শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

১৫ হাজার শীতার্তের জন্য ৪৬০ কম্বল!

নিজস্ব প্রতিবেদক: পঞ্চগড়ে প্রায় ১৫ হাজার দুস্থ ও শীতার্ত মানুষের বিপরীতে সরকারিভাবে মাত্র ৪৬০ পিস শীতের কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব কম্বল পৌরসভার ৯টি সাধারণ এবং তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১২ জন কাউন্সিলরকে নিজ এলাকার দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি এই বরাদ্দ থেকে একেক জন কাউন্সিলর মাত্র ৩০ থেকে ৩৫টি করে কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন, যা চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য বলে দাবি করেছেন পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুন।

পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুন বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে পঞ্চগড় পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের জন্য মাত্র ৪৬০ পিস শীতের কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি। সেগুলো ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি। আমাদের পৌরসভা এলাকায় ১০ থেকে ১৫ হাজার দুস্থ ও অসহায় মানুষ আছে। এই পরিমাণ বরাদ্দ আমাদের চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য।

এদিকে পঞ্চগড়ে শুক্রবার থেকে দ্বিতীয় দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আবারও ১০ এর নিচে নেমে শুরু হয়েছে হাড় কাঁপানো শীত।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে শীতে জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল, দুস্থ আর খেটে খাওয়া মানুষ।

শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভিড় করছেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে বিছানা সংকুলান না হওয়ায় অনেকে শীতের মধ্যেই হাসপাতালের বারান্দায় অবস্থান নিয়েছেন।

তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জেলাজুড়ে শীতবস্ত্রের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় দুই লাখ দুস্থ গরিব মানুষের মাঝে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৭ হাজার ৬০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তবে আরও ১৫ হাজার শীতের কম্বল বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।

পৌরসভা এলাকার দক্ষিণ তেলিপাড়া এলাকার বিরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, বাঁশের চাটাইয়ের ফাঁক দিয়ে ঘরে বাতাস ঢোকে। সন্ধ্যার পর কুয়াশা আর বাতাসের কারণে বাইরে থাকা যায় না, ঘরেও থাকা যায় না। শীতের কারণে রাতে ঘুমাতে পারি না। আমরা কম্বল পাই না। গত বছর বিজিবি একটি কম্বল দিয়েছিল। আর কেউ খোঁজ নেয়নি।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, চলতি সপ্তাহে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, উত্তরের জেলা পঞ্চগড় শীতপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এজন্য আমাদের শীত নিয়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও শীতার্ত ও দুস্থ মানুষদের শীত নিবারণে সরকারিভাবে কম্বলসহ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন ইনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬০০ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১৫ হাজার শীতের কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেগুলো হাতে পেলেই বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এর বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

এদিকে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতের কম্বলসহ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ‘প্রাক্তন বন্ধন’ সংগঠনের পক্ষ থেকে শনিবার কম্বলের পরিবর্তে দুঃস্থদের মাঝে কমফোরটার (উন্নতমানের শীতবস্ত্র) বিতরণ করা হয়েছে। আমেরিকা প্রবাসী ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী আফরোজা পারভীন লিপির অর্থায়নে বিদ্যালয় মাঠে এই শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।

উন্নতমানের শীতবস্ত্র হিসেবে একটি কমফোরটার পেয়ে পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার রামের ডাংগা মহল্লার ষাটোর্ধ্ব রেজিয়া বেগম বলেন, ‘লেপের মতন একটা মোটা কম্বল পায় হেনে সাহস বাড়ে গেইছে। মনটা কহছে এইটা নেহেনে নিন ধরিবে।’

শীতবস্ত্র বিতরণের সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহামুদুল হক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোত্তাকিয়া আক্তার জাহান মুক্তা, নাজিরা নাসরিন বুবলি উপস্থিত ছিলেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335