বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

হোমল্যান্ড লাইফে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ খোদ পরিচালকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: জীবন বিমা কোম্পানি হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ কোম্পানিটির কিছু পরিচালক। বিমা গ্রাহক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শেয়ারহোল্ডাদের স্বার্থে কোম্পানির বিভিন্ন বিষয়ের প্রকৃত চিত্র বের করতে তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন।

সম্প্রতি আইডিআরএ চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়ে তারা এসব দাবি করছেন। চিঠিতে সই করেছেন হোমল্যান্ড লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, জামাল উদ্দিন, আব্দুল হাই এবং আব্দুল আহাদ। এ চিঠির অনুলিপি অর্থমন্ত্রী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবরও পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে তারা অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় হোমল্যান্ড লাইফের কেনা ১২০ কাঠা জমি গ্রাহকের দাবি পরিশোধে বিক্রয় করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে সম্পূর্ণ টাকা গ্রাহকের দাবি পরিশোধে ব্যয় করা হয়নি। গ্রাহকের টাকা পরিশোধ না হওয়ায় পরিচালকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা পর্যন্ত হয়েছে।

কয়েকজনের দুর্নীতির জন্য এই পরিচালকরা অসম্মানিত হয়েছেন উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, কোন কোন এরিয়ায় কোন কোন গ্রাহককে কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, তার তালিকা এবং জমির বিক্রয়মূল্য সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়েছে কি না? জমি ক্রয় এবং বিক্রয়ে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না বা একজন ব্যক্তির (পছন্দের ব্যক্তি) মাধ্যমে কেন সম্পূর্ণ জমি বিক্রয় করা হয়, তা তদন্তের মাধ্যমে দেখা দরকার।

জমি বিক্রয়ের টাকা কোন কোন অ্যাকাউন্টে কীভাবে জমা করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ বোর্ডে পেশ করা হয়নি এমন অভিযোগ করে এতে বলা হয়েছে, জমি বিক্রয়ে দাপ্তরিক ও অন্যান্য খরচ দেখিয়ে কোম্পানি থেকে কত টাকা বের করা হয়েছে এবং জমি বিক্রয় গেইন ট্যাক্স কীভাবে কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, তার রশিদসহ প্রমাণাদি পেশ করা হয়নি।

এতে আরও বলা হয়েছে, জীবন বিমা তহবিল হ্রাস পাওয়ার সঠিকতা নির্ণয় এবং বর্তমান কোম্পানির জীবন বিমা তহবিল কত তা উপস্থাপন করা হয়নি। আবার কোম্পানির কতগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে এবং বিগত পাঁচ বছর সব ব্যাংকের বিবরণী এফডিআর, বিজিটিভিসহ উপস্থাপন করা হয়নি।

কোম্পানির যেসব মামলা চলমান তার বিবরণ এবং প্রত্যেক মামলার বিপরীতে মামলার শুরু থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আইনজীবী ফি, দাপ্তরিক ও টিএ/ডিএ এবং অন্যান্য খরচ যৌক্তিক ভাউচার ছাড়াই এমডি, কোম্পানি সচিব ও আইন কর্মকর্তা জুবায়েরের স্বাক্ষরে বিপুল টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিচালকরা। একে ‘কোম্পানির টাকা কর্মচারী কর্তৃক আত্মসাৎ’ বলে মনে করছেন ওই পরিচালকরা।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তথ্য আড়াল করে নিয়মবহির্ভূত অনেক টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। গত দুই বছরের বিভিন্ন ব্যয়ের বিপরীতে যে ভাউচার আছে, সেগুলো ওই সময়ের ব্যাংক স্টেটমেন্টের সঙ্গে যাচাই করলে জনগণের আমানত খেয়ানত করার প্রমাণ বের হয়ে আসবে।

এছাড়া আরজেএসসি-তে রিটার্ন জমা দেওয়ার দাপ্তরিক ও লিগ্যাল ফি বাবদ কত টাকা খরচ করা হয়েছে তার হিসাবের বৈধতা না থাকায় বিবরণী বোর্ডে পেশ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন এই পরিচালকরা।

তাদের অভিযোগ, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভুয়া শত শত কোটি টাকা ব্যবসা দেখিয়ে কমিশন, ইনসেনটিভ গ্রহণ ও কোম্পানির টাকায় ওমরাহসহ বিদেশ ভ্রমণ করে কোম্পানির অর্থ অপচয় করা হয়েছে। এ কারণে সঠিক পলিসি গ্রাহক অর্থের সংকটে সেবা পেতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। ভুয়া ব্যবসা বা পলিসির জন্য নবায়ন প্রিমিয়াম না আসায় কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় অতিরিক্ত করার পাশাপাশি কোম্পানির টাকা দিয়ে হাতে কলমে ভুয়া ব্যবসা করা এবং কোম্পানির হিসাব বিভাগের কারসাজিতে ব্যবসা হাতে কলমে দেখানো হয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন এই পরিচালকরা। তাদের দাবি, ডিসিএস ফাইলসহ যাচাই-বাচাই করলে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাবে।

কোম্পানির কতগুলো যানবাহন আছে এবং কোন যানবাহন কার নামে বরাদ্দ, কত টাকা বরাদ্দ ও প্রত্যেক যানবাহনের বিপরীতে বছরে কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তার বিপরীতে রেজিস্ট্রার নেই বলেও অভিযোগ করেছেন হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালকরা। এর মাধ্যমে লাখ লাখ আমানতের টাকা লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

কোম্পানির পাঁচ পরিচালকের এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালক শামীম আহমেদ  বলেন, কোন পরিচালক, কী ধরনের অভিযোগ করেছেন তা আমার জানা নেই। তবে পরিচালনা পর্ষদ সভায় সব সময় সব তথ্য উপস্থাপন করা হয় না, এটা সত্য। অনেক সময় সঠিক তথ্য আমরা পাইনি, এটাও সত্য।

এসময় অভিযোগপত্রে সই করা পরিচালকদের নাম উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আপনি যেসব পরিচালকের নাম বলছেন তারা সবাই দেশের বাইরে থাকেন। তারা বিভিন্ন সময় এসে অনেক কিছু খুঁজেছেন, কিন্তু পাননি। তবে তারা কোথায় কী অভিযোগ করেছেন তা আমি জানি না।

পরিচালকদের অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল  বলেন, আমি অল্প কয়েকদিন হয়েছে হোমল্যান্ড লাইফে এসেছি। আমি আসার আগে থেকেই এই কোম্পানিতে সিএমআইসি কমিটি আছে। ক্লেইম, অডিট এবং ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে কমিটি আছে। প্রতি মাসেই এই কমিটির সভা হতো। যেদিন এই কমিটির সভা হয়, সেদিন না হয় তার পরের দিন আবার বোর্ড সভা হয়। সিএমআইসি কমিটির সব সিদ্ধান্ত বোর্ড সভায় উপস্থান করা হয়। সুতরাং উনারা যেসব অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। ভাইস চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে সব কমিটির সদস্য। উনি যদি অভিযোগ করেন তথ্য দেওয়া হয় না, তাহলে এটা ঠিক নয়।

২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভুয়া ব্যবসা দেখিয়ে কোম্পানি থেকে বড় অঙ্কের টাকা সরিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। তবে তারাই অডিট কমিটিতে ছিলেন। অডিটে কী করেছেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335