শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন

পুতিনকে কি গ্রেফতার করা যাবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ভ্লাদিমির পুতিনের নামে শুক্রবার (১৭ মার্চ ) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এরপর থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট কি সত্যিই গ্রেফতার হবেন? তাকে কি আদৌ গ্রেফতার বা বিচারের সম্মুখীন করতে পারবে আইসিসি।

রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অবশ্য বলে দিয়েছেন, রাশিয়া আন্তর্জাতিক আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না। তারা এই প্রশ্নটিকে আপত্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন।

পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
রোম সংবিধির দুটি অনুচ্ছেদের অধীনে ইউক্রেনীয় শিশুদের সঙ্গে রাশিয়ার আচরণের জন্য পুতিনকে অভিযুক্ত করেছে আইসিসি। অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিকদের বেআইনিভাবে নির্বাসন এবং রাশিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

একই অভিযোগে রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেকসেয়েভনা লভোভা-বেলোভার নামেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি।

এর একদিন আগে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনীয় শিশুদের জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করাসহ যুদ্ধাপরাধ করেছে রাশিয়া।

আইসিসি তার বিবৃতিতে বলেছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা (পুতিন ও মারিয়া) বেআইনি নির্বাসন এবং ইউক্রেনের অধিকৃত এলাকা থেকে রাশিয়ায় বেআইনি স্থানান্তর করে যুদ্ধাপরাধ করেছেন, এটি বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।

যদিও রাশিয়ায় স্থানান্তরিত শিশুদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, রুশ এবং ইউক্রেনীয় উভয় কর্তৃপক্ষই বলেছে, যুদ্ধের কারণে কয়েক হাজার শিশু রাশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, রুশ কর্তৃপক্ষ স্থানান্তরিত শিশুদের পালক পরিবারের সঙ্গে রেখেছে এবং তাদের রাশিয়ার নাগরিকত্ব দিয়েছে। এদের মধ্যে এমন শিশুও রয়েছে যারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বা তাদের বাবা-মাকে আটক করার সময় আলাদা করা হয়েছে।

পুতিন কি গ্রেফতার হবেন?
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পুতিন গ্রেফতার হবেন, এমন সম্ভাবনা খুবই কম। আইসিসির নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। তাই এটি গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর ওপর নির্ভর করে।

১৯৯৮ সালে যে আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে আইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় রাশিয়া। এতে এখন পর্যন্ত ১২৩টি দেশ সই করেছে।

টাইমের প্রতিবেদন অনুসারে, নিকট ভবিষ্যতে আইসিসির চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী কোনো দেশে পুতিন যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর গেলেও তিনি যে গ্রেফতার হবেন, তেমন কোনো আশঙ্কা নেই বললেই চলে। কারণ, এর জন্য ওই দেশটিকে অবশ্যই পুতিনকে গ্রেফতারে আগ্রহী হতে হবে।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কবেক কলেজের অধ্যাপক বিল বোরিং মনে করেন, পুতিন রাশিয়া ছেড়ে বেরোবেন না। আর বিশ্বে এমন কোনো সরকার নেই, যা তাকে রাশিয়া ছেড়ে বেরোতে বাধ্য করতে পারে।

ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিনিধিত্বকারী এ বিশেষজ্ঞ বলেন, আমি মনে করি না, তার (পুতিনের) ব্যক্তিগত পরিণতি ভোগ করার কোনো উপায় রয়েছে।

পরমাণু অস্ত্রের বিশাল মজুতসহ রাশিয়া এখনো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। তাদের শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা যেকোনো দেশের জন্য কঠিন পরিণতি ডেকে আনতে পারে, এটি সবাই খুব ভালো করেই জানে।

তাছাড়া আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বহু নজির রয়েছে বিশ্বজুড়ে। দারফুর গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আইসিসি। কিন্তু এটি তার বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করতে পারেনি।

এমনকি, পুতিন ও তার মিত্ররা রাশিয়ায় ক্ষমতা হারানোর পরেও তাকে যে প্রত্যর্পণ করা হবে, সেই সম্ভাবনাও কম। এটি করতে গেলে বড় বাধার সম্মুখীন হবে নতুন সরকার। কারণ রাশিয়ার আইনে রুশ নাগরিকদের অন্য রাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও পুতিনকে গ্রেফতার না করে তার বিচার করবে না। কারণ অভিযুক্ত উপস্থিত না থাকলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করে না আইসিসি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335