শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন

উদ্বোধন হলো সবচেয়ে বড় লঞ্চের, চলাচল শুরু ২৪ নভেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে এমভি সুন্দরবন-১৬ নামের একটি বিলাসবহুল লঞ্চ উদ্বোধন হয়েছে। বুধবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় লঞ্চটির উদ্বোধন করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ।

লঞ্চটি নির্মাণ করেছে দেশের অন্যতম নৌযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানি। নৌপথে এ কোম্পানির আরও ১৫টি লঞ্চ চলাচল করছে। তবে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চটি আধুনিক সাজসজ্জা, নির্মাণশৈলী ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে অন্য লঞ্চগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি মালিকপক্ষের। তাদের দাবি, দেশের সবচেয়ে বেশি যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ও আকারে বড় নতুন এ লঞ্চটি।

সমুদ্রগামী বড় জাহাজের আদলে তৈরি লঞ্চটিতে যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে রাখা হয়েছে নানা ব্যবস্থা। চারতলার লঞ্চটিতে ওঠানামার জন্য রয়েছে ক্যাপসুল লিফট। এছাড়া রিভার সাইট চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, অ্যান্ড্রোয়েড টেলিভিশন, কিডস্ জোন, পানির ফোয়ারা, উন্মুক্ত ওয়াইফাই সুবিধাসহ বিনোদনের সব ব্যবস্থা। এছাড়া যাত্রীদের নামাজের জন্য আলাদা স্থান ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)। নিরাপত্তার জন্য পুরো নৌযানটিতে সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত করা হয়েছে। একজন কমান্ডার ও ছয়জন সশস্ত্র আনসার সদস্য লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন। বয়া ও লাইফ জ্যাকেটসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখা হয়েছে।

লঞ্চ নির্মাণকাজের তদারকিতে থাকা আশিকুর রহমান সাগর জানান, বিশেষজ্ঞ নৌস্থপতির নকশায় ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্যানেল প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে কীর্তনখোলা নদীর তীরে সুন্দরবন নেভিগেশন ডক ইয়ার্ডে লঞ্চটি নির্মিত হয়। লঞ্চের করিডোরে নান্দনিক ডিজাইন করা হয়েছে। জানালার কাচ, কাঠের ব্যবহার, রঙের মাধ্যমে নান্দনিক ডিজাইন করা হয়েছে। ডেকের যাত্রীদের জন্য নিচ তলা ও দোতলায় বিছানো রয়েছে মসৃণ কার্পেট। ডেকের যাত্রীদের বিনোদনের জন্য বেশ কয়েকটি বড় টিভি লাগানো হয়েছে। থাকছে অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম ও উন্মুক্ত ওয়াইফাই ব্যবস্থা।

তিনি আরও জানান, পাঁচ বছর আগে লঞ্চটি নির্মাণকাজ শুরু হয়। করোনাসহ বিভিন্ন সমস্যার প্রায় দুই বছর নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। সে হিসেবে তিন বছরে গড়ে প্রতিদিন ১০০-১৫০ শ্রমিক নিরলসভাবে কাজ করেছেন। নির্মাণকাজ শেষে পানিতে ভাসানো হয়েছে। ইঞ্জিনসহ যাত্রী পরিবহনে নানা খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।

সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু  জানান, দেশের সবচেয়ে বেশি যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ও আকারে বড় লঞ্চটির দৈর্ঘ্য ৩৬০ ফুট। নৌযানটির প্রস্থ ৬০ ফুট। এর লোয়ার ডেক, আপার ডেক ও আড়াই শতাধিক প্রথম শ্রেণির কক্ষ (কেবিন) ছাড়াও ছয়টি ভিআইপি এবং ১০ সেমি ভিআইপি কক্ষে (কেবিন) অনুমোদিত যাত্রী ধারণক্ষমতা এক হাজার ৩৫০ জন। নৌযানটিতে ৪০টি সোফা বা বিলাস আসন রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৫ শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সুবিধাও রয়েছে নৌযানটিতে। জাপানের একটি কোম্পানির তৈরি তিন হাজার ২০০ অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌযানটির বাতানুকূল প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কক্ষসহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে তিনটি জেনারেটরসহ আরও একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর সংযোজন করা হয়েছে।

আবুল কালাম ঝন্টু বলেন, লঞ্চটিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে। এর রাডার-সুকান ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল দ্বৈত পদ্ধতির। পাশাপাশি নৌযানটিতে আধুনিক রাডার ছাড়াও জিপিএস পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারবে। লঞ্চ পরিচালনার জন্য দক্ষ মাস্টার ও ইঞ্জিন কর্মকর্তা ছাড়াও ৪৫ জন বিভিন্ন শ্রেণির ক্রু থাকছেন। আগামী ২৪ নভেম্বর ঢাকা থেকে বরিশাল নদীপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চটি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335