শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন

শর্তে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের, কাজে আসছে না মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। কিন্তু মাছ ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকায় নির্মাণের ১৭ মাসেও চালু হয়নি কেন্দ্রটি। কেউ কেউ শর্ত অনুযায়ী অগ্রিম টাকা দিয়ে দোকান বরাদ্দ পেলেও টাকা ফেরত নিয়েছেন।

আড়তদারদের দাবি, নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে শর্ত মেনে ব্যবসা করলে লাভবান হওয়া যাবে না বরং দিন দিন ব্যবসার বিলুপ্তি ঘটবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে ভৈরবে পুরাতন মেঘনা ফেরিঘাটে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তর ২০ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ৪ তলা বিশিষ্ট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর নবনির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

অবতরণ কেন্দ্রটি ২৭ শতাংশ ভূমির ওপর নির্মিত হয়েছে। ভবনের চারদিকে সীমানা প্রাচীর, অকশন শেড, প্যাকিং শেড, ৩৫টি আড়তঘর, একটি বরফকল, সোলার প্যানেল, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, গভীর নলকূপ, আইস ক্রাসার ও জেনারেটর ব্যবস্থা আছে। তবে এখনো কোনো আড়তদার অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসা করতে আসছেন না।

অন্যদিকে পুরোনো নৈশকালীন মেঘনা মৎস্য বাজারে আড়ত আছে ১৫০টি। প্রতিটি আড়তের সঙ্গে আছে মাছ রাখার পর্যাপ্ত জায়গা ও বরফ কলসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা।

চিশতীয়া মৎস্য আড়তের মালিক মো.সোহেল মিয়া বলেন, ‘সরকার ভৈরবের মাছ ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য দুবছর আগে নতুন একটি ভবন তৈরি করেছে। সেখানে আড়তদারদের যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়েছে। কিন্তু আমরা পুরোনো আড়তেই ভালো আছি। বর্তমানে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ চলছে। তবে ব্যবসায়ীরা এ আড়তে যার যার নিজস্ব জায়গায় ব্যবসা করছেন। তাদের কোনো ভাড়া দিতে হয় না। সরকারের নতুন ভবনে যদি যাই তাহলে সেখানে অগ্রিম ভাড়া ও কমিশন দিতে হবে। আমরা পুরাতন মৎস্য বাজারে থাকতে চাই।’

মাছ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ রাখা বা প্রসেসিংয়ের মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যদিও আগের মতো মিঠা পানির মাছ এখন আড়তে আসে না। তবুও পুরোনো মৎস্য আড়তে চার-পাঁচজন ব্যবসায়ীর যে পরিমাণ মাছ আসে তা দিয়ে পুরো ভবনের জায়গা ভরে যাবে।’

ভৈরব মেঘনা মৎস্য আড়তদার মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন  বলেন, পুরোনো মৎস্য আড়তে সবাই জায়গা কিনে ব্যবসা করছি। তবে দু-তিন বছর আগে সরকার মৎস্য ব্যবসায়ীদের জন্য একটি ভবন তৈরি করেছে। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে সব ব্যবসায়ীদের বলেছি নতুন ভবনে যেতে। কিন্তু তারা অগ্রিম ভাড়া দিয়ে যেতে আগ্রাহী না। তারা যেখানে আছে সেখানেই থাকতে চায়।

তিনি আরও বলেন, সরকার যে শর্ত দিয়েছে তাতে অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব না। পুরোনো আড়তে তাদের কোনো ভাড়া দিতে হয় না। নতুন ভবনে আড়াই হাজার টাকা মাসে ভাড়া, এক লাখ টাকা অগ্রিম ভাড়া, দুই শতাংশ বিক্রিত মাছের কমিশন দিতে হবে। আমরা ব্যাপারীদের কাছ থেকেও ২ শতাংশ কমিশন রাখতে পারি না। তবুও ব্যবসায়ীদের বলেছি তোমরা নতুন ভবনে যাও। কিন্তু তারা যেতে চায় না।’

এ বিষয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. ছিদ্দিকুর রহমান  বলেন, সরকার ভৈরবের মৎস্য ব্যবসায়ীদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত একটি অবতরণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী কেন্দ্রে আসেনি। তবে ব্যবসায়ীরা যেন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসে ব্যবসা করে এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে এবং কোন উপায়ে ব্যবসা করবে সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335