রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

৯ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ ‘নির্বাচিত হয়ে কেউ কথা রাখেনি।

সাগর, রপুর জেলা প্রতিনিধি :ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এই সাঁকো ব্যবহার করছেন ৯ গ্রামের বাসিন্দা ভোট আইলে (আসলে) হামাক কয় (বলে) ব্রিজ হইবে। কিন্তুক কোনদিন হইবে তাক (কেউ) কয় না। ভোটের আগে পৌরসভার মেয়র, উপজেলার চেয়ারম্যান সাইব ও বাণিজ্যমন্ত্রীর লোকেরা পর্যন্ত ব্রিজ বানে দিবার ওয়াদা দিচে। কিন্তু আইজ পর্যন্ত হামরা ব্রিজ দেকনো না। হামার কষ্ট কায়ো বুঝিল না। ওই তকনে (এ জন্য) ভাঙা নড়বড়া বাঁশের সাঁকোয় হামার ভরসা।
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কৃষক আয়নাল হক। ষাটোর্ধ্ব বয়সী এই ব্যক্তি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার বাংলাবাজার গোল্ডেনের ঘাট এলাকার বাসিন্দা। সেখানে মরা তিস্তা নদীর উপর রয়েছে একটি পুরোনো বাঁশের সাঁকো। ওই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হন আয়নাল হকের মতো আশপাশের নয় গ্রামের মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সব জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার আগে মরা তিস্তা নদীর উপর একটি পাকা সেতু নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আর কেউ কথা রাখেনি। কারো প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি। ফলে শস্য ভান্ডারখ্যাত বাংলাবাজার গোল্ডেনের ঘাট এলাকায় কৃষি পণ্য পরিবহনে কৃষকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একইসঙ্গে ফসলের ন্যায় মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, হারাগাছে তিস্তা বিধৌত চরাঞ্চলের ৯ গ্রামের মানুষের দুঃখ মরা তিস্তার এ শাখা নদীটি। হারাগাছ পৌরসভাসহ ৪ ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে গিয়ে মিলিত হয়েছে মরা তিস্তা নদীটি। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর বাঁশের সাকোই এলাকাবাসীর ভরসা। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুক চিরে পায়ে হেঁটে চলাচল করে এলাকাবাসী। হারাগাছ পৌরসভার গোল্ডেনের ঘাটে একটি টেকসই স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
কথা হয় সাঁকো পারাপারের সাথে জড়িত আনোয়ারুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, গোল্ডেন নামে একজন নৌকা দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, তখন থেকে এর নাম হয় গোল্ডেনের ঘাট। পরবর্তীতে কমিশনার মানিক, সাবেদ আলী ও তাজুলসহ গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ২০১৩ সালে নৌকার পরিবর্তে ৩১০ হাত লম্বা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নদী পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়।স্থানীয় মোজাহার আলী জানান, মরা তিস্তা নদীর ওপারে ৫টি বাজার, ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২টি মাদ্রাসা রয়েছে। সেতু না থাকায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতে চরম বিপাকে পড়তে হয়।
শিক্ষক আইয়ুব আলী জানান, পাকা সেতু না থাকায় তারা ভারি যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে পারেন না। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া সাঈদা, লোকমান ও সবুজ জানিয়েছে, তাদের খুব কষ্ট হয়। শুকনো মৌসুমে ভয়ভীতি না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আমরা খুব ভয়ে ভয়ে সাঁকো পার হয়ে থাকি। সবাই বলে পাকা সেতু হবে কিন্তু হয় না। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। কৃষক শফিকুল ইসলাম জানায়, পাকা সেতু না থাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রয় করতে বহু দূর ঘুরে বাজারে নিতে হয়। এতে পরিবহণ খরচ বেশি হয়। যথাসময়ে হাটবাজারে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
স্থানীয় মজিবর রহমান জানান, পাকা সেতু না থাকায় রাজপুর ইউপির চিনাতুলি, প্রেমের বাজার, খুনিয়াগাছ ইউপির তালপট্রি, হরিণ চড়া, মিলন বাজার, টাংরীর বাজার, হারাগাছ পৌরসভার চরচতুরা, ধুমগাড়া, হারাগাছ ইউপির পল্লীমারী গ্রামের শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্থ লক্ষাধিক মানুষ পৌরসভা ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করে। এ গ্রামগুলোতে আলু, ভুট্টা, ধান, পাট, গম, মরিচ, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি উৎপাদন হয়। এসব কৃষি পণ্য হাট-বাজারে নিতে হলে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। অথচ গোল্ডেনের ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণ হলে অর্ধেক পথ কমে আসবে, সেই সাথে এলাকার কৃষকরা পাবে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্যে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির দাবি, স্থানীয় সংসদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ধুমগাড়ায় একটি সভায় গোল্ডেনের ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু আজও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নাই। বর্তমানে সাঁকোটির নড়বড়ে অবস্থা। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।
হারাগাছ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল কাদের রানা সরকার দৈনিক আমার সুন্দর দেশ পত্রিকার রংপুর জেলা প্রতিনিধিকে   বলেন, গোল্ডেনের ঘাটে একটি স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এটি ৮ নম্বর এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পারাপারের অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম। এনিয়ে আমি মেয়রের সঙ্গে কথাও বলেছি। আমাদের ইঞ্জিনিয়ার সরেজমিনে দেখে এসেছে। যতদূর জানি সেতু তৈরির একটা প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এখন অর্থ বরাদ্দ মিললে সেতুর কাজ শুরু হতে পারে।
আরেক কাউন্সিলর মাহাবুবুর রহমান বলেন, জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে এটা তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমরা গোল্ডেনের ঘাটে সেতু নির্মাণ করব ইনশাআল্লাহ। এখন শুধু অর্থ বরাদ্দের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি আগামী অর্থ বছরে বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা যাবে। এ ব্যাপারে হারাগাছ পৌরসভার মেয়র এরশাদুল হকের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335