শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০২ অপরাহ্ন

এসএমই মেলায় পাটপণ্যের স্টলে ভিড় বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাটপণ্য একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে বেশ সাশ্রয়ী। মাত্র দুই থেকে তিনশো টাকায় ভালো মানের ব্যাগ কেনা যায়। পাটের পণ্যে ঘর সাজানোও খুবই সহজ।

কথাগুলো বলছিলেন এসএমই পণ্য মেলায় আসা রাজধানীর আদাবরের বাসিন্দা শিউলি রাণী বিশ্বাস। পেশায় শিক্ষক। মেলায় সঙ্গে নিয়ে এসেছেন মেয়েকে। তার জন্য কিনবেন কয়েকটি ব্যাগ। ঘর সাজাতে পাটের বিভিন্ন ধরনের পণ্যও কিনেছেন তিনি।

শিউলি রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘মানুষ কিন্তু এখন আবার সেই প্রকৃতির কাছেই ফিরে যাচ্ছে। পরিবেশ বাঁচাতে কাজ করছে। সেজন্য আমাদেরও পাটজাত পণ্য বেশি ব্যবহার করা উচিত।’

শিউলি রাণীর মতো অসংখ্য ক্রেতা ভিড় করছেন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলা দশম এসএমই জাতীয় পণ্য মেলায়। শনিবার (২৬ নভেম্বর) ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন।

সরেজমিন দেখা গেছে, এবারের এসএমই পণ্য মেলায় পাটজাত পণ্যের ৩৫টি স্টল বসানো হয়েছে। পাটজাত পণ্যের স্টলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। স্টলগুলোতে পাট দিয়ে তৈরি ব্যাগ, জুতা, স্যান্ডেল, শাড়ি, বিছানার চাদর, পর্দা, শতরঞ্জি, সোফার কাভার, কার্পেট, টেবিল মেট, পাপোস, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবিসহ নানান ধরনের পণ্য। মেলায় বিক্রি নিয়ে পাটজাত পণ্যের স্টলের বিক্রেতা ও উদ্যোক্তারা বেশ সন্তুষ্ট।

দেশের পাটকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে ‘তুলিকা’ নামের পাটজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তা ইশরাত জাহান চৌধুরী। বছর তিনেক আগে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হন তিনি। অল্প সময়ে পেয়েছেন সাফল্যও। তিনি ২০২২ সালে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার প্রতিষ্ঠান তুলিকায় তৈরি পণ্য এখন যাচ্ছে ইউরোপের বাজারে। সম্প্রতি তিনি ফ্রান্সে গিয়ে বাংলাদেশে তৈরি পাটজাত পণ্যের গুণগত মান তুলে ধরেন।

ইশরাত জাহান চৌধুরী  বলেন, যুগের পরিবর্তন হয়েছে। ক্রেতারা পাটজাত পণ্যে মজেছেন। ঘর সাজাতে পাটের নানান পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। পাটজাত পণ্যের মধ্যে ব্যাগের চাহিদা অনেক বেশি। মেলাটা সম্পূর্ণ দেশীয় মেলা। দেশের কৃষক ও পরিবেশ বাঁচাতে মানুষ এখন অনেক সচেতন। এ কারণে মূলত পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।’

ইউরোপের বাজারে তুলিকার পণ্য রপ্তানি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দেশের বহুমুখী পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। ডাইভারসিটি প্রোডাক্ট হিসেবে পাটের অন্তত ২৭০টি পণ্য রয়েছে। যদিও আমাদের বেশি নজর পাটের ব্যাগের দিকে। পাটপণ্য মানেই পাটের ব্যাগ বুঝি। কিন্তু আরও অন্যান্য পাটজাত পণ্য আছে। সেগুলোতেও সরকারের আন্তরিকতা ও মনোযোগ প্রয়োজন। এছাড়া ভোক্তারা যেন সহজে পণ্যটা পান, সেই ব্যবস্থাও করা প্রয়োজন।’

এদিকে, এসএমই পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ। মেলায় রয়েছে ৩২৫ প্রতিষ্ঠানের ৩৫১টি স্টল। এর মধ্যে ফ্যাশন ডিজাইন খাতের সবচেয়ে বেশি ১৩০ প্রতিষ্ঠান স্টল বসিয়েছে।

খাদ্য বা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ৪৫টি, হস্ত ও কারুশিল্পের ৩৮টি, চামড়াজাত পণ্য খাতের ৩৬টি, পাটজাত পণ্যের ৩৫টি, আইসিটি পণ্য সেবার আটটি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের ছয়টি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স খাতের তিনটি, প্লাস্টিক পণ্যের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এবার অংশ নিয়েছে।

মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মাঝে এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচিতি ও কর্মসূচি তুলে ধরার লক্ষ্যে সেক্রেটারিয়েট, মিডিয়া সেন্টার, রক্তদান কেন্দ্র, ক্রেতা-বিক্রেতা মিটিং বুথ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান যেমন- বিটাক, বিএসটিআই, বিসিআইসি, বিসিক, বিএসইসি, জেডিপিসি, বিসিএসআইআর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের স্টল রয়েছে।

আর মেলার প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক, গোল্ডেন স্পন্সর ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও লংকা-বাংলা, সিলভার স্পন্সর আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং জেনারেল স্পন্সর কৃষি ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের স্টল রয়েছে।

মেলায় উচ্চ অগ্রাধিকার বা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত কৃষি বা খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি, আইসিটি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, পাট ও পাটজাত, প্লাস্টিক, হস্ত ও কারুশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত এসএমই প্রতিষ্ঠান।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335