শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন

চিকিৎসকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া মার্চে শুরু হচ্ছে না ‘সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার’

নিজস্ব প্রতিবেদক; ‘কম খরচে রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা’ দেওয়ার কথা বলে সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার চালু করতে চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১ মার্চ থেকে এই কার্যক্রম চালু হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

গত ২২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যখাতের জরুরি বিষয় নিয়ে ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ১ মার্চ থেকে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করতে চাচ্ছি। পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৫০টি উপজেলা, ২০টি জেলা ও পাঁচটি মেডিকেল এর আওতাভুক্ত থাকবে। এতে রোগীরা বেশি চিকিৎসা পাবেন।

তবে এখনও নিতিমালা চূড়ান্ত ও অনুমোদন না হওয়ায় এবং পাইলট প্রকল্পের জন্য হাসপাতাল নির্ধারণ না হওয়ায় মার্চে এই কার্যক্রম চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চার দফা বৈঠকের পরও এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। আবার এ নিয়ে চিকিৎসকদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

গত রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে ‘সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার’ চালুর নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে চতুর্থ দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন না স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ফলে এ সংক্রান্ত নানান আলোচনা হলেও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহ. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার  বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। অন্য দিনের বৈঠকের মতো আজও (রোববার) কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নতুন পদ্ধতির বিষয়ে কী করা হবে, কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেগুলোর ব্যাপারে প্রাথমিক কিছু কথা হয়েছে। মার্চে চালু হবে কি না- এখনো তা স্পষ্ট করা যাচ্ছে না।

এর আগে সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার চালুর বিষয়ে গত ২২ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমানকে করা হয় কমিটির প্রধান। কমিটির সদস্য সংখ্যা ২৬ জন। কমিটি এখন পর্যন্ত চারটি বৈঠক করেছে। এরই মধ্যে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নামের একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি হয়েছে। সেটি চূড়ান্ত করতেই গতকাল রোববার দুপুরে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়।

ওই কমিটির সদস্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক শেখ দাউদ আদনান  এ বিষয়ে বলেন, মার্চে সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার চালু হওয়ার বিষয়টি এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হচ্ছে। আজ চতুর্থ দফায় বৈঠক হয়েছে। তবে এখনো নীতিমালার খসড়া তৈরি হয়নি। এটি হলে অনুমোদনের জন্য যাবে। এরপর আমরা হাসপাতাল নির্ধারণ করবো। এখনো হাসপাতাল নির্ধারণই হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে চিকিৎসকদের মাঝে। চিকিৎসকরা বলছেন, তরুণ চিকিৎসকদের মাঝে নতুন উদ্যোগে আশার আলো দেখা দিলেও দোটানায় বিশেষজ্ঞরা। তরুণরা ভাবছেন, তাদের কাছেও রোগীরা আসবে। ফলে নিজেদের দক্ষতা এবং উপার্জন দুটোই বাড়বে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঠিক এর উল্টো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, খসড়া নিতিমালা অনুযায়ী অফিস শেষে নিজ কর্মস্থলেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন চিকিৎসকরা। এতে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের ফি হবে ৩০০ টাকা, চিকিৎসক পাবেন ২০০ টাকা। সহকারী পাবেন ৫০ টাকা আর হাসপাতাল তহবিলে যাবে ৫০ টাকা। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে তাদের ভিজিট ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ক্লিনিকের লাভ ছেড়ে সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন কি না- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক জানান, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারের বিষয়ে যে খসড়া নীতিমালা হয়েছে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখনো ফি’র বিষয়টিও চূড়ান্ত নয়। নীতিমালা পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পরই বোঝা যাবে ফি কত টাকা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এজন্য চিকিৎসক, বিভিন্ন সংগঠন ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করছে। সরকারিভাবে ফি যেটাই নির্ধারণ করা হোক, প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল হিসেবে আমরা সেটি বাস্তবায়ন করবো। যাতে রোগীরা উপকৃত হন, সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সরকারি হাসপাতালগুলোতে সন্ধ্যাবেলায় বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের উপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। দিনশেষে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে সরকারি হাসপাতালে সেবা নিয়ে বিড়ম্বনা আর বেসরকারি হাসপাতালে উচ্চ ফি’র সমালোচনা রয়েছে। এর মাঝে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত ডিউটি শেষ করে নিজ হাসপাতালেই চিকিৎসকরা আলাদা চেম্বার করে রোগী দেখা ও চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণ করা বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ‘মার্চ থেকে চেম্বার, সর্বোচ্চ ফি ৩০০ টাকা’, ‘৩০০ টাকায় পরামর্শ দেবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ এরকম নানা শিরোনামে যে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে তাতে জনমনে নানারকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারি হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসকদের নিজ নিজ হাসপাতালেই অফিস সময়ের বাইরে আলাদা চেম্বার করার বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি কমিটি কাজ করছে এবং কমিটির কাজ এখন চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসকের ফি ৩০০ টাকা বা ১৫০ টাকা হবে কি না সেটি ঠিক করা হয়নি। কতটি হাসপাতাল বা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চালু করা হবে সে বিষয়েরও কোনো রকম সিদ্দান্ত নেয়নি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং সেটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি হাসপাতালে আলাদা চেম্বার করা বা ফি নির্ধারণ করা কিংবা কোন কোন হাসপাতালে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে এসব তথ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত প্রচার না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।

প্রাথমিকভাবে উপজেলা পর্যায়ে ৫০টি, জেলা পর্যায়ে ২০টি, বিভাগীয় ৮টি ও বিশেষায়িত পাঁচটি সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার চালু হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ১ মার্চ চেম্বার শুরুর সেই পরিকল্পনাও আপাতত আলোর মুখ দেখছে না।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335