সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন

কারা হচ্ছে বিরোধী দল

বিএনপিবিহীন আজকের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় অনেকটাই নিশ্চিত। তবে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল কারা হবে। বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া ২৬ আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৩ আসনে চ্যালেঞ্জে ফেলেছেন লাঙলকে। শুধু লাঙলের বিপদ নয়, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসনে নৌকা ডোবাতে পারেন এমন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ভীতি ছড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলে। ফলে আগামী সংসদে সংখ্যায় জাতীয় পার্টিকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন স্বতন্ত্র এমপিরা। অন্তত ১০০ আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতা এবং স্থানীয় সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, কমবেশি ৪০ আসনে জয়ী হতে পারেন তারা। এতে গত দুবারের মতো আগামী সংসদে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হওয়া অনেকটা অনিশ্চিত। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সংখ্যা যদি তুলনামূলক বেশি হয়, তাহলে তারাও জোট করে হতে পারেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল। তাদের মধ্যেই একজন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা। জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা যদি ১৫১-এর বেশি হয়ে যায়, তবে তারা জোট করে সরকারও গঠন করতে পারবেন। একইভাবে তারা বিরোধী দলের আসনেও বসতে পারবেন। এতে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ীরা সরকার গঠন করবেন। আর বাকি যারা থাকবেন তারাই বিরোধী দল হবে। তিনি বলেন, এবার যেহেতু স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক বেশি বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে যদি ফলাফলও এমনই হয়, তাহলে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাই প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবেন। এজন্য নিজেদের জোটবদ্ধ হয়ে স্পিকার বরাবর চিঠি দিতে হবে এবং দলনেতা ঠিক করতে হবে। প্রতীক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৬৪ আসনে নৌকা প্রতীকে ভোট করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নৌকাবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৭৭ আসনে ‘ঈগল’ ও ‘ট্রাক’ প্রতীক পেয়েছেন। ট্রাক পাওয়া ৭৩ প্রার্থীর ৫৪ জন নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত। ঈগল পাওয়া ১০৪ প্রার্থীর ৬৮ জনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হয়েছেন। ফলে ‘ঈগল’ এবং ‘ট্রাক’ আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রতীক’ হয়ে উঠেছে। বিধি অনুযায়ী, সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী বৃহত্তম দল বা অধিসংঘ হবে প্রধান বিরোধী দল। দশম সংসদে ১৬ এমপি এক হয়ে পৃথক সংসদীয় দল গঠন করেছিলেন। আগামী সংসদে স্বতন্ত্র এমপিরা যদি সংখ্যায় জাতীয় পার্টিকে ছাড়িয়ে যান এবং এক হয়ে সংসদীয় দল গঠন করেন, তবে বিরোধী দল হতে আইনে বাধা নেই। ১৪-দলীয় শরিকদের ছয়টি আসন ছেড়েছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনে নৌকা পেয়েও জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জেপির প্রার্থীরা স্বস্তিতে নেই। অন্তত চারটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। জাতীয় পার্টির মতো ১৪ দলের শরিকরাও ভোটের মাঠে দুর্বল হওয়ায় জয়ের নিশ্চয়তা নেই। পরাজয়ের শঙ্কায় বর্তমান এমপিসহ জাতীয় পার্টির কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতা ইতোমধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ফের বিরোধী দল হওয়া নিশ্চিত করতে ২৬ আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দেওয়ার শর্ত দিয়ে ভোটে আসে জাতীয় পার্টি। তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরাতে রাজি হয়নি আওয়ামী লীগ। জাপাকে ভোটে রাখতে ২৬ আসন ছাড়লেও শর্ত দেওয়া হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে জিততে হবে নিজের শক্তিতে। বিএনপিবিহীন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৪২ আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। এর ৩৩টিতে জয় পায় দলটি। এসব আসনে নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন না। বাকি নয় আসনের ছয়টিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে হেরে যান জাতীয় পর্টির প্রার্থীরা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলটিকে ২৬ আসন ছাড়ে আওয়ামী লীগ; এর ২১টিতে জয় পায় লাঙল। দুটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। দুটিতেই ভরাডুবি হয় লাঙলের। দশম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগকে হারায় জাতীয় পার্টি। উপনির্বাচনে দুটি আসনে নৌকাকে হারালেও জাতীয় নির্বাচনে এটাই আওয়ামী লীগকে হারানোর একমাত্র উদাহরণ। পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান বলেন, আগামী সংসদে বিরোধী দল হওয়া কঠিন। স্বতন্ত্রের কারণে তৃতীয় স্থানে নেমে যাবে জাতীয় পার্টি।

১১ আসনে জাতীয় পার্টিল পথ সহজ : নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের পর ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি হাফিজ উদ্দিন, রংপুর-৩ আসনে জি এম কাদের, কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-২ আসনের এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ আসনের এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদার, পটুয়াখালী-১ আসনে কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল-৩ আসনের এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মুজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি এ কে এম সেলিম ওসমান, চট্টগ্রাম-৫ আসনে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের জয়ের পথ অনেকটাই সহজ বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। ()

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335