শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

লালমনিরহাটের অর্থনীতি বদলে দেবে মোগলহাট স্থলবন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক: ৩৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আর চালু হয়নি লালমনিরহাটের মোগলহাট স্থলবন্দর। ১৯৮৮ সালে বন্যায় এটি বন্ধ হয়ে গেলে ভারত-বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সুরাহা হয়নি। স্থলবন্দরটি আবার চালু হলে বদলে যাবে লালমনিরহাটের অর্থনীতি। কর্মসংস্থান হবে হাজার হাজার মানুষের।

লালমনিরহাট শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মোগলহাট। শহরের সঙ্গে মোগলহাটের সড়ক যোগাযোগ খুবই উন্নত। এক সময় ট্রেন যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এখন তা বন্ধ। মোগলহাট থেকে ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার গিতালদহের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। মোগলহাট-গিতালদহ রুটের মাঝখানে ধরলা নদী। নদীর ওপর প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুও রয়েছে।

এক সময় মোগলহাটে ছিল স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। মোগলহাট-গিতালদহ রুটে নিয়মিত পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো এবং পাসপোর্টধারী যাত্রীরা চলাচল করতেন। ১৯৮৮ সাল পযর্ন্ত স্থলবন্দরের কার্যক্রম ছিল। ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম ছিল ২০০২ সাল পযর্ন্ত। এখনও ১১৭ শতাংশ জমির ওপর স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্মিত স্থাপনা রয়েছে। মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ফের চালুর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার কারণে মোগলহাট-গিতালদহ রুটে ধরলা নদীর ওপর সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে এই রুটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে বন্ধ হয়ে যায় স্থলবন্দরের কার্যক্রম। তবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যক্রম ২০০২ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।

লালমনিরহাট জেলায় বুড়িমারী স্থলবন্দর থাকলেও সেটি শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। দূরত্বের কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।

২০১৬ সালের ১৫-১৭ জুলাই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভূটান চারদেশীয় ব্যবসায়ীদের সভা অনুষ্ঠিত হয় ভারতের কলকাতা ও শিলিগুড়িতে। এতে মোগলহাট-গিতালদহ রুটে স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। চার দেশের ব্যবসায়ীরা এই রুটটি পুনরায় চালুর গুরুত্ব তুলে ধরেন। এই রুটটি পুনরায় চালু হলে ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্য, নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাটে এক নির্বাচনী জনসভায় বলেছিলেন, বন্ধ থাকা মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটি পুনরায় চালু করা হবে। একই বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মোগলহাটকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে ভারত থেকে সব ধরনের মালামাল স্থল শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে আনা-নেওয়ার অনুমতিও দেয়। ২০১৭ সালের ২৪ মে সোনারগাঁ হোটেলে বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক বিজনেজ ফোরামের সভায় মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্যবসায়ীদের আলোচনা ও দাবির প্রেক্ষিতে মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর জন্য ২০১৭ সালের ৩ জুন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে পত্র দেন লালমনিরহাট-৩ আসনের এমপি জিএম কাদের।

এছাড়া চলতি মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পত্র দেয়।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ সাংবাদিকের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় জানান, মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুনরায় চালু করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ চলছে।
এ স্থলবন্দরে অনেক অবকাঠামো রয়েছে।

এ সময় তিনি বলেন, ধরলা নদীর ওপর ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি সংষ্কার অথবা নতুন করে নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। বন্দরটি চালু করতে আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।

মোগলহাটের স্থানীয় ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান প্রামানিক বলেন, এ বন্দরটি চালু হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাবো। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চালু হলে আমরা খুব সহজেই ভারতে যাতায়াত করতে পারবো।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন জাগো নিউজেকে বলেন, মোগলহাট স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু হলে ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের অর্থনীতি বদলে যাবে। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুরের মানুষের ভারতে যেতে সুবিধা হবে। পাশাপাশি মোগলহাট ও লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু হলে পাল্টে যাবে লালমনিরহাটের চিত্র।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি শেখ আব্দুল হামিদ বাবু জাগো নিউজে বলেন, মোগলহাট স্থলবন্দরটি চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে মাত্র। ব্রিটিশ আমল থেকেই মোগলহাট স্থলবন্দরটি চলমান থাকায় ভারতের কলকাতার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম ছিল। এটি বন্ধ থাকায় এখানকার লোকজন প্রায় চারশ কিলোমিটার ঘুরে কলকাতায় যাচ্ছেন।

মোগলহাট-গিতালদহ রুটটি ভারতের কোচবিহার, আসাম, নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে যোগাযোগের সহজ রুট। এই রুট পুনরায় চালু হলে খুব সহজে ও কম খরচে ভারত ও ভূটান থেকে পাথর, কয়লা, ডলোচুনসহ পণ্য আমদানি করা যাবে। এতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন ঠিক তেমনি সরকারও রাজস্ব পাবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে কয়েক হাজার মানুষের।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335