মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন

আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মান নানা অনিয়মের অভিযোগ !

পীরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধি : রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মানে নানামুখী অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের নির্মান সামগ্রীর ব্যবহার, প্রাক্কলনে সীমাহীন ফাঁকি,উপকারভোগীদের ও কর্মসৃজন কর্মসুচির শ্রমিকদের কাছে মাটি ভরাট করে নেয়াসহ সব ধরনের সুযোগ নিয়ে বরাদ্দের বিপুল পরিমান অর্থ সাশ্রয় করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে মর্মে নির্ভরযোগ্য একাধিক সুত্র জানিয়েছে। ৫ সদস্যের প্রকল্প কমিটির অন্যান্য সদস্যরা কাজগুলোর মান যাচাইয়েরও সুযোগ পাননি। শুধুমাত্র বিলপত্রে এদের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। সুত্রগুলো দাবি করেছে,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় এককভাবে সবগুলো ঘর নির্মান করেছেন। ঘর নির্মান প্রকল্প কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি,প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সদস্য সচিব এবং সহকারী কমিশনার(ভুমি),উপজেলা প্রকৌশলী, ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানেক সদস্য করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির কোন সদস্যকে পাত্তা না দিয়ে ইউএনও এককভাবে নির্মাণ কাজগুলো সম্পন্ন করেছেন। অথচ ওই কমিটির সদস্য সচিব (পিআইও) কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি করার কথা।

নিজ বাড়ী এলাকা পঞ্চগড় থেকে লোবার মিস্ত্রী এনে নির্মানকাজ করে নিয়েছেন। ওই এলাকার ২ জন হেড মিস্ত্রীকে সাব ঠিকা দিয়ে কাজগুলো সম্পন্ন করেন তিনি। প্রকল্প এলাকায় ইটভাটা হতে বাধ্যতামুলক ১১ হাজার টাকা দামের ইট মাত্র ৭ হাজার টাকায়, করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের কাছে নজরানা হিসেবে ২/৩ ট্রাক করে বালু সরবরাহ নিয়ে এসব ঘর নির্মান করা হয়। যে কারনে ভাটা মালিকরা ২ নং ইট সরবরাহ দিয়ে গা বাঁচিয়েছেন। বালু উত্তোলনকারীরাও ভিট বালু সরবরাহ দিয়েছেন। ফলে স্বভাবিকভাবেই ঘর নির্মানে নিম্নমানের উপকরন ব্যাবহার হয়েছে। এছাড়া সাব ঠিকা গ্রহনকারীরা অধিক মুনাফারে লোভে সিমেন্টের পরিমান কম দিয়ে কাজ করেছে। এজন্য সবগুলো ঘর নির্মিত হয়েছে দায়সারা ধরনের। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,শানেরহাট ইউনিয়নের ডুবারপুকুর এবং চতরা ইউনিয়নের সিদ্দিক মেম্মারের ওয়ার্ডে নির্মিত ঘরগুলোতে পানি এখনই পড়ছে। এই দুই ইউনিয়নের দুটি স্থানে সলিং না করেই ঘরের মেঝে ঢালাই করা হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলোতে ফাটলও ধরেছে। এর আগে ঘরের ফাটলসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে স্থানীয় প্রশাসনে দৌড়ঝাপ শুরু হয়। তড়িঘড়ি করে ফাটলগুলো সিমেন্ট বালু দিয়ে বন্ধও করে দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণে বরাদ্দকৃত ২৯ কোটি ১৫ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা এককভাবে ব্যয় করেছন। অভিযোগে আরও জানা গেছে,পীরগঞ্জ উপজেলা পরিশোধ চত্বরে পরিষদের টাকায় এইচবিবি করন একটি রাস্তার ১৮ হাজার ইট সমুদয় তুলে নিয়ে মসজিদ সংলগ্ন স্তুপ করে রাখা হয়। পরে তা ভেঙ্গে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়। অথচ ইটগুলো নিলামে বিক্রির পর বিক্রিলব্ধ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমাদানের বিধান ছিল। এ ব্যাপারে সদস্য সচিব পিআইও মিজানুর রহমান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেন, আমি বরাদ্দের টাকা ছাড় করতে ইউএনও স্যারের নির্দেশে চেকে স্বাক্ষর করেছিমাত্র।
ঘরের দেয়াল ও পাকা মেঝে নিয়ে বড় আলমপুরের হরিন সিং পুকুরপাড়ে যে ১৫ টি ঘর নির্মান করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে স্থানীয় মুনছুর আলী, সুনীল, আবদুল সালাম, সতিশ, রামকুমার, সনেতা, জানান,এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘরের পাকা মেঝে উঠে গেছে। এছাড়াও দেয়ালের সিমেন্ট বালু এমনিতেই খুলে পড়ছে। জানালা দরজার হাতল এবং ছিটকিনি খুলে গেছে। বাশ দিয়ে দরজা আটকাতে হয়।তারা আরও বলেন, গরিব মানুষের কথা কে শোনে ? ঘরের কাজের বিষয়ে কাউকে কিছইু বলা যায়নি। তবে কাজগুলো স্থানীয় ঠিকাদারের মাধ্যমে করা হলে মান অনেকটাই ভালো হতো। কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাকে তো কাজের কথা বলাই যায় না। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় বলেন-প্রাক্কলনে যা আছে সেভাবেই কাজ করা হযেছে। এদিকে উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসীন্দা এবং স্থানীয় সচেতন মহল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো জরুরী ভিত্তিতে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335