শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন

টানটান উত্তেজনা কী হবে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক – সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণার বিএনপির মহাসমাবেশ আজ। অন্যদিকে রাজপথ দখলে রাখতে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন  আওয়ামী লীগ। এমনই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে চলছে টানটান উত্তেজনা। আছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। রাজনৈতিক মাঠে বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে জনমনে এখন অজানা আশঙ্কা। চলছে নানামুখী আলোচনা ও গুঞ্জন। নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামী সমাবেশের অনুমতি না পেলেও তারা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোও মাঠে থাকবে। তারা রাজধানীর ১২টি স্পটে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এমন টানটান উত্তেজনার মধ্যে সব মহলেই এখন প্রশ্ন- কী হবে আজ?

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। পদস্থ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন। মাঠপর্যায়ে নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। রাজধানী ঢাকায় আজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অর্ধলক্ষ সদস্য রয়েছেন প্রস্তুত। তারা বলছেন, জানমাল রক্ষায় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত। ইতোমধ্যে রাজধানীজুড়ে চলছে তল্লাশি, ধরপাকড়।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে। বিএনপি মহাসমাবেশ করবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। আওয়ামী লীগ করবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে।

 

গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। এদের দুরভিসন্ধি আছে। সাম্প্রদায়িক আরও দু-একটি শক্তিকে নিয়ে তারা অশুভ খেলার পরিকল্পনা নিচ্ছে। সার্বক্ষণিক সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। মিটিং শেষে চলে গেলেই হবে না। কাল (আজ) একটু দেখেশুনে যাবেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।’

অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে, শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের পতন ঘটাতে চাই। তবে ক্ষমতাসীন দল কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অর্ধলক্ষ সদস্য প্রস্তুত

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির ও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরে মাঠে অর্ধলক্ষাধিক র‌্যাব-পুলিশ। স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সদস্য। জল ও স্থল পথের নিরাপত্তা নি-িদ্র করতে মাঠে থাকবে র‌্যাব-পুলিশের ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, আকাশে উড়বে হেলিকপ্টার। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, স্থাপনা, প্রবেশদ্বারে ইতোমধ্যে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে দুই পক্ষের কর্মসূচি কেন্দ্র করে টানটান উত্তেজনার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে জনমনেও। তৈরি হয়েছে নানা ধরনের শঙ্কা-উৎকণ্ঠা। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নিজেদের মতো করে তকমা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ। এটা রীতিমতো হাস্যকর। অতীতের ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবরকে স্মরণ করার জন্যই বিএনপি সমাবেশ ডেকেছে।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এক দফা দাবি আদায়ে আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে দলটি। একই দিন আওয়ামী লীগও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে। এর বাইরে বিএনপির সমমনা দলগুলোও পৃথক সমাবেশ করবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। তবে এসব কর্মসূচি কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা এবং সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। সমাবেশস্থলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বসে পড়লে তাদের ওঠাতে যদি কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় তাও নেওয়া হবে। কোনো পক্ষ সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করলে তা মোকাবিলায় পুলিশ সর্বশক্তি নিয়োগ করবে বলে জানান তিনি।

ডিএমপিসূত্র বলেছেন, বিএনপি সমাবেশস্থলে বসে পড়লে কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে তার পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। গতকাল রাতেও ডিএমপি সদর দফতরে কমিশনার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিশেষ বৈঠক হয়েছে। ফোর্সের মনোবল ধরে রাখার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

সূত্র আরও বলছেন, পুলিশের রায়টকার, জলকামানসহ অন্যান্য নিরাপত্তাসামগ্রী পর্যাপ্ত মজুদ রাখতেও নানামুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ডিএমপির ৩২ হাজার ফোর্সকে যে কোনো মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডিএমপির ৩২ হাজারের বাইরেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্পেশাল ব্রাঞ্চের দেড় হাজার, এপিবিএনের প্রায় ৪ হাজার, র‌্যাবের দেড় হাজার, ট্যুরিস্ট পুলিশের ৫০০, নৌ-পুলিশের ৫০০, বিজিবি সদর দফতরের তিনটি ব্যাটালিয়নসহ সিআইডি, পিবিআইয়ের অর্ধলক্ষাধিক সদস্য নানাভাবে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় অংশ নেবেন। তবে রাজধানী ঢাকার পাশের জেলাগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব সংস্থার সদর দফতর থেকে বিশেষভাবে তদারকি করা হবে। ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ওইদিন বিপুলসংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে সমাবেশস্থল ও আশপাশ এলাকায়। যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা হলে তা কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে তার একটি গাইডলাইনও প্রস্তুত করেছে ডিএমপি। ওইদিন পুলিশের সোয়াত টিম ও বোম্ব ডিসপোজাল টিমকেও সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২৮ অক্টোবর দিনব্যাপী বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয় এবং মন্ত্রিপাড়ায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আকাশ থেকে হেলিকপ্টারে পুরো পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখবে র‌্যাব-পুলিশ। সমাবেশ কেন্দ্র করে ওইদিন এসব রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় যাতে কোনো পক্ষ নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে এজন্য বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকবে।

এদিকে গত রাত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টহল এবং চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব। সন্দেহ হলেই তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাদ যাচ্ছে না সন্দেহভাজন পথচারীরাও। অব্যাহত রয়েছে পুলিশের ধরপাকড় অভিযান। বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও তাদের সমমনা দলের কোনো নেতা-কর্মী যাতে ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোয় অবস্থান করতে না পারে এজন্য পুলিশ তল্লাশি করেছে। বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

আজকের সমাবেশ নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির মহাসমাবেশকে নানাভাবে রং দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ। যাতে হামলা করতে সুবিধা হয়। অথচ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের নেতা-কর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে সমাবেশে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই লগি-বৈঠার ন্যক্কারজনক ২৮ অক্টোবরকে স্মরণ করতেই আজ মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক কর্মসূচির সুযোগে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল নাশকতার চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে র‌্যাব। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে এদিন বিশেষ টহল কার্যক্রম চালানো হবে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোয় চেকপোস্ট জোরদার করা হবে। সমাবেশ কেন্দ্র করে এরই মধ্যে র‌্যাবের প্যাট্রলিং জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে সক্রিয় রয়েছেন র‌্যাবের গোয়েন্দারা। এর পরও যদি নাশকতার চেষ্টা হয় তাহলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নামবে র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স।

জানা গেছে, দেড় মাস আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ৩ হাজার ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যকে রিক্যুইজিশন দিয়েছে। সে অনুসারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনসার সদর দফতরকে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে। সে অনুসারে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে আনসার সদর দফতর।

আনসার বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ ইফতেহার আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের এরই মধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা মাঠে নামব।’ ()

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335