শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন

মুখোশ মানুষ

বিজয় দিবস উপলক্ষে নাগরিক সমাবেশে সিটিং এমপি মোবিন সাহেবকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে। তিনি সভায় যাওয়ার প্রস্তুতি না নিয়ে বরং অস্থির পায়চারি করছেন দোতলার মার্বেল টাইলস বসানো বারান্দায়। ফরসা কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করছে। ব্যালকনিতে এসে ঘনঘন সদর দরজায় উঁকি মেরে যাচ্ছেন। না তার ডানহাত লিটনকে দেখা যাচ্ছে না।

মোবিন সাহেবের তটস্থ বউ বারবার বারান্দায় ঢুকতে গিয়েও আর আসছে না। তিনি জানেন তার স্বামীর মাথা গরম হলে কাউকে সহ্য করতে পারেন না। তার কানে ভেসে এল স্বামীর কণ্ঠ। মোবিন সাহেব ফোনে কাকে জানি খিস্তি খেউড় করছেন।
—শুয়োরের বাচ্চা শুয়োর। বছরের পর বছর তোদেরকে লালন পালন করছি, এই সামান্য কাজটা করতে এতক্ষণ লাগে?
রাজনীতির মাঠে মোবিন সাহেব ডাকসাইটে খেলোয়াড়। লাগাতার দুবারের স্থানীয় এমপি। সিটিং এমপি হিসেবে তার ক্ষমতার দাপট প্রচণ্ড। ছোটখাটো পরিবহন সমবায়ের নেতা থেকে এমপি হওয়ার পেছনে অনেক টাকা ও ঘাম ঝরাতে হয়েছে। রক্তপাতও কম হয়নি। নিজস্ব বড় একটা টেরর বাহিনীও আছে তার।
মোবিন সাহেবের খুব মন খারাপ আজ। কোনো নেতা-কর্মীকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না। ছোট ভাইটা সকালে মুখের ওপর বলে দিয়েছে, আজকের ভেতর মামুনকে সরিয়ে না দিলে এবং সোহানাকে না পেলে আপনার সব গুমর ফাঁস করে দেব।
সোহানা নামের মেয়েটার কথা সে এর আগেও ইশারা ইঙ্গিতে মোবিন সাহেবকে বলার চেষ্টা করেছে। মোবিন সাহেব না বোঝার ভান করলেও ঠিকই খোঁজ নিয়েছেন মেয়েটার।
মেয়েটা নাকি বেশ কয়েকবার তার ভাইয়ের মুখের ওপর বলে দিয়েছে, আমি মামুনকে ভালোবাসি। তা ছাড়া আপনার মতো টেররকে পছন্দ করার প্রশ্নই আসে না।
মামুন ছেলেটা সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লাড ডোনেশন নামের একটা অরাজনৈতিক সংগঠন পরিচালনা করে। ফেসবুকে টুকটাক লেখালেখিও করে।
মোবিন সাহেবের ছোট ভাই বেশ কয়েকবার হুমকি ধামকি দিয়েও সোহানার কাজ থেকে মামুনকে বিচ্ছিন্ন করতে না পেরে একদিন জনসম্মুখে মামুনকে চড় থাপ্পড়ও দিয়ে বসে। কোনোভাবে সুবিধা করতে না পেরে অবশেষে সে বড়ভাই মোবিন সাহেবের দুর্বলতায় হাত দিয়েছে।
মোবিন সাহেব ভালো করেই চেনেন তার ছোট ভাইকে। ওর কথামতো মামুনকে সরিয়ে না দিলে পাগলটা যেকোনো মুহূর্তে তার গুমর ফাঁস করে দিতে পারে। তাই সাতসকালে লিটনদের পাঠিয়েছেন মামুনকে সরিয়ে দিতে।
লেখক

লেখকদুই ঘণ্টা হচ্ছে কোনো সুখবর লিটনরা দিতে পারছে না। মোবিন সাহেবের তর সইছে না আর। কতক্ষণ আর ধৈর্য ধরা যায়? রাজনীতির মাঠে আজকের এই জায়গায় আসতে গিয়ে কত ঝানু ঝানু রাঘব বোয়ালকে নিমেষেই ওপারের টিকিট ধরিয়ে দিয়েছেন! অথচ মামুনের মতো ছিঁচকে পুটিকে টুকে দিতে এতক্ষণ সময় লাগে?
সিগারেটের পর সিগারেট টানছেন। বিদেশি ব্র্যান্ডের মালবোরো সিগারেট থেকে আজকে আবুল বিড়ির গন্ধ পাচ্ছেন তিনি। ঘেমেনেয়ে যা তা অবস্থা। ওদিকে সভার শুরুর টাইম এগিয়ে আসছে। তাকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে হবে। আজকের বক্তব্যের এজেন্ডা অশুভ রাজনীতিতে অস্ত্রের অপব্যবহার।
সেই সকাল সাতটাই লিটনদের পাঠিয়েছেন। এখন ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই। সকালের ঠান্ডা সূর্যটা গনগনে হওয়া শুরু করেছে। সেই সঙ্গে উত্তপ্ত হতে থাকে মোবিন সাহেবের খিঁচড়ে যাওয়া মেজাজ।
হঠাৎ মোবিন সাহেবের হোয়াটস অ্যাপে লিটনের মেসেজ। তিনি মেসেজ ওপেন করতেই মোবাইলের ডিসপ্লে জুড়ে জায়গা করে নিল কপালের মাঝ বরাবর ছিদ্র হয়ে যাওয়া একটা রক্তাক্ত নিথর দেহ।
নিমেষেই মোবিন সাহেবের গোঁফের নিচে ঠোঁট জুড়ে জায়গা করে নিল বিজয়ের হাসি। তার কেমন জানি নিজেকে হালকা হালকা লাগছে। মাথার ওপর থেকে যেন পাহাড় নেমে গেছে।
তিনি দেরি না করে সভার উদ্দেশে রওনা দিলেন।
জনসভা লোকে লোকারণ্য। মোবিন বক্তব্য দিতে উঠতেই মুহুর্মুহু করতালি আর মাটি কাঁপানো স্লোগান। মোবিন সাহেব বক্তব্য দিচ্ছেন।
ত্রিশ লাখ শহীদের বিনিময়ে পাওয়া আজকের এই বিজয়। লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই বাংলাদেশে আর একটা মানুষেরও যেন রক্ত না ঝরে। আর কোনো মানুষ যাতে অকালে প্রাণ না হারায়। রাজনীতির অশুভ মাঠে যেন আর কোনো অবৈধ অস্ত্রের অপব্যবহার না হয়…।’

বশির আহমেদ রাকিব: জেদ্দা, সৌদি আরব।

প্রবাসীদের নিয়ে দৈনিক ইন্দো-বাংলা অনলাইনের নিয়মিত আয়োজন প্রবাস।
এ বিভাগে প্রতিদিন আপনাদের লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। আপনার সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা নিয়ে লেখা পাঠান। প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গল্প-কবিতা-ছড়া ও ভ্রমণ কাহিনিসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের খবরও পাঠাতে পারেন। লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেন না।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা: <news.indobangla24@gmail.com >
 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335