হয়ে পড়ছেন তারা।
সন্ধ্যায় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, ৭-৮ নম্বর ওয়ার্ডের যতগুলো বারান্দা রয়েছে সব বারান্দাজুড়ে রয়েছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষ একটু উষ্ণতার জন্য পাটি, কাঁথাসহ যা পারছেন তাই বিছিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। শুধু দ্বিতীয় তলায় নয়, গোটা হাসপাতালের বারান্দা-জানালার পাশে রোগী ও তার স্বজনরা এভাবেই অবস্থান নিয়ে সেবা নিচ্ছেন। শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে কাপড় অথবা পলিথিন ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
হাসপাতালের বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া সুভাষ গোলদার বলেন, কয়েকদিন ধরেই এ ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বেডের কথা বললেই নার্সরা বলে, খালি হলেই উঠিয়ে দেবো। কিন্তু খালি আর হয় না, বেডেও আর যেতে পারি না। চিকিৎসকরা এখানে এসেই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন শীত খুব বেড়েছে। শীতে রাতে খুব কষ্ট পাচ্ছি। ২-৩ দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে চলে যাবো।
শুধু সুভাষ গোলদার নয়, বারান্দায় যত রোগী আছে তাদের সবারই প্রায় একই অবস্থা।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি মাল্টিপারপাস ও মাল্টিসেক্টরাল হাসপাতাল। আশপাশের ১৩টি জেলার রোগী এখানে আসে। যার কারণে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও ১৫০০ ঊর্ধ্বে রোগী থাকছে। অর্থাৎ ৩০০ শতাংশের বেশি রোগীর সেবা দিচ্ছি। আমাদের সব রোগীকে বেডে সংকুলান করতে পারি না, যার কারণে কিছু রোগী সবসময় ফ্লোরে থাকছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বেডের অভাবে রোগী ফ্লোরে রাখছি। কিন্তু আমরা কাউকেই চিকিৎসা বঞ্চিত করছি না।
নানা সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাসপাতাল। এখানে চিকিৎসকের ২৮৮ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২০৭ জন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসা দিতে আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। জনবল কম ও অবকাঠামো সমস্যা। রোগীরা বারান্দায়-মেঝেতে শুয়ে আছে। এটাতো আমাদের কাছেও ভালো লাগে না। সেজন্য আমরাও খুব কষ্টের মধ্যেই আছি। ডাক্তার ও স্টাফরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন সবসময় স্বাস্থ্যসেবা দিতে।
রবিউল হাসান আরও বলেন, হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার, কিন্তু গরমের সময় দেড় হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এখন একটু কম হলেও প্রতিদিন ভর্তি থাকছেন এক হাজারের বেশি রোগী। এক হাজার রোগী থাকলে তার সঙ্গে আরও থাকছেন ২/১ জন। সবমিলিয়ে হাজার তিনেক লোক থাকে প্রতিদিন হাসপাতালে। বিপুল রোগী রাখার জায়গা দিতে পারি না, তার উপর তাদের সঙ্গে থাকা লোকজন নিয়ে বিপাকেই রয়েছি। এখন এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা দুই হাজার না করলেই নয়।
তবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখানে আরও ১০৬০ টি শয্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থাৎ ১৫০০ এর বেশি শয্যা হবে। আমাদের ৪৬০ বেডের একটি ক্যান্সার হাসপাতাল চালু হচ্ছে। আবার ১০০ বেডের একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালু হচ্ছে। তখন আমরা আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবো। একইসঙ্গে সেবার মান বাড়বে।
এব্যাপারে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ১৯৮৯ সালে হাসপাতালটি স্থাপনের পর থেকে নানা সংকটে জর্জরিত। প্রথমে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা থাকলেও খুলনাবাসীর আন্দোলনের ফলে তা ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ধীরে ধীরে হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ক্ষেত্রে আস্তা অর্জন করায় রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এখন এর শয্যা সংখ্যা দুই হাজার করলে রোগীদের শয্যা সংকট লাঘব হবে।