শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২১ অপরাহ্ন

তরুণদের আত্মবিশ্বাস কাজী নজরুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: তরুণ কবি-সাহিত্যিকরা যেন হতাশায় নিমজ্জিত না হন। তারা যেন জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে সাহিত্যচর্চার মাঝে নিমগ্ন হন। আমাদের সামনে যে তরুণ সমাজ দেখছি, তারা অনেকেই নিজেদের লেখা নিয়ে হতাশ। আমরা যারা তরুণ, সাহিত্যচর্চায় সময় ব্যয় করছি! তাদের জন্য বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছেন─
‘আজ     সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে─
মোর      মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।
…             …             …                  …
আজকে আমার রুদ্র প্রাণের পল্বলে─
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার─ভাঙা কল্লোলে!

তারপরও আমরা কেন হতাশ হবো? অনেক তরুণ কবি-সাহিত্যিকের জীবনের উজ্জ্বলতা ও প্রাণৈশ্বর্য আজ তাদের মধ্য দেখতে পাই না। অথচ কবি-সাহিত্যিক মানুষের আনন্দলোকের, সৌন্দর্যলোকের বাণী বয়ে আনেন। এ সৌন্দর্যের, অমৃত পরিবেশনের ভার কবি-সাহিত্যিকদের হাতে। এ পথে কবি-সাহিত্যিকদের হয়তো দুঃখ-কষ্ট আছে অনেক। অতি নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে উপহাসের মর্মান্তিক আঘাত আসতে পারে। কিন্তু তরুণ কবি-সাহিত্যিকদের ভীতু হলে চলবে না। বেদনার রসকে উপলব্ধি করতে হবে নিবিড় সাহিত্যচর্চার মধ্যদিয়ে। বিদ্রোহী কবি জানতেন নিকটাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব তরুণ কবি-সাহিত্যিকদের তিরস্কার করবেন। তাই তো তিনি ‘দূরের বন্ধু’ কবিতায় লিখেছেন─
‘বন্ধু আমার! থেকে থেকে কোন সুদূরের বিজন পুরে
                     ডাক দিয়ে যাও ব্যথার সুরে?

বিদ্রোহী কবির ছাত্রদলের গান কবিতাটি আমরা অন্য ভাবেও ভাবতে পারি। আমরা যারা তরুণ কবি-সাহিত্যিক, তারা যেন সাহিত্যচর্চায় নিজেদের ছাত্র ভাবতে পারি। তাই তো তাদের জন্য চারটি লাইনই যথেষ্ট─
‘আমরা শক্তি আমরা বল
                   আমরা ছাত্রদল।
মোদের        পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান
            ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল
                     আমরা ছাত্রদল।।’

তরুণ কবি-সাহিত্যিকদের মনে রাখতে হবে, ফসল বুনে মানুষ মাঠের পর মাঠকে অরণ্য করে তোলে। কিন্তু ফুলের বাগান কতজন করতে পারেন? আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য এই যে, এ দেশের ধনী বা এক শ্রেণির শিক্ষিত সমাজের মধ্যে সাহিত্যের সৌন্দর্যপিপাসা কম। এ জন্য বহু দুঃখ-কষ্ট আমাদের দেশের সাহিত্যিকদের ভোগ করতে হয়। তবে এর জন্য বিচলিত হলে চলবে না।

সমালোচনা ও দুঃখের আঘাতকে আনন্দের আহ্বানের মতোই বরণ করে নিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের অগ্রজ কিংবদন্তি কবি-সাহিত্যিকরা একেক জন জন্ম নিয়েছেন এই দুঃখ-বেদনার আঘাত পেয়েই। একথা আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, সাহিত্যচর্চায় দুঃখ, সমালোচনা এবং বিপদকে ভয় না পেয়ে জীবনের তরঙ্গে তরঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত।

তরুণ কবি-সাহিত্যিকদের জন্য বিদ্রোহী কবি বলেছেন─
‘জয় নিপীড়িত প্রাণ!
   জয় নব অভিযান!
      জয় নব উত্থান!’
বিদ্রোহী কবি তরুণদের আত্মশক্তিতে সচেতন হতে বলেছেন─
‘তুমিই সর্বশক্তি লভিয়া পূর্ণ হইতে পারো,
‘‘আমি ছোট’’ এই ভাবে দিবানিশি তাই সব কাজে হার।’
বিদ্রোহী কবি তাঁর অন্য একটি কবিতায় তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছেন─
‘ভাঙো ভাঙো এই ক্ষুদ্র গণ্ডী,
এই অজ্ঞান ভোলা, তোমাতে জাগেন
যে মহামানব তাঁহারে জাগায় তোলো।’

তাই সব ভীরুতা, দুর্বলতা, কাপুরুষতা বিসর্জন দিয়ে জেগে উঠতে হবে লেখনী শক্তি নিয়ে। ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে নয়। ন্যায় অধিকারের দাবিতে লিখতে হবে তরুণ কবিকে। কারো কাছে মাথা নত করে নয়।

লেখক: কবি ও নজরুল সংগঠক।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335