মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:২৯ অপরাহ্ন

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দিনে অভিযান ২৮২, তবু কমছে না মাদক কারবার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে কোনোভাবেই কমছে না মাদক কারবার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিদিন সারাদেশে পরিচালনা করছে গড়ে প্রায় তিনশ অভিযান। এসব অভিযানে মাদকদ্রব্য জব্দের পাশাপাশি হচ্ছে মামলা-গ্রেফতার। তিন দশকের বেশি সময় ধরে সংস্থাটি নানামুখী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। রয়েছে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। বর্তমানে দেশজুড়ে তিন হাজার ৫৯ জন লোকবল নিয়ে কাজ করছে অধিদপ্তরটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সচেতনামূলক কর্মসূচি জরুরি। একই সঙ্গে অভিযান আরও বাড়াতে হবে। দূর করতে হবে সহজলভ্যতা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে ৬৫ হাজার ৭১৯টি অভিযান চালিয়েও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব অভিযান ও বছরব্যাপী অধিদপ্তরের নানান কার্যক্রমের ফলে মাদক কারবার কমার কথা থাকলেও দিন দিন বাড়ছে মামলা, আসামি ও মাদক জব্দের পরিমাণ।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে ৪৭ হাজার ৪০৭টি অভিযান চালিয়ে ১৩ হাজার ৭৯৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৫ হাজার ১১৬ জনকে। ২০১৯ সালে ৬৩ হাজার ৫৫টি অভিযানে ১৭ হাজার ৩০৫টি মামলায় আসামি ১৮ হাজার ৩৪৬ জন। ২০২০ ও ২০২১ সালেও ছিল প্রায় একই চিত্র। ২০২০ সালে ৬৫ হাজার ১৩৯টি অভিযানে ১৭ হাজার ৩০৪টি মামলায় আসামি ১৮ হাজার ৩২১ জন, ২০২১ সালে ৮৪ হাজার ৫৬২টি অভিযানে ২০ হাজার ৫৯২টি মামলায় আসামি ২১ হাজার ৯৯২ জন। আর ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৯৪ হাজার ৫৬৭টি অভিযান চালিয়ে ২৩ হাজার ২৭০টি মামলায় আসামি করা হয় ২৫ হাজার ৩০০ জনকে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে অভিযান চালানো হয়েছে ২৮২টি।

অভিযানে প্রতি বছরই জব্দ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। ২০২০ সালে জব্দ করা হয় ২০ লাখ পিস ইয়াবা। ২০২১ সালে সাড়ে ৩৪ লাখ ও ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জব্দ হয়েছে সাড়ে ৪৫ লাখ পিস। ২০২০ সালে গাঁজা জব্দ করা হয় ২ হাজার ৭৪২ কেজি। ২০২১ সালে ৪ হাজার ৪১৭ কেজি ও ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জব্দ করা হয় ৮ হাজার ৮৪৬ কেজি গাঁজা।

নতুন বছরে নতুন কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও গত বছর নানামুখী কাজ করেছে অধিদপ্তর। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ২৯ হাজার ৯৭১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মামলা করা হয়েছে ১৩ হাজার ৬০৮টি। এতে সাজা দিয়েছে ১৩ হাজার ৬৪৯ জনের। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪০টি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও অনুদানের জন্য বরাদ্দ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া মাদকবিরোধী পোস্টার, লিফলেট তৈরি, বিতরণ, সভা-সমাবেশ, সেমিনার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী শ্রেণি বক্তৃতাসহ নানান ধরনের সচেতনতার কাজ করা হয়। গত বছর সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজও শুরু করেছে অধিদপ্তর। এসবের পরও কমছে না মাদক কারবার।

দেশজুড়ে মাদক কারবার কমিয়ে আনার বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম  বলেন, সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে মাদক কারবার অনেকটা কমে যাবে। মাদক সরবরাহ কমানো, ক্ষতি হ্রাস ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কাজ করি, এখানেও সেগুলো রয়েছে। চাহিদা কমিয়ে আনা ও ক্ষতির দিক তুলে ধরাই মূলত এখন আমাদের কাজ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক তানভীর মমতাজ  বলেন, আমাদের সবগুলো কাজই পরিকল্পনার অংশ। ৬৪টি জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় আমাদের ইউনিট রয়েছে। প্রতিদিন ১০টি করে অভিযান চালালেও আরও বেশি অভিযান হওয়ার কথা। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায়ই দিনে ৩০ থেকে ৫০টি অভিযান করতে হয়। মাসে গড়ে মামলাই হয় ৫শর বেশি। অভিযানগুলো চালানো হয় শুধু মাদক ধরা নয়, প্রতিরোধের জন্য। মাদকের বিস্তার না কমার পেছনে কারণ হলো প্রচুর মাদক দেশে আসছে। এর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশও জড়িত। আমদানি দ্রব্য, খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে নানাভাবে মাদক দেশে আসছে।

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জিনাত হুদা  বলেন, মাদক শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই সমস্যা। আমাদের দেশে মাদকগুলো খুব সহজলভ্য হয়ে গেছে। ফলে অলিগলিতেও ছড়িয়ে গেছে। এটা যেমন ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করা হয়, আবার অপব্যবহারও করা হয়। মাদক নিলে অনেক কিছু থেকে নিরাময় হয়- এই ধারণার কারণেও অনেকে মাদক গ্রহণ করে। তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সহজলভ্যতা দূর করতে হবে বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে কোনো ধরনের মাদক বেচাকেনায় বিধি-বিধান থাকা দরকার। আর পরিবার, স্কুল থেকে শুরু করে সব জায়গায় একটি সচেতনতা তৈরি করতে হবে। শাস্তির বিধান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংশোধনের ব্যবস্থাও করতে হবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335