রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৬ অপরাহ্ন

১৮ অক্টোবর সরকার পতনে চূড়ান্ত ঘোষণা দেব : ফখরুল

জিটিবি অনলাইন ডেস্ক :-  বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপির কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ করে সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর আগে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।’ গতকাল রাতে রোডমার্চ শেষে চট্টগ্রামের জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেশব্যাপী বিএনপির যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন তার মধ্যে রয়েছে- ৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সারা দেশে মহানগর ও জেলায় মিছিল, ১২ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র সমাবেশ, ১৪ অক্টোবর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে মহানগর ও জেলায় জেলায় অনশন, ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুবসমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর ঢাকা সমাবেশ। তিনি বলেন, ‘রোড মার্চ শেষে আমরা চূড়ান্ত বার্তা দিতে এসেছি। অনেক রোডমার্চ ও সমাবেশ করেছি। আর কোনো রোডমার্চ করা হবে না। এবার রাজধানীতে সরকার পতনের ঘোষণা দেওয়া হবে।’ তিনি দাবি করে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তা না হলে জনতা ক্ষমতা দখল করবে।’

এর আগে দুপুর থেকে বিএনপির কাজীর দেউরীর নেভাল অ্যাভিনিউয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও জনসভায় যোগ দিতে হাজির হন কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বেলা ৩টার আগেই জনসমাবেশস্থল ভরে যায় কানায় কানায়। কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলা হয়ে রোডমার্চটি বিকাল নাগাদ সমাবেশস্থলে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু যানজটের কারণে রোডমার্চটি কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে সমাবেশস্থলে পৌঁছায়। সমাবেশস্থলে পৌঁছানোর পর বিএনপি নেতা-কর্মীরা করতালি ও স্লোগান দিয়ে রোডমার্চ বরণ করে নেন। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালা কচুয়া খন্দকার ফুট গ্যালারি মাঠে উদ্বোধনী সমাবেশের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাত্রা করে। রোডমার্চকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। রোডমার্চের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রামমুখী যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ঢাকামুখী যানগুলো ধীরে চলেছে। ফলে মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মীর নাছির উদ্দিন, উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, মাহবুবের রহমান শামীম, মৎস্যজীবী সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, সাবেক চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুন, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় সদস্য মীর হেলাল, উদয় কুসুম বড়য়া প্রমুখ।

 

এরও আগে বিভিন্ন পথসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘লাফিয়ে লাফিয়ে স্লোগান দিলে হবে না, রাজপথ দখলে রাখতে হবে। বন্ধুরা, বাবারা, ছোট ছোট ভাইয়েরা, আমাদের জেগে উঠতে হবে। রাজপথ দখল করে সরকার হটাতে হবে।’ তিনি সরকারপ্রধানের সমালোচনা করে রোডমার্চের উদ্বোধনী পর্বে বলেন, ‘হাসিনা আমেরিকা থেকে উইড়া আসছে খালি হাতে। তারা আবারও আগের রাতে ভোট করার পাঁয়তারা করেছে। তারা (আমেরিকা) কি সাড়া দিছে? দেয়নি। আজকে তারা ভয় দেখায়। ভয়ে কোনো কাজ হবে না।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ডিমের ডজন ১৫০ টাকা, বাচ্চাদের খাওয়াতে পারি না। আজকে লুটপাটের সরকার আমাদের বুকের ওপর বসে আছে। আজ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিচ্ছে না। তারা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে ফিরলেই তারা শেষ। তারা নাকি উন্নয়ন করছে! তারা রূপপুরে ইউরেনিয়াম নিয়ে আসছে। ইউরেনিয়ামের কারণে মাইলের পর মাইল ধ্বংস হয়ে যাবে। কোনো নিরাপত্তা বিধান না করে আজ দুর্নীতির কারণেই এমন প্রকল্প নিয়ে আসছে সরকার। তারা আমাদের কথা বলতে দেয় না, কথা বললেই মামলা।

তারা আন্দোলনে ২২ জনকে গুলি করে মেরেছে, ২৭ জন মানুষকে গুম করেছে, সহস্র মানুষকে হত্যা করেছে। আমাদের দাবি একটাই, আমরা ভোট দিতে চাই। শেখ হাসিনার অপর নাম কী? ভোট চোর। এই রোডমার্চের মাধ্যমে সরকারকে জানিয়ে দিচ্ছি, আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে। না হলে জনগণ জানে আপনাদের কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।’

সমাবেশে প্রধান বক্তা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের মানুষ একপক্ষে, হাসিনার রেজিম একপক্ষে। এদের শক্তি কিছু দুর্বৃত্ত, পুলিশ, আমলা রাজনীতিবিদ। আগামী কিছুদিন কঠিন সময় পার করতে হবে। রাস্তা ছাড়া যাবে না। আজ সব পক্ষ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শামিল হয়েছে।’

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মোস্তাক মিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

সমাবেশে বৃষ্টির বাগড়া : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার কালা কচুয়ায় বিএনপির কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চের প্রারম্ভিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ভোর থেকে নামে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। রোর্ডমার্চে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভিজে ভিজে যেতে হয়। সমাবেশের মাঠে কেউ ছাতা মাথায়, কাউকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা গেছে। মাঠের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। বৃষ্টির উসিলায় ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যায়। এতে নগরী থেকে বিচ্ছিন্নভাবে সমাবেশের উদ্দেশে যাত্রা করা নেতা-কর্মী ও সংবাদকর্মীদের পড়তে হয় বেকায়দায়।

মাঠে দুই পক্ষের হাতাহাতি : কুমিল্লার কালা কচুয়ায় বৃহস্পতিবার বিএনপির কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চের প্রারম্ভিক সমাবেশের মাঠে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা-৫ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দক্ষিণ জেলার সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন ও বুড়িচং উপজেলার বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমানের সমর্থকদের মাঝে এ হাতাহাতি হয়। এদিকে বিভিন্ন আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নামে স্লোগান দিতে থাকে তাদের সমর্থকরা।

মহাসড়কে ৫ ঘণ্টা যানজট : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার কালা কচুয়ায় বিএনপির কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চের প্রারম্ভিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে থেমে থেমে ৫ ঘণ্টা যানজট ছিল। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া যানজট বেলা ৩টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পদুয়ার বাজার থেকে যানজট নিমসার বাজার পেরিয়ে যায়। এ সময় মহাসড়কে রোডমার্চের গাড়ি, যাত্রী ও পণ্যের পরিবহন আটকা পড়ে। কম দূরত্বের যাত্রীদের হেঁটে পথ পাড়ি দিতে দেখা যায়।

নোয়াখালী থেকে শোডাউন : বিএনপির রোডমার্চ সফল করতে নোয়াখালী থেকে ফেনী-চট্টগ্রাম বিএনপি পদযাত্রা ও শোডাউন করে যাত্রা শুরু করে। দুপুরে হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তানভীর উদ্দিন রাজীবের নেতৃত্বে এক বিশাল গাড়িবহর নিয়ে জেলা শহর মাইজদী হয়ে ফেনী ও চট্টগ্রামের উদ্দেশ রওনা হয়।

১৫০ কিলোমিটারের এ রাডমার্চ ফেনী ও মিরসরাইয়ে দুটি পথসভা শেষে চট্টগ্রামে গিয়ে জনসভার মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ করে। কুমিল্লা থেকে আসা রোডমার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় ফেনীতে ও সাড়ে ১২টায় মিরসরাই সদরে পথসভায় যুক্ত হয়। প্রতিটি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335