বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন

৫ আসামি গ্রেফতার সন্তানদের দেখতে ঢাকায় এসে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ শিকার নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক: সন্তান-স্বামীর সাক্ষাৎ পেতে যশোরের গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী (২৯)। মোহাম্মদপুর থানার বসিলা এলাকার এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন- বিল্লাল হোসেন (২৫), আল-আমিন হোসেন (২৬), সবুজ (২৬), রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেল (২৪) ও শফিকুল ইসলাম (২৬)।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর গাবতলী, ডেমরা, বসিলা ও ভোলার তজুমুদ্দিন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, ভুক্তভোগী নারী (২৯) স্বামী-সন্তানসহ মোহাম্মদপুরের বসিলায় বসবাস করতেন। ৪ মাস আগে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সন্তানদের স্বামীর কাছে রেখে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এরমধ্যে কিছু না জানিয়েই স্বামী তাকে তালাক দেন।

গত ২৫ জানুয়ারি তালাকের কারণ জানতে ও এ বিষয়ে আলোচনা করতে স্বামীর সাক্ষাতের জন্য ঢাকায় আসেন তিনি। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি তার আগের বাসায় এসে তার স্বামী-সন্তানকে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। বাড়ির মালিক, পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়াদের কেউই তার স্বামী-সন্তানদের কোনো ঠিকানা দিতে পারেননি।

তেজগাঁও বিভাগের ডিসি আরও বলেন, এভাবে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত বসিলা চল্লিশফিট, ফিউচার হাউজিং, গার্ডেনসিটি হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুজি করে সন্তানদের সন্ধান না পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনি বসিলা চল্লিশফিট তিনরাস্তার মোড় থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য একটি রিকশা নেন।

রিকশাচালক ওই নারীকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে না নিয়ে ঢাকা উদ্যান ও বসিলা এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরাতে থাকে এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে। ওই নারীকে তার স্বামীর বাসা খুঁজে বের করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ও তার অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।

এইচ এম আজিমুল হক বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে বসিলা ফিউচার টাউনের একটি জায়গায় গিয়ে রিকশাচালক তার সঙ্গীরাসহ ওই নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে শ্রমিকদের জন্য তৈরি একটি অস্থায়ী টিনের ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে ৫ জন মিলে ভিকটিমকে হত্যার হুমকি পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

তিনি বলেন, এক পর্যায়ে নারীর চিৎকারে এলাকায় কর্তব্যরত সিকিউরিটি গার্ড ও লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা ভিকটিম নারীকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এরপর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে ওই নারীকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠানো হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ২৭ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানার এ ঘটনাটনায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ ক্লু-লেস। ভিকটিম নারীও আসামিদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে, প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তাদের কাছ থেকে ভিকটিম নারীর মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, গ্রেফতার ৫ জন ওই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ও ২ জন আশপাশে অবস্থান করে সহযোগিতা করে। ধর্ষণকারী ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আশা করছি দ্রুততম সমময়ে সহায়তাকারী বাকি ২ জনকেও গ্রেফতার করতে পারবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতার তিনজনই শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। এর আগে তারা ছোটখাট অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। আমরা তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

ওই নারীর স্বামীর সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তার সন্ধান পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335