শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন

তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে কোন কোন দেশ

জিটিবি নিউজ টুয়েন্টিফোর : সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুর্কী সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর ইউরোপের অনেক দেশ তুরস্কে তাদের অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করেছে।

তুরস্কের কাছে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। তবে অতি সম্প্রতি তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করেছে।

তো এখন কোন কোন দেশ তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং এর ফলে তারা এখন কার কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারে?

কারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে?

ইউরোপের ন’টি দেশ তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। দেশগুলো হচ্ছে: চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইডেন এবং যুক্তরাজ্য। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কানাডাও।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখবে ব্রিটেন, কিন্তু অস্ত্র রপ্তানির জন্যে নতুন লাইসেন্স দেওয়া হবে না কারণ এসব অস্ত্র সিরিয়ায় তুর্কী সামরিক অভিযানে ব্যবহার করা হতে পারে।

জার্মানি ও স্পেন বলছে, তাদের নিষেধাজ্ঞা শুধু নতুন চুক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি অনুমোদন করেনি। তবে এই জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে নিজেদের দেশের কঠোর নীতি গ্রহণের পক্ষে একমত হয়েছেন।

“এই অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার তেমন বড় কোন প্রভাব পড়বে না, আঙ্কারার সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে,” বলেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ইওভন্নি-স্টেফানিয়া এফস্থাতিও।

“তবে সিরিয়ায় ব্যবহার করা হতে পারে এমন অস্ত্রের বাইরেও যদি নিষেধাজ্ঞাকে সম্প্রসারিত করা যায়, তাহলে সেটা তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে,” বলেন তিনি।

তুরস্কের কাছে কারা অস্ত্র সরবরাহ করে?

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তুরস্ক ছিল বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অস্ত্র আমদানীকারক দেশ। ঐতিহাসিকভাবে অস্ত্রের জন্যে তুরস্ক মূলত নির্ভর করতো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে তার নেটো মিত্রদের কাছে।

তুরস্কের কাছে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করতো যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটির কাছে যতো অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে তার ৬০% করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আর ইউরোপের যেসব দেশ তুরস্কের কাছে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করে সেগুলো হচ্ছে: ফ্রান্স, স্পেন এবং ব্রিটেন।

১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে তুরস্কে যখন সামরিক বাহিনীর ব্যাপক ক্ষমতা ছিল তখন দেশটির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির হার রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল।

এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধ বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, জাহাজসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি যা তুরস্কের সামরিক বাহিনী এখনও ব্যবহার করছে।

কিন্তু অস্ত্র কেনার জন্যে তুরস্ক সম্প্রতি ঝুঁকেছে রাশিয়ার দিকে। ইতোমধ্যে মস্কোর কাছ থেকে ২৫০ কোটি ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ও করেছে আঙ্কারা। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তুরস্কেরই নিজেদের জোট নেটো।

তারা বলছে, তুরস্ক যদি নেটোর শত্রু দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করে তাহলে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, কারণ নেটোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে তুরস্কের সামরিক বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের কাছে তাদের অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান এফ-৩৫ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।

তুরস্কের ভৌগলিক অবস্থা এমন যে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটোর কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করার রাডার ব্যবস্থাও।

এমনকি তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে নেটোর কমান্ড অপারেশনও পরিচালিত হচ্ছে। তুরস্কের আদানা শহরের কাছে একটি বিমান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি পরমাণু বোমাও মোতায়েন করা রয়েছে।

তুরস্কের নিজস্ব অস্ত্র

গত এক দশকে তুরস্ক দেশের ভেতরেও অস্ত্র শিল্প গড়ে তুলেছে। তাদের উদ্দেশ্য বিদেশি সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা কমানো।

তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু সম্প্রতি বলেছেন যে “তুরস্ক এখন তাদের সামরিক সরঞ্জামাদির ৭০% নিজেরাই তৈরি করে। একই সাথে তুরস্ক এখন প্রচুর অস্ত্র রপ্তানিও করে।”

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ইওভন্নি-স্টেফানিয়া এফস্থাতিও বলেছেন, “দেশটির সামরিক চাহিদা তারা নিজেরাই কতোটা মেটাতে পারছে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে পরিমাপ করা সহজ নয়।”

২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে তুরস্কের অস্ত্র রপ্তানি ১৭০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তুরস্ক ছিল রপ্তানিকারকদের তালিকার ১৪ নম্বরে।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুর্কমেনিস্তানের কাছেই তারা সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করে থাকে। বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335