শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৩ অপরাহ্ন

নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুরু পাঠদান

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াই শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান। অথচ চার লাখেরও বেশি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে ১৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামে অভিজ্ঞ করে বিষয়ভিত্তিক অনলাইন ও অফলাইন- এই দুই ধরনের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এ প্রকল্পে। এরইমধ্যে প্রকল্পের অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হলেও তার ফল তলানিতে। কারণ অধিকাংশ শিক্ষক এখনো নতুন শিক্ষাক্রমের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পাননি।

মাধ্যমিকের প্রায় ৮৬ হাজার শিক্ষক এখনো অনলাইন প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি। প্রাথমিকস্তরে এ প্রশিক্ষণ এখনও শুরুই হয়নি। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো নতুন কারিকুলামে পড়ালেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধ্যমিকের প্রায় ৮৬ হাজার শিক্ষক এখনো অনলাইন প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি। প্রাথমিকস্তরে এ প্রশিক্ষণ এখনও শুরুই হয়নি। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো নতুন কারিকুলামে পড়ালেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এরই মধ্যে গত ২ জানুয়ারি থেকে এসব স্কুলের প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। পাঠদানের ক্ষেত্রে নতুন শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ছাড়া এই কারিকুলামে পাঠদান প্রায় অসম্ভব। শিক্ষকরা এ ধরনের শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত না থাকায় ভালো মানের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা গেছে, মাধ্যমিক স্তরের মোট ৩ লাখ ৫৫ হাজার শিক্ষককে এখন পর্যন্ত অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে মোট ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। ফলে এখনো অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি ৮৬ হাজার ৬ জন শিক্ষক। অনলাইনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ৬ ও ৭ জানুয়ারি এবং ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে ১৯০ কোটি টাকা। এরইমধ্যে অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হলেও শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের ওপর তেমনভাবে পারদর্শী করে তোলা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ অনেকের।

এদিকে, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৭ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে এক হাজার ৫৬ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে রয়েছেন ১৬ হাজার প্রশিক্ষক। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে ১৯০ কোটি টাকা। এরইমধ্যে অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হলেও শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের ওপর তেমনভাবে পারদর্শী করে তোলা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ অনেকের।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য  বলেন, ধারাবাহিকভাবে সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে। যারা অনলাইনে প্রশিক্ষণ নেননি, তাদের দ্রুত অনলাইন প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরে তাদের জন্য সরাসরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও প্রশিক্ষণের পর প্রয়োগের বিষয়টি মনিটরিং করা হবে। সেখানে কোনো ত্রুটি থাকলে চলতি বছরের জুন মাসে পুনরায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের জন্য থাকবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এছাড়াও নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকরা অভ্যস্ত না হওয়ায় প্রতিবছর অন্তত দুইবার এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

নতুন কারিকুলামের অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করলেও ইন্টারনেটের গতি কম, ডিভাইজ সমস্যার কারণে সবকিছু বুঝতে পারেননি। কিছু বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন থাকলেও একদিনের প্রশিক্ষণে তা শেখা সম্ভব নয়। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্লাসে পাঠদান করাতে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

অধ্যাপক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য আরও বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ১৮ হাজার ৮২৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫২৮ জন শিক্ষক সরাসরি প্রশিক্ষণ পাবেন। কলেজ সংযুক্ত ২ হাজার ৯৭৩টি বিদ্যালয়ের মোট এক লাখ এক হাজার ৪৭৮ জন শিক্ষককেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া সরাসরি প্রশিক্ষণের আওতায় রয়েছেন ৬৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত প্রায় ৬ হাজার মাধ্যমিকের শিক্ষক।

অনলাইনে প্রশিক্ষণ নেওয়া একাধিক শিক্ষক জানান, নতুন কারিকুলামের অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করলেও ইন্টারনেটের গতি কম, ডিভাইজ সমস্যার কারণে সবকিছু বুঝতে পারেননি। কিছু বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন থাকলেও একদিনের প্রশিক্ষণে তা শেখা সম্ভব নয়। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্লাসে পাঠদান করাতে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তবে আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে আবারও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে নতুন কারিকুলামের ওপর বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

এদিকে, প্রাথমিক পর্যায়ে অনলাইন ও অফলাইন- দুই মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাননি। এসব শিক্ষকদের অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলেও সরাসরি প্রশিক্ষণ বঞ্চিত হবেন তরা। এ স্তরে (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে) ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষক রয়েছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অফলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। সারাদেশে পাঠদানের অনুমতি পাওয়া মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৯৮টি। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা ৪ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৩ জন। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৫ হাজার জন।

এনসিটিবি সদস্য (প্রাথমিক) ড. এ কে এম রিয়াজুল করিম বলেন, প্রশিক্ষক তৈরির কাজ আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে তারা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এছাড়া সব শিক্ষককে অনলাইন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য একটি প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরির কাজ চলছে।

এরই মধ্যে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলেও প্রশিক্ষণ দিতে দেরি হওয়ার কারণের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা এবং জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন কাজে শিক্ষকরা ব্যস্ত ছিলেন। পরীক্ষার ফলাফল না হওয়া পর্যন্ত (ডিসেম্বর পর্যন্ত) শিক্ষকদের অন্যসব প্রশিক্ষণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। আগে থেকেই প্রাথমিকে দক্ষতা ভিত্তিক কার্যক্রম থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের তেমন সময় লাগবে না। তারপরও এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335