শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন

ন্যাশনাল ব্যাংক রাতে সাড়ে ২২ কোটি টাকা লেনদেন: গুলশান শাখা ম্যানেজারকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকে টাকা জমা ও উত্তোলন করা যায়। তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা থেকে রাত ৮টার পর এক গ্রাহককে নগদ ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় ওই শাখার ম্যানেজারকে আগামী ১২ মার্চ তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এমন অনিয়মের বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এছাড়া ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের জানানোর জন্য বলেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলী। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

এর আগে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন দুদক আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

গত ২৮ ডিসেম্বর বিকেলে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদে গ্রাহকের ঋণ নবায়ন হয়। এরপর ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত শাখায় পাঠানো হয়। এরপর রাত ৮টা ২৩ মিনিট থেকে ৯টা ৪ মিনিটের মধ্যে তোলা হয় টাকা। ভাগ্যবান যে গ্রাহক এই সুবিধা পেয়েছেন, সেই কোম্পানির নাম ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। এর যার কর্ণধার আলী হায়দার রতন।

জানা যায়, ২৮ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদের ৪৭৫তম সভায় ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ঋণ নবায়নের প্রস্তাব ওঠে। প্রস্তাবে বলা হয়, সীমাতিরিক্ত ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ঋণপত্র খোলা হয়েছে। অন্য ব্যাংকে এ গ্রাহকের ঋণখেলাপি অবস্থায় রয়েছে। ঋণ নবায়ন হলে গ্রাহক ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাবেন।

পর্ষদের আলোচ্যসূচি দেখেই ২৭ ডিসেম্বর ব্যাংকটিতে নিযুক্ত সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম আপত্তি জানিয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নাইমুজ্জামান ভূঁইয়াসহ ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ই-মেইলে ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ঋণ নবায়নের বিষয়ে আপত্তি জানান। এরপরও ঋণ অনুমোদন হয়। তবে সাইফুল ইসলামের আপত্তির বিষয়টি ব্যাংকটির কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়নি।

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান পারভিন হক সিকদারও ওইদিনের সভায় যোগ দেননি। অন্য পরিচালকদের উপস্থিতিতে ২৮ ডিসেম্বরের সভায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকটির পরিচালক রিক হক সিকদার। সভায় ব্যাংকটির কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয়কের আপত্তির কথা জানালেও ঋণ নবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে যায়।

সেদিনই গ্রাহক গুলশান করপোরেট শাখা থেকে ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা তুলে নেন। গ্রাহকের হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২৮ ডিসেম্বর চার দফায় পাঁচ কোটি টাকা করে ও এক দফায় দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা তোলা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘আপনাদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪৭৫তম সভা শেষে গ্রাহক ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ঋণ নবায়নসংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের চূড়ান্ত কার্যবিবরণী ব্যাংকের বোর্ড বিভাগ বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ই–মেইলের মাধ্যমে ব্যাংকের সিআরএম-১ বিভাগে প্রেরণ করে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, ‘সিআরএম-১ বিভাগ গ্রাহকের ঋণ নবায়নসংক্রান্ত অনুমোদনপত্র সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ই–মেইলের মাধ্যমে ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় প্রেরণ করে। গ্রাহকের ঋণ হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনসংক্রান্ত লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য হতে দেখা যায়, ২৮ ডিসেম্বর রাত ৮টা ২৩ মিনিট থেকে ৯টা ৪ মিনিটের মধ্যে পাঁচটি লেনদেনের মাধ্যমে ২২ কোটি ৬০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়।’

রাত ৮টার পরে নগদ লেনদেন সম্পন্ন করে ব্যাংকের কর্মকর্তারা গুরুতর অনিয়ম সংঘটন করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335