বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন

খরচ বাড়ায় হজের নিবন্ধনে ধীরগতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছর হজে যেতে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। তবে কোটার বিপরীতে খুবই কম সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন।

এবারই সর্বোচ্চ খরচে হজ পালন করতে হচ্ছে, বিমান ভাড়াও গত বছরের চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বেশি। তাই হজ এজেন্সি, হজযাত্রী সবাই একটু ধীরে এগোচ্ছেন। অনেকেই পরিস্থিতি আরেকটু দেখে তারপর হজে যাওয়ার চূড়ান্ত ধাপ নিবন্ধন করতে চাইছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

আমার এজেন্সি থেকে এবার ২০০ জনের মতো প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। এদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১০০ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বাকিরা বলছেন, আগামী বছর যদি কমে তবে আগামী বছরের জন্য চিন্তা করেন। আর তা না হলে আমাদের ওমরাহতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার বিমান ভাড়া আর কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। নিবন্ধন ধীরে হলেও হজযাত্রীর কোটা পূরণ হওয়ার নিয়ে কোনো সংশয় নেই বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও এজেন্সি মালিকরা। তারা বলছেন, যত মানুষ হজে যেতে পারবেন তার চেয়ে অনেক বেশি হজে গমনেচ্ছু মানুষ প্রাক-নিবন্ধিত রয়েছেন। প্রতিদিনই মানুষ প্রাক-নিবন্ধন করছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর মে মাসের মাঝামাঝি হজের নিবন্ধন শুরু হয়েছিল। হাতে সময় ছিল খুবই কম। এবার হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরো মার্চ মাস জুড়েই নিবন্ধন কার্যক্রম চলতে পারে। হয়তো শেষ সময়ে নিবন্ধনের চাপটা বেশি থাকবে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।

চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের নিয়ম রাখা হয়েছে। এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এরমধ্যে বিমান ভাড়াই এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা, যা গত বছর ছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা।

গত বছর সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ হয়। প্যাকেজ-১ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ-২ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা। বেসরকারিভাবে হজ পালনে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ টাকা।

খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রাক-নিবন্ধন করলেও অনেকে হজের নিবন্ধন করছেন না বলে জানিয়েছেন এজেন্সি মালিকরা। খরচ বেড়ে যাওয়াও নিবন্ধন ধীর গতিতে হওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন তারা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার তথ্য অনুযায়ী, মোট ২২ হাজার ৪৬৪ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে ৭ হাজার ৭৩ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ৩৯১ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এর বিপরীতে প্রাক-নিবন্ধিত রয়েছেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮ হাজার ৬৩৩ জন এবং বেসরকারিভাবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৭ জন।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে বলেন, হজযাত্রী নিবন্ধন নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রচুর হজযাত্রী রয়েছেন। তবে নিবন্ধন হচ্ছে ধীর গতিতে। কারণ এজেন্সি মালিকরা একটু অপেক্ষা করছেন, পরিস্থিতি দেখছেন। হজযাত্রীরাও একটু দেখছেন।

তিনি বলেন, মূলত এজেন্সি মালিকরা সৌদি প্রান্তে বাড়িভাড়াসহ সেখানকার সেবামূল্য নিয়ে দরকষাকষি করছেন। যদিও তারা হজযাত্রীদের কাছ থেকে পুরো অর্থই নেবেন, তারপরও আরেকটু বেশি লাভ করতে এ তৎপরতা তাদের। কোটা পূরণ হবে না, হজযাত্রীদের এমন সংকটের কথা কেউ বলছে না।

টাকা একটু বেশি, বিমান ভাড়া বেশি। অনেকে চাইলেও হয়তো যেতে পারবেন না। কিন্তু সেটি কোটা পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। তবে নিবন্ধনের সময় আরও কিছুটা বাড়াতে হবে।

‘নিবন্ধনের সময় আবার মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। এরপরও প্রয়োজন হলে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তা বাড়ানো হবে। কারণ আমাদের হাতে সময় আছে।’

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম  বলেন, ‘হজ নিবন্ধন শুরু হয়েছে। একটু ধীর গতিতে হচ্ছে। আমরা আশা করছি কোটা পূরণ হয়ে যাবে। হজ এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। তারা নিবন্ধন করছে, তবে স্লো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘টাকা একটু বেশি, বিমান ভাড়া বেশি। অনেকে চাইলেও হয়তো যেতে পারবেন না। কিন্তু সেটি কোটা পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। তবে নিবন্ধনের সময় আরও কিছুটা বাড়াতে হবে।’

