বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন

বাড়ছে গরম, এবার পরিযায়ী বিদায়ের পালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: শীতের শেষ। চলছে ফাগুন। দিন দিন বাড়ছে গরম। হয়তো আর কটা দিন পরই তারা চলে যাবে নিজ গন্তব্যে। বিদায়ের আগে যেন ভালোবাসায় জড়াতে কাছে টানছে। দেখলে মনে হবে কোনো খামারের এক ঝাঁক পোষা হাঁস।

দিঘি জুড়ে তাদের বিচরণ। দুপুরে রোদ পোহানোর জন্য কাছাকাছি কচুরিপানার ওপর আয়েশে বসে আছে তারা। পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। ওড়াউড়ি করছে। এরা পোষা হাঁস নয়, এরা হলো পরিযায়ী পাখির দল। পুরো শীতকাল এখানেই তাদের বসবাস।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের দেওয়ান দিঘি তারাপাশা সড়কের পাশে করতল ও রামভদ্রপুর গ্রামের সন্ধিস্থলে অবস্থিত শের খাঁ দিঘি। বিগত আট বছর ধরে চলছে পরিযায়ী পাখির রাজত্ব। গ্রামে প্রবেশ করলেই শোনা যায় পাখির কিচিরমিচির কলরব।

স্থানীয়রা জানান, এ গ্রামের শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত কেউ পরিযায়ী পাখির ওপর একটা ঢিল ছুড়ে না। সবাই আগলে রাখে। পরিযায়ীরা এখানে নিরাপদ আশ্রয়ে আছে। কেউ তাদের বিরক্ত করে না বলেই বার বার এখানে চলে আসে তারা।

বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) দুপুরে দিঘির পাশে গেলে কানে ভেসে আসে পাখির কলরব আর কিচিরমিচির ডাক। চোখে পড়ে কয়েকশ পরিযায়ীর জলকেলির দৃশ্য। অনেকগুলো ভাসছে দিঘির জলে। আর কিছু পাখি একটু উষ্ণতার জন্য রোদ পোহাতে কচুরিপানার ওপর আয়েশে আছে। আবার আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে, নামছে।

দিঘির পূর্ব দক্ষিণ পাড়ে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা তাক করতেই কাছে এগিয়ে আসেন রামভদ্রপুর গ্রামের হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, শের খাঁর দিঘির চার দিকেই জনবসতি। গ্রামের সবাই পরিযায়ী পাখির প্রতি খুবই যত্নশীল। কেউ এদের বিরক্ত করে না। আমাদের সচেতনতা আর আন্তরিকতায় এখানে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়েছে।

করতল গ্রামের তুহিন বলেন, ইদানীং লক্ষ্য করছি পরিযায়ীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে দিঘি পাড়ের কাছাকাছি চলে আসে। আট বছর আগে পাখি আসা শুরু হয়। প্রথমে অল্প সংখ্যক আসছিল। এখন এর পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এখানে তারা দিনের বেলা আয়েশে আরামে অবস্থান করে। আবার কোনো কোনো সময় রাতে কিছু সংখ্যক খাবারের সন্ধানে বিল ঝিলে চলে যায়।

রামভদ্রপুর গ্রামের সাদিক আহমদ দিপু বলেন, অনেক দিন ধরে আমি এ পাখিগুলো দেখছি। পাখির ডাকাডাকি উড়াউড়ি আমার কাছে ভালো লাগে। পাখি নিধন নিষেধ আছে এখানে। প্রথম দিকে কারও কারও পরিযায়ী শিকার করার লোভ জেগেছিল। পরে গ্রামের সচেতন মহল নিষেধ করে। এরপর থেকে সবাই পাখির পাহারাদার হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, শের খাঁর দিঘি অনেক পুরোনো। বিরক্ত না করায় পাখির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মাঝে মধ্যে কচুরিপানার ওপর বাসা বুনে ডিম পেড়ে বাচ্চাও ফুটায়। কালবৈশাখী শুরু হলে তারা বিদায় নেবে। সরালি, বালি হাঁস ও পানকৌড়ি এ তিন জাতের পাখি এখানে আছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম  বলেন, আমরা শের খাঁর দিঘিতে গিয়েছি। ওখানে ২ হাজারের মত পরিযায়ী পাখি আছে। গ্রামবাসী পাখি সংরক্ষণে খুবই সচেতন। তারা পাখিদের বিরক্ত করে না। এজন্য পাখিগুলো খুবই কাছে চলে আসে।

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার  বলেন, মাঝে মধ্যে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলি, যাতে পরিযায়ী পাখির কোনো অসুবিধা না হয়। এদের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে আমাদের চেষ্টা আছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335