শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন

ভাবমূর্তি রক্ষায় বেবিচকের পাওনা ৩৪৪৯ কোটি টাকা মওকুফ চায় বিমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: গেলো কয়েক বছর ধরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক অবস্থায় আছেএমনটাই দাবি করে আসছিল সংস্থাটি। কিন্তু এখন জানা গেলোবিমানের কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পাওনা প্রায় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বকেয়া আরোপিত সারচার্জ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। সারচার্জ মওকুফের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এরপর সারচার্জ মওকুফের জন্য অনুরোধ জানিয়ে বেবিচককে চিঠি দিয়েছে পর্যটন মন্ত্রণালয়

তবে, বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানের সারচার্জ মওকুফের এখতিয়ার তাদের হাতে নেই। এটি অর্থ মন্ত্রণালয় করতে পারে। অথচ নিয়ম না বুঝেই বেবিচককে দেনা মওকুফের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে পর্যটন মন্ত্রণালয়

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিইও মো. যাহিদ হোসেন সারচার্জ মওকুফের জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠান। সে চিঠিতে এমডি বেবিচকের পাওনা বকেয়ার ওপর সারচার্জ মওকুফ করার আবেদন জানান। চিঠিতে বলা হয়দেশের জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে ব্যবসা পরিচালনা করে বিমান। অবস্থায় সারচার্জ মওকুফ করে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে বিমানকে আর্থিক কার্যক্রমে আরও গতি আনতে সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণকোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তির পর জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বগতি, অসম প্রতিযোগিতা, উড়োজাহাজের স্বল্পতা, পুরোনো উড়োজাহাজ বহর থেকে সরানো ইত্যাদি কারণে আগের বকেয়া অর্থ বেবিচককে পরিশোধ করা বিমানের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বেবিচকের কাছে বিমানের দেনার পরিমাণ হাজার ৭৪৪ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে মূল বিল ৯৫৩ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা, ভ্যাট ট্যাক্স ৩৪২ দশমিক ১৭ কোটি টাকা এবং সারচার্জের পরিমাণ হাজার ৪৪৯ দশমিক ১৪ কোটি টাকা

চিঠিতে বলা হয়েছে২০১৬ সাল থেকে বেবিচকের সবধরনের ল্যান্ডিং, পার্কিং, রুট নেভিগেশন বিল নিয়মিত পরিশোধ করছে বিমান। এছাড়া যাত্রীদের টিকিটের সঙ্গে সংগৃহীত আন্তর্জাতিক অভ্যন্তরীণ অ্যাম্বারকেশন ফি, বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি এবং যাত্রী নিরাপত্তা ফি নিয়মিতভাবে বেবিচককে পরিশোধ করছে। এর আগে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন সিভিল এভিয়েশনের দেনাপাওনার হিসাব করা হয়। ওই সময় বেবিচক আরোপিত সারচার্জ এক হাজার ২১৬ দশমিক কোটি টাকা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মওকুফ করা হয়। মূল বিল বাবদ পাওনা ৫৭৩ কোটি টাকা সরকারের ইকুইটিতে স্থানান্তর করে বেবিচকের পাওনা সমন্বয় করা হয়

চিঠিতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও জানানবেবিচককে চলতি বিলসহ অন্যান্য দেনা নিয়মিতভাবে পরিশোধ করে যাচ্ছে বিমান। অবস্থায় বেবিচকের দাবি করা পুঞ্জিভূত বকেয়ার ওপর সারচার্জ (প্রতি মাসে শতাংশ হারে) মওকুফ করে, করোনাজনিত ক্ষতি কাটিয়ে জাতীয় পতাকাবাহী বিমানকে আর্থিক কার্যক্রমে আরও গতিশীল করতে সহযোগিতা প্রয়োজন। এতে সংবাদ মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দেনার ওপর নেতিবাচক মন্তব্য বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিমানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে

এমন চিঠির পর গত ১৩ অক্টোবর রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ বিমানের সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিমানের সিইও যাহিদ হোসেন। ওই দিন তিনি কাগজেকলমে অপারেটিং মুনাফা দেখিয়ে নিজেদের লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করেন। যাহিদ হোসেন বলেছিলেন, বিগত তিন মাসে বিমানের রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব বেড়েছে। তিন মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা

অথচ এর সাতদিন পর গত ২০ অক্টোবর পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে বিমানের সারচার্জ মওকুফ বিষয়ে একটি চিঠি জারি হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের সই করা ওই চিঠিতে সারচার্জ মওকুফের অনুরোধ করা হয়

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের অর্থ পরিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেনগত এক যুগের বেশি সময় ধরে যারাই বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিইও এর দায়িত্ব নিয়েছেন, তারা সবাই বিমানের রাজস্ব আয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বকেয়া দেওয়ার বিষয়ে তাদের কারো আগ্রহ ছিল না। ফলে বছর বছর ধরে সারচার্জ বেড়েই চলছে। এখন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. যাহিদ হোসেন সারচার্জ মওকুফে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। মন্ত্রণালয়ও না বুঝে বেবিচককে সারচার্জ মওকুফ করতে নির্দেশনা দিয়েছে

সারচার্জ মওকুফের বিষয়ে জানতে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কলে দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে সারচার্জ মওকুফের বিষয়টি জানতে লিখিত প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। পরে বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সোহেল কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, বেবিচক চেয়ারম্যান দেশের বাইরে আছেন। আর সারচার্জ মওকুফের বিষয়ে তার কিছু জানা নেই

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিমানের কাছে মূল যে বকেয়া আছে, সেটিতো তারা দিচ্ছে না। এখন সারচার্জ মওকুফে তারা যে আবেদন করেছে, সেখানে মূল পাওনা টাকা বিমান কবে দেবে সেই বিষয়ে কিছু বলা নেই। যদিও টাকা মওকুফের এখতিয়ার বেবিচকের নেই। এসব বিষয় সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় দেখভাল করে

তিনি বলেন, প্রতিমাসে বিমানের কাছে বেবিচকের বিল থাকে গড়ে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা। কোনো মাসে চার কোটি, কোনো মাসে কোটি টাকা বিমান দিচ্ছে। প্রতি মাসে যদি বিমান ৫০ কোটি টাকা করে পরিশোধ করতো, তাহলে বকেয়া অনেকটাই কমে আসতো

জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাহিদ হোসেন বলেন, তারা সারচার্জ মওকুফে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। এখন মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335