হজযাত্রী নিবন্ধন নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রচুর হজযাত্রী রয়েছেন। তবে নিবন্ধন হচ্ছে ধীর গতিতে। কারণ এজেন্সি মালিকরা একটু অপেক্ষা করছেন, পরিস্থিতি দেখছেন। হজযাত্রীরাও একটু দেখছেন।

‘তবে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাতে চাই এবার আর বিমান ভাড়া কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের যা পদক্ষেপ তা আমরা আগেই নিয়েছি। কমানোর ক্ষেত্রে যা চেষ্টা করার আমরা করেছি’ বলেন অতিরিক্ত সচিব।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী  বলেন, ‘নিবন্ধনের প্রথম দিকে একটু ধীরগতি থাকে। হজযাত্রীরা টাকা দেয় দেরিতে, টাকা পেলেই এজেন্সি রেজিস্ট্রেশন করে।’

তিনি বলেন, ‘যে কোটা রয়েছে সেটি অবশ্যই পূরণ হবে। যারা প্রাক-নিবন্ধিত রয়েছেন তারা অনেকেই হজে যেতে পারবেন না।’

‘হজে মানুষের আগ্রহ না থাকলে এত মানুষ প্রাক-নিবন্ধন করতো, বলুন? যত মানুষ হজে যেতে পারবে তার চেয়ে দ্বিগুণ প্রাক-নিবন্ধিত মানুষ রয়েছে। নিবন্ধন চলছে কিন্তু এখনও মানুষ প্রতিদিন প্রাক-নিবন্ধন করছেন’ বলেন হাবের হাবের এ নেতা।

এবার হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া অতিরিক্ত ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘বিমান ভাড়া যে বেশি সেটি আমরা বলে আসছি। একইসঙ্গে এয়ারলাইন্স বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন লোকজনের সমন্বয়ে কমিটির মাধ্যমে বিমান ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি।’

আফতাব ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের মালিক মো. আফতাব উদ্দিন চৌধুরী  বলেন, ‘সরকার প্রাক-নিবন্ধিতদের একটি সিরিয়াল ঘোষণা করে নিবন্ধন করছে। এরমধ্যে হয়তো অনেকে নিবন্ধন করবেন না। নতুন করে হয়তো আবার সিরিয়াল ঘোষণা করবে, সময়ও বাড়ানো হবে। তাই কোটা পূরণ হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘বিমান ভাড়া বেশি হওয়ায় মানুষের মধ্যে আগ্রহ একটু কম আছে। এজেন্সিভেদে হজযাত্রীর চাপ কমবেশি আছে। আমরা হজযাত্রীদের নিবন্ধনের জন্য উৎসাহিত করছি।’

আফতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার এজেন্সির ঠাঁকুরগাওয়ের প্রাক-নিবন্ধিত ১৯ জন হজযাত্রীর মধ্যে ১৭ জন যেতে পারবেন না। খরচটা তাদের জন্য বেশি হয়ে যাচ্ছে। ফেনীর চারজনের মধ্যে একজন যাবেন না।’

বিমান ভাড়া পর্যালোচনা ও সৌদি প্রান্তের খরচ কমানোর জন্য আটাবের (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ) পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ এজেন্সি মালিক বলেন, ‘২০১৯ সালে হজে সৌদি অংশে সর্বোচ্চ খরচ ছিল ৭০ হাজার টাকা। করোনা মহামারির পর গত বছর (২০২২) সেই খরচ বেড়ে হয়েছে প্রায় এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, পেসসি ও পানির বোতল ছাড়া বাড়তি কোনো সুবিধা পাইনি এই এক লাখ ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। আগে মিনার তাবুতে এগুলো দেওয়া হতো না। বাসও আগেরটাই। এক্ষেত্রে সরকার কাজ করতে পারে। খরচ কমাতে সৌদি সরকারের সঙ্গে আমাদের সরকার আলোচনা করতে পারে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আন্তরিক হবেন।’

‘হজের এখন অনেকটা সময় বাকি। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে’ বলেন আফতাব উদ্দিন।

চট্টগ্রামের হজ এজেন্সি আল হারামাইন ট্রাভেলসের মালিক মো. মুসা  বলেন, ‘এবার হজের খরচটা অনেক বেশি। এ খরচ প্রাক-নিবন্ধিত অনেকের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে, তাই তারা আর হজে যেতে পারছেন না।’

তিনি বলেন, ‘আমার এজেন্সি থেকে এবার ২০০ জনের মতো প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। এদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১০০ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বাকিরা বলছেন, আগামী বছর যদি কমে তবে আগামী বছরের জন্য চিন্তা করেন। আর তা না হলে আমাদের ওমরাহতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।’

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335