শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন
জিটিবি নিউজ : শনিবার রাতে ঢাকার বারিধারার কসমোপলিটন ক্লাবের এই বৈঠকে রওশন এরশাদ সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফখরুল ইমাম, মুজিবুল হক চুন্নু, সেলিম ওসমান ও এস এম ফয়সাল চিশতী।
জি এম কাদেরের পক্ষের নেতাদের মধ্যে ছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।বৈঠকে শুরুতে ‘অনানুষ্ঠানিক’ বলে এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে ফখরুল ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, “সমঝোতার এই বৈঠক চলমান সঙ্কট নিরসনে ভূমিকা রাখবেবৈঠকে আলোচনার বিষয়ে ফয়সাল চিশতী জানিয়েছিলেন, এতে দলের চেয়ারম্যান, বিরোধী দলের নেতা ও রংপুরের প্রার্থীর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, রওশন বিরোধীদলের নেতা থাকছেন, দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন জিএম কাদের।রংপুর-৩ আসনে প্রার্থীর বিষয়ে জিএম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফিরোজ রশিদ।এই বৈঠকের আগে বাবলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরও একসঙ্গে বসছেন।
কাদের সমর্থক বাবলার কাছে একথা শোনার পর যোগাযোগ করা হলে রওশন সমর্থক ফয়সল চিশতী বলেন, “(রংপুর উপনির্বাচনে) সাদ এরশাদের মনোনয়ন, চেয়ারম্যান, সংসদের দলনেতা নিয়ে দুজন কথা বলবেন।”
তবে তারা কোথায় বসছেন কিংবা তারা একসঙ্গে বসেছেন কি না, সে বিষয়ে কোনো নেতাই মুখ খোলেননি।
জাতীয় পার্টির প্রেস বিভাগ জানিয়েছে, রোববার সকাল ১১টায় বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।
অন্যদিকে কসমোপলিটন ক্লাবে বৈঠকের পর চুন্নু জানান, সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে রোববার বেলা ১টায় জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদের কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা পার্লামেন্টারি কমিটিতে সব ডিসাইড করব। তারপর আপনাদের বলব।”
রওশনের ডাকা সংসদীয় দলের বৈঠকে জিএম কাদেরকেও ডাকা হয়েছে। বৈঠকের কার্যসূচিতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচনের বিষয়টি রয়েছে।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর এটাই দলটির সংসদীয় দলের প্রথম বৈঠক। দলটির সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন এরশাদ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ সংসদে বিরোধী দলের নেতাও ছিলেন।
রওশন ও জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব সামলে আসছিলেন এইচ এম এরশাদ; তার অনুপস্থিতিতে বিরোধ চরমে উঠেছে
এরশাদের স্ত্রী রওশন বিরোধীদলীয় উপনেতার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। এরশাদের ভাই জি এম কাদের ছিলেন কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে।
এরশাদের মৃত্যুর পর কাদের দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন, যদিও তাতে রওশনের আপত্তি ছিল।
রংপুর-০৩ আসনে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে তাদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।
রওশনের ছেলে সাদ এরশাদ বাবার আসনে প্রার্থী হতে চাইলেও রংপুরের নেতারা তার বিরোধিতায় নামেন।
এর মধ্যে কাদের তাকে বিরোধীদলীয় নেতা ঘোষণা করতে গত সপ্তাহে স্পিকারকে চিঠি দিলে পাল্টা চিঠিতে তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রওশন।
জি এম কাদের আবার নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষমতা তার বলে দাবি করেন। প্রার্থী মনোনয়নে রওশন আবার পাল্টা সংসদীয় বোর্ড গঠন করেন।
এরপর রওশনের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তার সমর্থকরা তাকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন।
দেবর-ভাবির পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে দলের শীর্ষনেতারা দুই ভাগ হয়ে যাওয়ায় কর্মীদের বিভ্রান্ত হয়ে পড়ার মধ্যে বারিধারার ক্লাবে সমঝোতা বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হল।
এদিকে রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কে হবেন, সেই সিদ্ধান্ত শনিবার হওয়ার কথা ছিল। শনিবার বিকালে মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচ প্রার্থীর সাক্ষাৎকারও নেন জি এম কাদের।
কিন্তু সমঝোতার বৈঠকের আগে তা ঘোষণা না করে জি এম কাদের বললেন, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে করবেন দলের প্রার্থী।
রওশনও ছেলে সাদ এরশাদকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা না দিয়ে ‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন।
কাউন্সিল নভেম্বরে?
চলতি বছর মে মাসে জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিলের মেয়াদ ফুরালেও নানা জটিলতায় কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়নি।
দলের চেয়ারম্যান কে হবেন, এরশাদের মতো নতুন চেয়ারম্যানের হাতে সব কিছু করার একক ক্ষমতা থাকবে কি না, চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়ামদের কর্মপরিধি- এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত আসবে এ কথা আগেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন জি এম কাদের।
জিএম কাদের
শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে জি এম কাদের জানান, আগামী ৩০ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। কাউন্সিলে দলের নেতা-কর্মীরাই জাতীয় পার্টির আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। নেতা-কর্মীদের সিদ্ধান্তই আমি মেনে নেব।”
এরশাদের ভাই বলেন, “পদ-পদবী বা ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের জন্য আমি রাজনীতি করি না। দেশ, দেশের মানুষ ও জাতীয় পার্টির জন্য আমাদের রাজনীতি। কোন লোভ-লালসার জন্য আমাদের রাজনীতি নয়।”
জাতীয় পার্টিতে ‘বিভেদের অবকাশ নেই’ দাবি করে কাদের বলেন, “বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই জাতীয় পার্টিতে। বিশৃঙ্খলার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে থাকবে না। সঠিক পথে ও সুশৃংখলভাবে জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এগিয়ে যাবে।”