শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

সহায়তা জোটেনি, মহাজনের টাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা মাছচাষিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ২৫ হাজার ১৭৩টি পুকুর তলিয়ে ভেসে যায় হাজার কোটি টাকার মাছ। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন খামারিরা। বন্যার ৭ মাস পরও খামারিদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি কোনো সহায়তা। তাই মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন জেলার ১৬ হাজার ৫০০ মৎস্য খামারি।

জানা যায়, সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার সব মাছচাষি ক্ষতির মুখে পড়েন। অনেকের ব্যাংকঋণ রয়েছে। দেনা আছে মাছের খাবারের দোকানেও। সরকারি ঋণ বা প্রণোদনা না পেলে মৎস্য চাষিরা যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না সে কথা বলেছিলেন খোদ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারাও। কিন্তু সেসবের কিছুই জোটেনি সুনামগঞ্জের মৎস্য খামারিদের ভাগ্যে।

বরং সরকারি ঋণ বা প্রণোদনা এমনকি পুনরায় ব্যাংক ঋণ না পেয়ে গ্রামের মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে আবারও পুকুরে রুই, কাতল, তেলাপিয়া পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ফেলেছেন খামারিরা। সব কিছু ঠিক থাকলে এই জেলার ২৫ হাজার ১৭৩টি পুকুর থেকে মোট ২০ হাজার মেট্রিক টন ও ১১২০টি খাল-বিল থেকে ৮৬ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হবে। সব মিলিয়ে হাওর বাওরের এই জেলা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।

উৎপাদিত এসব মাছ সুনামগঞ্জের মানুষের আমিষের চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলারও চাহিদা মেটাতে পারবে। ফলে মাছচাষে নতুন সম্ভাবনার মুখ দেখছেন খামারিরা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১২টি উপজেলায় ২৫ হাজার ১৭৩টি পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে ২০টি ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৫৩টি। বাকি ২৫ হাজার পুকুরে ব্যক্তিমালিকানায় মাছ চাষ করা হয়। জেলায় মাছচাষি আছেন ১৬ হাজার ৫০০ জন।

সুনামগঞ্জের মৎস্য খামারিরা জানান, প্রতিবছর বন্যায় মৎস্য খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনো সহায়তা পাই না। তাই মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে আবারও মাছ চাষ করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছি।

সুনামগঞ্জের মৎস্য খামারি আল আমিন  বলেন, বন্যায় কয়েক কোটি টাকার মাছ বানের জলে ভেসে গেছে। অনেক চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম তখন। ভেবেছিলাম সরকার থেকে কোনো সহায়তা পেলে হয়ত ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। কিন্তু বন্যার পর সরকার থেকে কোনো ধরনের সহায়তা আমাদের করা হয়নি। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে আবার নতুন করে পুকুরে মাছ চাষ করেছি। আশা করি ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

অলিক মিয়া বলেন, প্রতিবছর বন্যায় সুনামগঞ্জের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু সরকার তাদের দিকে কোনো নজর দেয় না। এই বছর অনেক কষ্ট করে চড়া সুদে টাকা এনে মাছচাষ শুরু করেছি। আশা করি ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনিল মন্ডল  বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিরা এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি। এটা সত্যি দুঃখজনক।

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী  বলেন, মৎস্যজীবীরা যাতে সরকারি সহায়তা পায় সেজন্য মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়েছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335