বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:০৪ অপরাহ্ন

শীতে নয়, মনির পিঠার চাহিদা ভিন্ন ঋতুতে

ফিচার ডেস্ক: দুটো মাটির উনুন ও একটি কাঁচের ছোট্ট বাক্স-এই নিয়ে সড়কের পাশে মনির পিঠার দোকান। চোখ এড়ানোর জো নেই তাকে। গরমে ধুলা, শীতে কুয়াশা, বর্ষায় জলাবদ্ধতাকে নিয়েই এক যুগেরও অধিক সময় রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় চিতই পিঠা বিক্রি করছেন পঞ্চাশোর্ধ মনি।

খিলক্ষেত কাঁচা বাজার থেকে পূর্বদিকে মিনিট দশেক হাঁটলেই আমতলা। মা, দাদি-নানিদের হাতের পিঠার স্বাদ শহরবাসী ভুলতেই বসেছিল। তবে বছরের পর বছর এই এলাকার বাসিন্দাদের পিঠার স্বাদ দিচ্ছেন মনি। একদিকে নিজের জীবিকা নির্বাহ করছেন, অন্যদিকে এলাকার মানুষের রসনা মেটাচ্ছেন। এ নিয়ে তিনবার জায়গা পরিবর্তন করে বসেছেন আমতলা মাছ বাজারের পাশে। চৌকি, কলসী, চুলা, কাঁচের বাক্স আর চিতই পিঠার কাই-এই নিয়েই মনির ব্যবসায়।

চারদিকে হু হু করে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। রাজধানীতেও শীতের মাতম। শীত আসলেই সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র বসে বাহারি পিঠার দোকান। ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি অলিতে গলিতেই দেখা মিলবে শীতকালীন পিঠার দোকান। তবে মনির পিঠার ব্যবসা শুধু শীতে কম হলেও, বছরের অন্যান্য সময় বেশ জমজমাট থাকে। শীতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পিঠার দোকান বসে বিধায় বেশ ভাটা পড়ে তার বিক্রিতে। বিক্রি কমে উল্টো পড়ে যান লোকশানে।

মনি বলেন, সারা দেশে যখন গরমের তীব্রতা বাড়ে, কিংবা বৃষ্টিতে চারপাশ যবুথবু হলেও বেশ চাহিদা থাকে তার বানানো চিতই পিঠার। কারণ শীতকাল ছাড়া সব জায়গায় এমন পিঠার দোকান থাকে না। তখনো মনির দোকানটি রয়েই যায়। ফলে পিঠার প্রতি যাদের ঝোঁক, তাদের একমাত্র অবলম্বন মনির ছোট্ট দোকানটি। তার পিঠার প্রধান ক্রেতা আশপাশের এলাকার বাসিন্দারাই।

প্রায় সব ঋতুতেই নির্দিষ্ট ক্রেতাদের আগমন লক্ষ্য করা যায় এখানে। এদিকে পিঠার দামও বেশ সুলভ মনির দোকানে। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে পিঠা প্রতি ১০ দাম নির্ধারণ করলেও মাস দুয়েক আগেও মনি প্রতি পিঠার জন্য মাত্র ৫ টাকা করে দাম হাঁকতেন। বর্তমানে মনির দিন প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো বিক্রি হলেও শীতকাল ছাড়া ভিন্ন ঋতুতে কিছুটা বাড়তি পয়সা পান তিনি।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল ছেড়ে মনি রাজধানীতে বাস করছেন ৩০ বছরেরও অধিক। খিলক্ষেতে ছোট্ট এক ভাড়া বাসায় স্বামী ও তিন সন্তানসহ থাকতেন।তবে করোনাকালে স্বামীকে হারিয়ে বাড়তি ভোগান্তির মুখে পড়েন তিনি। এর আগে মানুষের বাড়িতে কাজ করে স্বামীর উপার্জনে সঙ্গী হলেও মাস ছয়েক গড়াতেই ধরলেন ভিন্ন পেশা। জানতে চাইলে মনি বলেন, মানুষের ঘরে কাজ করলে কাপড় ধোয়া, ঘর মোচা, রান্না করার পরও নানান কাজ করে মাস শেষ হলে এক হাজার টাকা পেতেন। যা দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হত। এরপরই নিজ উদ্যোগে মাত্র এক কেজি চালের গুঁড়া নিয়ে শুরু করেন পিঠার ব্যবসায়।

এই ব্যবসায় তার প্রধান সমস্যা হয় জায়গা নিয়ে। অন্যের জায়গায় দোকান দিয়ে নানান ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে। এ নিয়ে তিনবার জায়গা পরিবর্তন করতে হয়েছে মনিকে। মনির আক্ষেপ, স্থান পরিবর্তন করায় আগের জায়গায় বেশ জমজমাট বিক্রি থাকলেও এখন বিক্রি অনেকটা কমে গিয়েছে। সম্প্রতি রাস্তার ধারে জায়গার মালিকের আপত্তিতে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে পূর্বের পিঠা বিক্রির স্থান।

এই স্বল্প পুঁজি ও স্বল্প বিক্রিতেই কেবল মনির সংসার চালানো দায়। তবে, এই ছোট্ট ব্যবসায়ে খেয়ে পরে দিন পার করছেন।বছরজুড়ে এটিই তার উপার্জনের প্রধান হাতিয়ার।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335