শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

এখনো কাজে ফিরতে পারছেন না আফগান নারীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০২১ সালের শুরু থেকেই প্রতিদিন সকালে ২৬ বছর বয়সী সাবিরা সাইদি, কালো হিজাব আর মুখোশ পরে তার বাবা বা ভাইয়ের সঙ্গে কাজে যেতেন। কাবুল ও ময়দান ওয়ারদাক প্রদেশে লন্ডনভিত্তিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, চিলড্রেন ইন ক্রাইসিসে কাজ করেন সাইদি। কিন্তু সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর নারীদের ওপর নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সাইদি তার ১০ সদস্যের পরিবারের দিকে চেয়ে এবং চাকরি ধরে রাখতে সব বিধিনিষেধ মেনে নিয়েছিলেন।

কিন্তু গত বছর ২৪ ডিসেম্বর তালেবান নারীদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিওতে কাজ করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে সাইদিসহ হাজার হাজার নারীর জীবন বদলে যায়।

তালেবানের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এসব এনজিওকে চিঠি দিয়ে বলা হয়,পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আফগান নারীদের কাজ থেকে বিরত রাখতে। সেই চিঠিতে আরও বলা হয়, নারী কর্মীরা সঠিকভাবে হিজাব না পরায় এমন আদেশ জারি করা হয়েছে।

সাইদি ও এনজিওতে কাজ করা অনেকে ভয়েজ অব আমেরিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা জানান, তালেবানের দেওয়া পোশাক কোড মেনেই চলেন তারা। তারা আরও অভিযোগ করেন, এনজিওতে কাজ করা নারীদের ওপর তালেবানের নিষেধাজ্ঞার কারণ ছিল সর্বস্তরে নারীদের কাজ করা থেকে বিরত রাখার কৌশল।

এনজিওতে নারীদের কাজ করা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার কয়েক দিন আগে, তালেবান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করার নির্দেশ দেয়। এর আগে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করে তালেবান সরকার।

২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, তালেবান নারীদের বিরুদ্ধে কিছু দমনমূলক ব্যবস্থা আরোপ করা শুরু করে। এসবের মধ্যে রয়েছে তাদের মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে নিষিদ্ধ করা, সরকারি কাজ থেকে বিরত রাখা, কোনো ঘনিষ্ঠ পুরুষ আত্মীয় ছাড়া দীর্ঘ ভ্রমণ না করা এবং পার্ক ও জিমে যাওয়াও বারণ করা হয়।

আফগানিস্তানে মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক রিচার্ড বেনেট গত ৯ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে তালেবানের এই পদক্ষেপগুলোকে ‘পাবলিক স্পেস’ থেকে নারীদের সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।

সাইদি জানান, তিনি এখন পুরো সময় বাড়িতে বসে থাকেন। সেকারণে অনেক ক্ষতি হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমরা মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

তিনি জানিয়েছেন, এনজিও থেকে তাকে বেতন দেওয়া হচ্ছে, তবে এটি কতদিন চলবে তা নিশ্চিত নন। তার কাজ হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের সার্বিক পরিস্থিতি দেখভাল করা। কিন্তু বাড়িতে বসে কীভাবে সেটি করা সম্ভব। তিনি তার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন, যদি তালেবান পলিসি পরিবর্তন করে। কিন্তু আসলে বিষয়টি কেউই জানে না।

তিনি আরও বলেন, তার আর কোনো আশা নেই।

গত মাসে, জাতিসংঘের ডেপুটি বিশেষ প্রতিনিধি ও আফগানিস্তান মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী রমিজ আলাকবারভ সাংবাদিকদের বলেন দেশটির ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

আলাকবারভের মতে, তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে, জিডিপি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বেকারত্ব ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও জান্তি সোয়েরিপ্তো বলেছেন দেশটি একটি মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।তালেবানের নিষেধাজ্ঞা আফগানিস্তানে সাহায্য সংস্থার জন্য কাজ করা কঠিন করে তুলেছে। তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের ছাড়া আমাদের কাজ ভালো এবং কার্যকরভাবে করা সত্যিই অসম্ভব। নারীরা আমাদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে।’

তিনি জানান, সেভ দ্য চিলড্রেন ১৯৭৬ সাল থেকে আফগানিস্তানে কাজ করছে। দেশটির ৩৪টি প্রদেশের ১৭টিতে সংস্থাটির ৫ হাজার কর্মী রয়েছে এবং তাদের অর্ধেকই নারী। তিনি বলেন, দেশটিতে ৫৫ হাজারের মতো মানুষ এনজিওতে কাজ করছে। তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই নারী।

এই কর্মকর্তা বলেছেন যদিও তার সংস্থা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে তাদের কার্যক্রম আবার শুরু করতে পেরেছেন। তবে তাদের অবশ্যই কেবল জাতীয় নয়, প্রাদেশিক পর্যায়েও অনুমোদন পেতে হবে। তালেবানরা তাদের আরও আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু শুধু শব্দ নয় কাজে বিশ্বাস করতে চান তিনি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335