শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন

রাতের সৌন্দর্যে মুগ্ধকর উজিরপুরের গুঠিয়া মসজিদ

জিটিবি নিউজ টুয়েন্টিফোর : সৌন্দর্য সবসময় মানুষকে কাছে টেনে নেয়। সামনাসামনি সৌন্দর্য উপভোগ করার ভিন্ন আনন্দ রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা আমাদের  দেশ। দেশের প্রতিটি জেলাতে দর্শনীয় অনেক কিছু আছে। কোথাও প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য মুগ্ধ করে আবার কোথাও মানুষের তৈরি জিনিস অবাক করে দেয় আমাদের।

তেমনই বরিশালকে আলোকিত করে রেখেছে গুঠিয়া মসজিদ। এটি উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়ার চাংগুরিয়া গ্রামে অবস্থিত। গুঠিয়া নামে পরিচিত হলেও এর প্রকৃত নাম বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স। এটি দেশের  দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ও বৃহৎ মসজিদ কমপ্লেক্স, যা বরিশাল নগর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে। শিল্পের ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে এই অনন্য সৌন্দর্যের স্থাপনা। যার ফলে প্রতিনিয়ত অসংখ্য দর্শনার্থী মসজিদটি এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন মানুষজন।

ঘুরতে গেলে বিকেলে যাওয়াই ভালো, কারণ দিনের বেলায় মসজিদ যতটা না তার নিজস্ব রূপ ফুটিয়ে তোলে, রাতের বেলা তার দ্বিগুণ সৌন্দর্য মেলে ধরে। রাতের মসজিদ সাজে বর্ণিল সাজে।

সন্ধ্যায় মসজিদের বাতি গুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই একটু একটু করে সৌন্দর্য বাড়তে থাকে। এই অপার সৌন্দর্য দেখে মনেই হবে না অজপাড়াগায়ে এত সৌন্দর্য লুকায়িত একটি মসজিদ রয়েছে এখানে। এখানে প্রবেশ করলে  মনে হবে যেন আপনি যেন মধ্যপ্রাচ্যের মসজিদে প্রবেশ করেছেন মনেই হবে নাহ যে আপনি অজপাড়াগাঁয়ে রয়েছেন।

এখানে ঘুরতে এসে শেফাউল করিম বলেন, ‘এত সুন্দর মসজিদ আর এত নীরব নির্জন স্থানে অবস্থিত, আমি তো কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম যে আমি মধ্যপ্রাচ্যের কোনও দেশে ছিলাম হয়তো। কারণ এই রকম মসজিদের দেখা মেলে মধ্যপ্রাচ্যেই।’

মসজিদের এলাকা জুড়ে  থাকা ফল ও ফুল গাছের বাগান মুসল্লিসহ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। নান্দনিক এ মসজিদটিকে ঘিরে প্রতিদিনই বরিশালসহ দেশ ও বিদেশের পর্যটকরা আসছেন গুঠিয়ায়।

তেমনই একজন বরিশালের ভাটিখানার বাসিন্দা মিঠুন বলেন, ‘ঘোরাঘুরি এবং ছবি তোলার জন্য জায়গাটি সুন্দর আমি এখানে অংসখ্য বার এসেছি।’

দিনে দিনে বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সে ভ্রমণ করা মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ-এর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন।  মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ২০০৬ সালে। শুরু থেকেই গুঠিয়ার নামেই ৮ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে। ১৪ একর জমির উপর স্থাপিত এই মসজিদটিতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নমানের কাঁচ, ফ্রেম, বোস স্পিকার।

এছাড়া মসজিদটির সীমানার মধ্যে ঈদগাহ্ ময়দান, দিঘি, এতিমখানা, ডাকবাংলো, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, লেক, পুকুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান রয়েছে। একটি হ্যালিপেডও রয়েছে। মসজিদের নকশায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মসজিদের নকশাকে অনুকরণ করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদের স্তম্ভটি বিশ্বের বিভিন্ন পবিত্র স্থানের মাটি ও জমজমের পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

যেসব স্থান থেকে মাটি সংগৃহীত হয়েছে সেগুলো হলো- কাবা শরীফ, আরাফাতের ময়দান, মুযদালিফাহ, ময়দানে মিনা, জাবালে নূর পাহাড়, জাবালে সূর পাহাড়, জাবালে রহমত পাহাড়, নবীজীর জন্মস্থান, মা হাওয়া’র কবরস্থান, মসজিদে রহমত, মসজিদ এ কু’বা, ওহুদের যুদ্ধের ময়দান, হযরত হামজা (রা.) এর মাজার, মসজিদে আল কিবলাতাইন, মসজিদে হযরত আবু বক্কর (রা.), জান্নাতুল বাকী, মসজিদে নববী, জুলহুলাইফা-মিকাত, বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর হাতের লেখা তাবিজ ও মাজারে পাওয়া দুটি পয়সা এবং হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) এর মাজারের মাটি।

মসজিদের দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য ঝাড়বাতি ছাড়াও রয়েছে বাহারি নকশার আলোকবাতির ব্যবস্থা। এছাড়া বাইরে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স ঘিরেও করা হয়েছে বাহারি আলোকসজ্জা, যা রাতের মসজিদের সৌন্দর্যকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য মসজিদের নিজস্ব দু’টি জেনারেটর রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335