শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন

ফুল প্রেমীদের জন্য অামাদের এবারের প্রতিবেদন শীতের চেনা-অচেনা শীতের ফুল

বাংলাদেশে ছয় ঋতুর মধ্যে শীতেই নানা বৈচিত্র্যের ফুল ফুটতে দেখা যায়। যদিও শীত ঋতুতে অনেক গাছের পাতা ঝরে যায়, প্রকৃতি হয়ে ওঠে রুক্ষ ও ধূসর। কিন্তু পাতাশূন্য গাছগুলোই কুয়াশায় ভিজে ফুল ফোটানোর আয়োজন করতে থাকে। শীতের রুক্ষ ও ধূসর প্রকৃতির ভেতর নানা রঙের বৈচিত্র্যময় এসব ফুল বাংলাদেশের প্রকৃতিতে আশ্চর্য সৌন্দর্য ছড়ায়।
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে চেনা-অচেনা বিচিত্র বৃক্ষ। ফুলের সংখ্যাও নিতান্তই কম নয়। তবে যেগুলো আমরা এখন দেশি ফুল বলে জানি, তাদের অনেকগুলো এদেশে এসেছে বিভিন্ন শাসকের আমলে। আবার অনেক ফুল সৌখিন পুষ্পপ্রেমীদের মাধ্যমে আমাদের দেশে এসেছে। ক্রমেই এসব ফুলও আমাদের দেশের মাটি, জলবায়ু ও প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। যেমন গোলাপ। ভারতীয় উপমহাদেশে গোলাপ নিয়ে আসেন সম্রাট বাবর। পারস্যের এই গোলাপ ‘বসরা গোলাপ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। যদিও গোলাপ সারা বছরই ফোটে, তবে শীতেই গোলাপের সংখ্যা, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য বেশি লক্ষ করা যায়। কেবল গোলাপই-বা কেন, শীতের অসংখ্য ফুল রূপে, রঙে ও ঘ্রাণে আমাদের মন-প্রাণ মুগ্ধ ও আন্দোলিত করে।
শীতের অধিকাংশ ফুলের জন্মস্থান মূলত শীতপ্রধান দেশে। বাংলাদেশে শীত ঋতুতে ঘন কুয়াশা এসব বিদেশি ফুলের গাছ রোপণ ও ফুল ফোটার জন্য বেশ উপযুক্ত আবহাওয়া। বিদেশি এসব ফুলের মধ্যে অন্যতম হল— ডালিয়া, ক্রিসেন্থেমাম, বাটন, কারনেশন, জিনিয়া, কসমস, পিটুনিয়া, হলিহক, এস্টার, সুইটপি, ফ্লকস্, পর্টুলেখা, ডেইজি, সিলভিয়া, এন্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ডায়ান্থাস, ভারবেনা, কারনেশান, পপি, ক্যালেন্ডুলা, মর্নিং গ্লোরি, সুইট পি, অ্যাজালিয়া, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস প্রভৃতি। এসব বিদেশি ফুল কবে কীভাবে এদেশে এসেছে তা আজ অনেকটাই অজানা। তবে এসব বিদেশি ফুল এদেশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে। এখন এসব ফুল আমাদের বাগান বা বাড়ির বারান্দা ও ছাদের টবে শোভা বিস্তার করে চলেছে।
শীতে বাংলাদেশে জন্মানো ফুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গাঁদা ফুল। বিভিন্ন রঙ ও প্রজাতির গাঁদা ফুল রয়েছে। কোনোটা ঝলমলে হলুদ, কোনোটা হলদে কমলায় মেশানো, কোনোটা দেখতে একেবারে কমলা রঙের, আবার হলুদ পাপড়ির থোকার মধ্যে খয়েরি রঙের পাপড়িও রয়েছে। ফুলের আকার আকৃতির পার্থক্যও একেবারে কম নয়। কোনোটা ছোট কোনোটা বেশ বড়।
শীতের আরেক বৈচিত্র্যময় ও নজরকাড়া ফুল ডালিয়া। বিভিন্ন প্রজাতির ডালিয়া রয়েছে। এদের পাপড়ির সৌন্দর্য আর চমত্কার বিন্যাস সহজেই মানুষকে মুগ্ধ করে। ফুলের মঞ্জুরির আকার আকৃতি ভেদে ডালিয়ার কমপক্ষে দশটি শ্রেণি রয়েছে। মূলত ডালিয়ার কন্দজাতীয় মূল দিয়ে নতুন চারা তৈরি করা হয়। তাছাড়া কচি ডালের কাটিং করেও চারা তৈরি করা যায়। কাটিং থেকে তৈরি চারার ফুল সাধারণত আকারে বড় হয়।
শীতের আরেকটি সুদৃশ্য ফুলের নাম ক্রিসেন্থেমাম। এর বাংলা নাম চন্দ্রমল্লিকা। শতাধিক প্রজাতির চন্দ্রমল্লিকা রয়েছে। রঙের দিক থেকেও এরা অতুলনীয়। বীজ, কলম বা মূল থেকে প্রকাশিত কুশির মাধ্যমেও এদের বংশবিস্তার করা যায়। শীতের আরেক ফুল কসমসের আদিনিবাস মেক্সিকোতে। প্রজাতি ভেদে এদেরও রঙে রয়েছে ভিন্নতা। গ্যাজানিয়া সামপ্রতিক সময়ে শীত মৌসুমের জনপ্রিয় ফুল। এই ফুল অনেকটা সূর্যমুখীর মতো। সাদা, লাল, কমলা, হলুদ রঙের ফুল হয়। পাহাড়ি এলাকায় এরা ভালো জন্মে। এর আদিনিবাস দক্ষিণ আফ্রিকা। সালভিয়া মেক্সিকোর আরেক ফুল। এক-একটি লম্বা দ্লের ওপর এক-একটি ফুল ফোটে। প্রজাতি ভেদে ফুলের রঙও ভিন্ন হয়। কসমসের যেমন লাল রঙের ফুল রয়েছে তেমনি রয়েছে গোলাপি রঙের ফুলও। আবার নীল রঙের ফুল যেমন আছে, তেমনি আছে সাদা রঙের ফুল। শীতের ফ্যাকাশে ভাবকে রঙে রঙে রঙিন করে তোলে সালভিয়া নামের এই বিদেশি ফুল। ক্যালেন্ডুলা শীতের ফুল কমলা রঙের। তবে লাল ও হলুদ রঙের ক্যালেন্ডুলাও দেখা যায়। দক্ষিণ আমেরিকার সুগন্ধী ফুল পিটুনিয়া। ঘণ্টাকৃতির ফুল ফোটে গাছের ডালে। সাদা, বেগুনি, গোলাপি প্রভৃতি রঙের ফুল ফোটে এদের জাতভেদে। শীতের আরেক ফুল অ্যাস্টার। বিভিন্ন প্রজাতির অ্যাস্টারের রয়েছে বাহারি রঙের মুগ্ধতা।
শীতের ফুল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা উত্সব, বিয়ে, জন্মদিন থেকে শুরু করে প্রেম নিবেদন, এমনকি মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে বা প্রয়াতদের স্মরণ-অনুষ্ঠানে ব্যবহূত হয়।
তাছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস শীতে বা শীতের আবহাওয়ার আমেজে অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি জাতির সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের এই মহান দিবসগুলো স্মরণের জন্য এদেশের মানুষ ফুলে ফুলে ঢেকে দেয় শহিদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ। শীতের ফুল তাই আমাদের জীবন ও জাতিসত্তার পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335