শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:১০ অপরাহ্ন

দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় জহুরা বেগম

নিজস্ব প্রতিবেদক: তিনি ছেলেকে নিয়ে কাঁচপুরের পাঁচপাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন জহুরা বেগম। কিন্তু এক ঘটনাতেই নিমেষেই শেষ হয়ে গেলো গোটা পরিবার। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই ছেলে খুন হন। আর মেজ ছেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এখন দুই সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় ষাটোর্ধ্ব জহুরা বেগম।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর পাঁচপাড়া এলাকায় নিহতদের বাড়িতে গিয়ে শোকের মাতম দেখা যায়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে এলাকা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জহুরা বেগম বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেলো, আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো? আমার নাতি-নাতনিরা কাকে বাবা বলে ডাকবে? ওদের এখন কে দেখবে? আল্লাহ কেন আমাকে এত বড় শাস্তি দিলো। সামান্য জমি নিয়ে ওরা আমার সন্তানকে এভাবে খুন করতে পারলো। আল্লাহ ওদের মাফ করবে না। আমি ওদের ফাঁসি চাই। আর কিছু চাই না আমি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহতদের বোন শামসুন্নাহার বলেন, ‘৫ মিনিটের মধ্যে ভাইগো কোপাইয়া নির্মমভাবে মাইরা ফেললো। মার্চের ২ তারিখ আমাগো হজে যাওয়ার কথা ছিল। রনিরও যাওয়ার কথা ছিল। এটা আল্লাহ আমাগো কোন হজে পাঠাইয়া দিলো।’

রোববার দুপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মো. আসলাম সানি (৪৮) ও শফিকুল ইসলাম রনি (৩৫) খুন হন। তাদের আরেক ভাই রফিকুল ইসলাম (৪০) আহত হন।

পাঁচপাড়া এলাকার ওই তিন ভাইয়ের সঙ্গে চাচা মো. মহিউদ্দিনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে সরকারি একটি সড়কের ড্রেন করা হচ্ছিল। ওই ড্রেনের জায়গা নিয়েই তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত মোস্তফা (৪০), মামুন হোসেন (৩৫), মফিজুল ইসলাম (২৫), মারুফসহ (১৮) পরিবারের সবাই পলাতক আছেন।

নিহতদের স্বজন আবু নাইম মিয়া জানান, পাঁচপাড়ার দুই নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সানাউল্লাহর ছেলে আসলাম সানী ওই এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসক আতাউর রহমানের কাছ থেকে ৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে। এ জমিসহ পার্শ্ববর্তী আরও একটি জমি দাবি করে তার চাচা মহিউদ্দিন, চাচাতো ভাই মোস্তফা, মামুন ও মারুফ। এ নিয়ে আসলাম সানী, শফিকুল ইসলাম রনি ও রফিকুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল।

নাইম মিয়া আরও জানান, তাদের জমির পাশ দিয়ে সরকারি অর্থায়নের ৩ লাখ ১১ হাজার ২৪১ টাকা ব্যয়ে এলজিএসপি -৩ এর আওতায় খাস পাড়া আলী হোসেনের বাড়ি থেকে হারুনের বাড়ি পর্যন্ত আরসিসি ও ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ ড্রেন মহিউদ্দিনের জায়গার ওপর দিয়ে যাচ্ছে এমন দাবি করেন তারা। এ নিয়ে চাচা মহিউদ্দিনের সঙ্গে আসলাম সানীর তর্ক বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে চাচাতো ভাই মোস্তফার নেতৃত্বে তারা আসলাম সানী ও শফিকুল ইসলাম রনি ও রফিকুল ইসলামকে এলোপাথারি কুপিয়ে আহত করেন।

সোনারগাঁ থানা পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান উল্লাহ  বলেন, মরদেহগুলো এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজে আছে। ময়নাতদন্তের পর তাদের নিজ বাড়িতে আনা হবে। এ ঘটনায় থানায় এখনো কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। ঘটনার পর থেকে জড়িতরা সবাই পলাতক আছেন। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন আছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335