শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৪ অপরাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বিচারপ্রার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপ্রার্থী ভুক্তভোগীরা এমন অভিযোগ করেন।

এদিকে আইনজীবীদের আদালত বর্জনের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে বিচারপ্রার্থীদের শুনানি করার ঘটনা ঘটেছে। বিচারপ্রার্থীদের শুনানিতে জামিন ও মামলা নিষ্পত্তির ঘটনাও ঘটেছে।

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতি। দুই বিচারক ও নাজির মমিনুল ইসলামের শাস্তির দাবিতে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে আদালত বর্জন করছেন আইনজীবীরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা।

আইনজীবীদের আদালত বর্জনের কর্মসূচির বিষয়ে বিচারপ্রার্থী অনেকেই অবগত নন। বুধবার জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা আদালত প্রাঙ্গণে এসে ঘুরে বেড়ান। অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যান। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে, বিচারপ্রার্থীরা আদালতে প্রবেশ করতে চাইলে আইনজীবীরা বাধা দেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এদিন জেলার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল থেকে আসা সালমা বেগম নামে এক নারী তার ৪ শিশুসন্তানকে নিয়ে জেলা জজ আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠছিলেন। এসময় বশির আহমেদ খান নামে এক আইনজীবী সালমা বেগমকে ওপরে উঠতে বাধা দেন। আদালতে কাজ বন্ধ রয়েছে জানিয়ে সালমা বেগমকে ধমকিয়ে আদালত ভবন থেকে বের করে দেন। এসময় ভয় পেয়ে তিনি তার ৪ শিশুসন্তানকে নিয়ে নেমে যান।

সালমা বেগম বলেন, ‘আমরা শহরের দাতিয়ারায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছি। প্রতিবেশী এক নারী প্রায় ৬ মাস আগে আমার স্বামী কাউসার মিয়ার নামে তার শিশুসন্তানকে বলাৎকারের মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আমার স্বামীকে গ্রেফতার করে জেলখানায় পাঠায় পুলিশ। পরে ওই নারীর সঙ্গে আদালতের বাইরে বিষয়টি আপস-মীমাংসা হয়। মীমাংসা হওয়ায় জামিনের জন্য গত ৩ জানুয়ারি আমার স্বামীকে জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।’ কিন্তু উকিলরা আদালতের কাজে অংশগ্রহণ না করায় তার স্বামীর জামিন হয়নি বরে জানান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আপসের পরও আমার স্বামী গত দেড় মাস ধরে জেলে রয়েছেন। ৪ শিশুসন্তানকে নিয়ে আদালতে চত্বরে ঘুড়ে বেড়াচ্ছি তাকে জামিন করানোর জন্য। বুধবার জামিনের আবেদন করতে আসলে আদালতের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতেই আমাকে ধমকিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়।’

আরেক বিচারপ্রার্থী মো. হাসিফ মিয়া বলেন, ‘উকিল ও বিচারকদের মধ্যে ঝামেলায় ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা। অনেকদিন ধরে একটি মামলা নিয়ে ঘুরছি। কিন্তু আদালতে কোনো কাজই হয় না। এতে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন তো আদালতে ঢুকতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।’

তারা ছাড়াও আইনজীবীদের বিরুদ্ধে পথ আটকে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন জেলার আখাউড়া উপজেলার মনোনয়ারা বেগম, নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের ইছা মিয়া, সরাইল চুন্টা ইউনিয়নের রসূলপুরের মুমিনুল হক, কসবা উপজেলার শাহাদৎ মিয়া, বাঞ্ছারাপুর উপজেলার ইলিয়াস মিয়া।

অভিযোগের বিষয়ে আইনজীবী বশির আহমেদ খাঁন বলেন, ‘আইনজীবী ছাড়া বিচারকাজ সম্ভব না। আমরা বিচারপ্রার্থীদের সেটিই বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমরা আইনজীবী, আপনাদের প্রয়োজনে আন্দোলনে নেমেছি। এই আন্দোলন সফল করার জন্য আপনারা কার্যক্রম স্থগিত রাখবেন।’

এ বিষয়ে আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আইনজীবী ছাড়া বিচার চলবে না কেন? এতে আইনে তো কোনো বাধা নেই। একজন বিচারপ্রার্থীর যদি আইন সম্পর্কে ধারণা থাকে, তিনি যদি বিচারকের কাছে সঠিকভাবে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে উকিল নিয়োগ করার কোনো প্রয়োজনই নেই।’

তিনি বলেন, ‘আদালতে প্রতি কার্যদিবসেই বিচারক, কর্মকর্তা ও কার্মচারীরা উপস্থিত থাকেন। বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া সবার আইনগত অধিকার। কোনো বিচারপ্রার্থীকে আদালতে আসতে না দেওয়া সম্পূর্ণ বে-আইনি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর কোর্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আমরা সচেষ্ট আছি। তবে যদি কেউ কাউকে ভয়ভীতি দেখান তাহলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335