বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৯ অপরাহ্ন

শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচক কমেছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি দুই বাজারেই দাম কমার তালিকায় অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে। ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে তার সাতগুণের বেশি। দরপতনের মধ্যে লেনদেনের গতি কিছুটা বেড়েছে। তবে লেনদেন দুইশ কোটি টাকার ঘরেই রয়েছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমার মাধ্যমে। এতে লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৯ পয়েন্ট কমে যায়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের পতন প্রবণতা। এতে লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৯ পয়েন্ট পড়ে যায়।

তবে লেনদেনের শেষ ২০ মিনিটে বড় মূলধনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ে। এতে বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় শেয়ারবাজার। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তুলনায় সাতগুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমার পরও ডিএসই-৩০ সূচক কিছুটা বেড়েছে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৬টির। আর ১৬০টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় এক পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

প্রধান মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৬৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৯৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৭১ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

এর আগে গতকাল সোমবার ডিএসইতে প্রায় আড়াই বছর পর দুইশ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়। শেয়ারবাজারে এমন লেনদেন খরা দেখা দিলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) লেনদেন বাড়াতে সম্প্রতি ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম) তুলে দিয়েছে।

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন দেখা দিলে চলতি বছরের ২৮ জুলাই প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। এতে শেয়ারবাজারে দরপতন কিছুটা কমলেও দেখা দেয় লেনদেন খরা। সম্প্রতি লেনদেন খরা আরও প্রকট হয়। এতে ফ্লোর প্রাইসের সমালোচনা করে বিভিন্ন পক্ষ।

এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে একটি নির্দেশনা জারি করা বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন সার্কিট ব্রেকার (দাম বাড়া বা কমার সীমা) চালু করা হয়।

নতুন সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম অনুযায়ী, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম একদিনে এক শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম কার্যকর হবে।

সার্কিট ব্রেকারের এই নিয়মের কারণে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পরও ১০ টাকার নিচে থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম নতুন করে আর কমার সুযোগ নেই। আবার যে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে বাজার মূলধনে সম্মিলিতভাবে সেসব প্রতিষ্ঠানের অবদান ৫ শতাংশের মতো। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমলেও মূল্যসূচকে খুব একটা প্রভাব রাখছে না।

এদিকে, ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১২ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বসুন্ধরা পেপারের ৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স, জেনেক্স ইনফোসিস, মুন্নু সিরামিক, ওরিয়ন ইনফিউশন, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ওরিয়ন ফার্মা এবং এডিএন টেলিকম।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪২টির এবং ৭৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335