শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২০ অপরাহ্ন

মেহেরপুর ছাগলে বদলেছে গ্রামীণ অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: মেহেরপুরের গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র বদলে ভূমিকা রাখছে ছাগল। জেলার কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোতে ছাগল পালনে এসেছে সচ্ছলতা। প্রায় সব বাড়ির উঠানেই বিভিন্ন জাতের ছাগলের দেখা মেলে। ছাগল পালনে বাড়তি তেমন খরচ না থাকায় খুব সহজেই এর দেখভাল করতে পারেন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও। মেহেরপুর জেলাকে ছাগলের অভয়াশ্রম বলছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

মেহেরপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাঘাট ও মাঠে দেখা যায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল। কোথাও উঠানে, কোথাও বাড়ির মাচায় চলছে ছাগল পালন। একটি মা ছাগল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। অনেক পরিবার পাঁচ থেকে ১০টি ছাগল পালন করে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করে। এতে অনেকের জীবনযাত্রাই পাল্টে গেছে।

ব্ল্যাক বেঙ্গল, বারবারি, তোতাপুরি, হরিয়ানা, যমুনাপাড়ি ও বিটল জাতের ছাগল পালন করেন এখানকার কৃষক ও খামারিরা। তবে এর মধ্যে ৮০ ভাগ ক্রস জাতের ছাগল। বাকি ২০ ভাগ ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের। জেলার বেকার যুবক, নতুন উদ্যোক্তা এবং দরিদ্র কৃষকরা ছাগল পালন করে জীবিকানির্বাহের পাশাপাশি পুষ্টি সরবরাহের কাজেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীতে ৩০০টি ছাগলের জাত রয়েছে। এর মধ্যে মাংসের স্বাদ ও চামড়ার গুণগত মানের জন্য বিশ্বের সেরাদের মধ্যে পাঁচটি ছাগলের জাতকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল। কিন্তু অধিক মাংস উৎপাদন ও মুনাফার আশায় খামারিরা অন্য জাতের ছাগল পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে করে
মেহেরপুরসহ সারাদেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল কমছে।

জেলায় বছরে প্রায় ছয় লাখ ৭১ হাজার ৫৮৩টি ছাগল উৎপাদন হয়ে থাকে। জেলার চাহিদা পূরণ করে বাইরের জেলাতেও মেহেরপুরের ছাগল সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ছাগলের মাংসের দাম প্রকারভেদে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জেলায় ছাগলের মাংস ও চামড়া বিক্রি করে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। ফলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটছে এ জেলার মানুষের।

মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের খামারি মান্না পারভেজ বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। পড়াশোনার পাশাপাশি পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন জাতের ছাগল পালন করে আসছি। এখন আমি স্বাবলম্বী। বেকারত্ব ঘুচিয়েছি। ছাগল পালন করে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা আয় হয়। শখের বশে প্রথমে দুইটা ছাগল দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন আমার ২২টি ছাগল আছে।

তিনি আরও বলেন, বেকার যুবকরা ইচ্ছা করলে বাড়িতে অতি সহজেই ক্ষুদ্র পরিসরে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারে। ছাগলের তেমন কোনো রোগবালাই নেই বললেই চলে। আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সহযোগিতা পাই। ফোন করলেই চলে আসেন চিকিৎসক।

মেহেরপুর যাদবপুর গ্রামের আহসান আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে এক পাল ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। উঠানে আটটি ছাগল রয়েছে। তিনি জানান, শখের বসে ছাগল পালন শুরু করেছিলেন। এই ছাগল বছরে চার থেকে ছয়টা করে বাচ্চা দেয়। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে প্রতিটি ছাগল থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা যায়। এরা বাড়ির আশপাশের গাছের পাতা, সবজির উচ্ছিষ্ট, ঘাস ও বিচুলি খেয়েই বড় হয়। তাই এদের পালতে বাড়তি কোনো চাপও পড়ে না।

মেহেরপুর সদর উপজেলার ইছাখালী গ্রামের আমজেদ আলী বলেন, আমি বিভিন্ন জাতের ছাগল পালন করি। ছাগল পালন করতে বড় চারণভূমি লাগে না। বাড়ির আঙিনায় এরা দিব্যি বেড়ে ওঠে। এখন আমি স্বাবলম্বী। বেকারত্ব ঘুচিয়েছি। ছাগল পালন করে প্রতিবছর আমার মোটা অঙ্কের টাকা আয় হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ছাগল পালনের জন্য মেহেরপুর একটি অভয়াশ্রম। এখানকার জলবায়ু ও পারিপার্শ্বিকতা ভালো। উষ্ণ অনুকূল আবহাওয়া হওয়ায় ছাগল পালনের ক্ষেত্রে এটা সব থেকে উপযোগী এলাকা। ছাগলের রোগব্যাধী বলতে শীতকালে ঠান্ডাজনিত রোগ ছাড়া তেমন কোনো রোগবালাই হয় না। যদি রোগ হয়, প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রশিক্ষিত চিকিৎসক আছেন। তারা সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, জেলার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করতে ও আমিষের চাহিদা পূরণ করতে ছাগল পালন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া দারিদ্র দূর করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335