বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা সংকট শিক্ষাজীবন শেষ না করেই এনজিওর চাকরিতে ঝুঁকছেন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা আগমনের পর সহজলভ্যতায় এনজিওর চাকরিতে ঢুকে পড়েছেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অগণিত শিক্ষার্থী। সনদ ছাড়াও কাড়ি কাড়ি টাকা মাইনে পাওয়ায় সেশন সমাপ্তিতে বিমুখ হয়েছেন এসব শিক্ষার্থীরা। ফলে, ক্লাসে অনুপস্থিতির পাশাপাশি একাডেমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্যের হার বেড়েছে।

সদ্য সমাপ্ত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এ বিপর্যয় ধরা পড়ার পর ভাবনায় পড়েছে অভিভাবক মহল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষা থেকে প্রজন্মকে ছিটকে পড়া রোধে উদ্যোগী হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

এরই অংশ হিসেবে কলেজেশিক্ষার্থীদের উপস্থিত নিশ্চিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে কক্সবাজার সরকারি কলেজ। ক্লাসে অনুপস্থিতির (ডিসকলেজিয়েট) কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ১৪৬ শিক্ষার্থীকে ফরম পূরণের সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) কলেজ অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এ সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা অতীতের মতো কলেজমুখী হবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমতে ক্লাসে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে শতকরা ৭৫ ভাগ উপস্থিতি থাকতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের ডিসকলেজিয়েট ঘোষণা করার বিধান রয়েছে। বিধি থাকলেও তা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কলেজ প্রশাসন। উল্টো প্রশাসনের উদাসীনতায় কলেজবিমুখ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর স্কুল থেকে শুরু করে কলেজশিক্ষার্থীরা চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার নেমে আসে ১০ ভাগে। এতে কক্সবাজারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফলাফলে বিপর্যয় দেখা দেয়। সদ্যঘোষিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিষয়টি সবার নজরে আসে।

সূত্র আরও জানায়, রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া ডিগ্রি কলেজে মারাত্মক ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফলে এ কলেজের ৫৭০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন মাত্র ১৭২ জন। যেখানে বিজ্ঞান বিভাগের ছয়জন শিক্ষার্থীর সবাই ফেল করেন।

কক্সবাজার সরকারি কলেজ সূত্র জানায়, কলেজের রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ১৪৬ শিক্ষার্থীকে ‘ডিসকলেজিয়েট’ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। তারা ফরম পূরণ করতে পারবেন না। কলেজ অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন ও বিভাগীয় প্রধান আবুল মনসুর সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ৬০ শতাংশের কম ক্লাস উপস্থিতির কারণে তাদের ‘ডিসকলেজিয়েট’ ঘোষণা করা হলো।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক আবুল মনসুর বলেন, ‘আমার বিভাগে চতুর্থ বর্ষে মোট শিক্ষার্থী ১৬০ জন। এদের মধ্যে ১৪ জন নিয়মিত কলেজে উপস্থিত থাকায় তাদের ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৪৬ জনকে ডিসকলেজিয়েট ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের কলেজমুখী করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ নয়, কলেজেশিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে অন্যান্য বিভাগকেও এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে উপস্থিতি যেমন নিশ্চিত হবে তেমনি শিক্ষার মানও বাড়বে।’

কলেজ প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। কক্সবাজার পৌরসভার তারাবনিয়ার ছরা এলাকার আমিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাজীবন শেষ না করতেই ছেলেমেয়েরা টাকার মোহে পড়েছে। এতে অনেকের শিক্ষাজীবন মাঝপথেই থেমে যাচ্ছে।

ইয়াছিন আরাফাত নামের আরেক অভিভাবক বলেন, ‘রোহিঙ্গা আসার পর নানা বয়সী শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ পেয়েছে। এজন্য তারা নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয় না। এতে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে কলেজ প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত স্যালুট পাওয়ার যোগ্য।’

এ বিষয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন বলেন, কলেজের সব বিভাগ আগে থেকেই এ বিধি মেনে চলতো। মাঝখানে একটু ঢিল দেওয়া হয়। এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ পুনরায় কঠোর হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, রোহিঙ্গা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। মানবিক আশ্রয় দিতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এখন বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমরা। তাদেরকে কেন্দ্র করে আমাদের শিক্ষার্থী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। এ থেকে উত্তরণে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানমুখী করতে উখিয়া-টেকনাফ তথা জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335