শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন

পদ্মা সেতু সুদিন ফিরেছে শরীয়তপুরের পরিবহনখাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা সেতু চালুর আগে ফেরিতে করে নদী পারাপার হয়ে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় চলাচল করতো পরিবহনগুলো। তবে ফেরিতে যাতায়াতে বাড়তি সময়ের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়তে হতো যাত্রীদের। নানামুখী সমস্যায় একসময় ব্যবসায় টিকতে না পেরে ২০০৪ সালে ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকরা। মালামাল ও কৃষিপণ্য পরিবহনের গাড়িও চলত সীমিত।

গতবছর ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকে ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে ১৮ বছর পর ফের বাস চলাচল শুরু হয়। গত ছয় মাসে শরীয়তপুরের পরিবহনখাতের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন সাতটি বাস কোম্পানি। অনুমোদনের অপেক্ষায় আরও অন্তত দুটি কোম্পানি। এর ফলে, এ খাতে অন্তত দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানান এ খাতের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

শরীয়তপুরের বাস মালিকরা জানান, এ জেলা থেকে ঢাকার দূরত্ব ৭১ কিলোমিটার। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের মাঝে পদ্মা নদী। এছাড়া মেঘনা ও কীর্তিনাশা নদীর অববাহিকায় এ জেলার অবস্থান। নৌ-পথে এ জেলার মানুষ ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করতেন। গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরই মূলত শরীয়তপুরের পরিবহন ব্যবসা বদলাতে শুরু করে।

পদ্মা নদী বিধৌত শরীয়তপুরের প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ নৌ-পথে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করতেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া জাজিরা নৌ-পথের লঞ্চ ও ফেরি চলাচল। এসব যাত্রীরা এখন বাসে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করছেন।

শরীয়তপুর জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা শহর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান ও কমলাপুর পর্যন্ত সাতটি কোম্পানির প্রায় ২৫০টি বাস চলাচল করছে। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিট পর পর বাসে যাত্রী আনা-নেওয়া করা হয়। বাস মালিকরা এ খাতে অন্তত ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়া শরীয়তপুরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও পিকআপে পণ্য পরিবহন করছেন। অনেক ব্যবসায়ী এর মধ্যে নতুন ট্রাক ও পিকআপ কিনেছেন।

এদিকে, পরিবহন খাতে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন শরীয়তপুরের অন্য সেক্টরের ব্যবসায়ীরা। ঠিকাদার কোম্পানি ডোরা এন্টার প্রাইজের মালিক মাহমুদুল হাসান পাভেল নড়িয়া থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চলাচলের জন্য একটি বাস শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামে কোম্পানিতে দিয়েছেন। এই বাস থেকে তার প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। বাসটি পরিচালনা করার জন্য ড্রাইভারসহ তিনজন লোক নিয়োগ করেছেন তিনি।

পাভেল  বলেন, পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে আগেও যুক্ত ছিলাম। বিভিন্ন কারণে তখন লসে ছিলাম। পদ্মা সেতু চালুর পর শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে বাস চলাচল শুরু হওয়ার পর এ রুটে ভালো ব্যবসাও হচ্ছে। আবার নতুন মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে।

পুরান ঢাকার চকবাজার, মৌলভীবাজার, ছোটকাটরা, বড় কাটরা, সোয়ারীঘাটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মালামাল কিনে ব্যবসায়ীরা ট্রলার ও লঞ্চে করে শরীয়তপুরের নড়িয়া, ভোজেশ্বর, আংগারিয়া বন্দর, ডামুড্যাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন। ব্যবসায়ীরা এখন সেই মালামাল ট্রাক ও পিকআপে বহন করছেন। এতে সময় সাশ্রয়সহ ভোগান্তি কমেছে।

এ বিষয় নিয়ে শরীয়তপুর ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন হাওলাদার বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ট্রাকে পণ আনা-নেওয়া অনেক বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী নতুন ট্রাক ও পিকআপ কিনে ভাড়া দিচ্ছেন। লাভের নিশ্চয়তা পাওয়ায় পণ্য পরিবহনের সঙ্গে অনেক মানুষ যুক্ত হচ্ছেন। এতে করে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

শরীয়তপুর বাস ও মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা পরিবহনখাতে লোকসান গুনেছে। পদ্মা সেতু চালুর পর ব্যবসায়ীদের সে কষ্ট ও দুর্দশা ঘুচেছে। এখন পুরাতন ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অনেক নতুন বিনিয়োগকারী এ খাতে যুক্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে আমরাই সর্বোচ্চ টোল দিয়েছি।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান  বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। শরীয়তপুরের পরিবহন ব্যবসার ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। বৈধ ও সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা চালানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন পরিবহন ব্যবসায়ীদের পাশে আছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335