শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন

অপরাধ দমনে অন্যতম কৌশল ‘কমিউনিটি পুলিশিং’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘কমিউনিটি পুলিশের মূলমন্ত্র শান্তি-শৃঙ্খলা সর্বত্র’ এই প্রতিপাদ্যে পালিত হচ্ছে কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২২। পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও অপরাধ দমনের অন্যতম কৌশল হিসেবে কমিউনিটি পুলিশি বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ শনিবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ দিবসটি পালন করে থাকে বাংলাদেশ পুলিশ।

পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জানা যায়, দেশের সব জেলা, মেট্রোপলিটন, রেলওয়ে, হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ইউনিট স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালন করবে।

এছাড়া কমিউনিটি পুলিশের শ্রেষ্ঠ অফিসার এবং সদস্যদের দেওয়া হবে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট। সব ইউনিট তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে কমিউনিটি পুলিশিং ডে সম্পর্কে প্রচারণা চালাবে।

কমিউনিটি পুলিশিং ডে’র তাৎপর্য তুলে ধরে সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনের বিশেষ টক শোয়ের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

২০১৩ সালে স্বল্প পরিসরে পুলিশ সদরদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) অপারেশনের অধীনে পৃথক শাখা হিসেবে কাজ শুরু করেছিল কমিউনিটি পুলিশ। ২০১৪ সালে একজন সহকারী মহাপরিদর্শকের (এআইজি) তত্ত্বাবধানে পাবলিক সেফটি অ্যান্ড প্রিভেনশন (পিএস অ্যান্ড সিপি) শাখার কার্যক্রম শুরু হয়। এটিই এখন কমিউনিটি অ্যান্ড বিট পুলিশিং নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সারাদেশে মোট ৫৪ হাজার ৭১৮টি কমিটিতে ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০১ জন কমিউনিটি পুলিশের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।

তাদের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ওপেন হাউজ ডে’র মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় সভা, গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম, অপরাধবিরোধী সভা, দৃশ্যমান পেট্রল ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনা।

২০২১-২২ পর্যন্ত সারাদেশে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৮টি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া অপরাধ প্রতিকারমূলক সভা হয়েছে ৩৩ হাজার ৮২টি।

সভায় পুলিশের কাজে সহযোগিতা, বাল্যবিয়ে রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমন, মাদকের কুফল, নারী-শিশু নির্যাতন, যৌতুকনিরোধ, মোবাইলের অপব্যবহার ও সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি সংক্রান্তে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের গুরুত্ব

অপরাধ ও অপরাধী বিদ্যমান সমাজ থেকেই উদ্ভূত হয়। তাই অপরাধ দমন ও অপরাধীকে বিচার এবং আইন আমলে আনার ক্ষেত্রে সমাজের লোকদের সহায়তা পেলে কাজটি হয় সহজ। এছাড়া বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থা ভেদে এক অঞ্চল অন্য অঞ্চল থেকে ভিন্নতা রয়েছে। এমনকি অপরাধের প্রকৃতি অঞ্চলভেদে ভিন্নতা হয়। আধুনিক যুগে নিত্যনতুন অপরাধের কৌশল বের হচ্ছে। এছাড়া জনসংখ্যার দিক বিবেচনা করে কম পুলিশ দিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য।

অন্যান্য দেশে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ, অর্থাৎ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে পুলিশের সংখ্যা জনসংখ্যার গড় অনুপাতে নগণ্য। এজন্য পুলিশিংয়ে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা থাকলে তুলনামূলক কমসংখ্যক পুলিশ দিয়েও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দূরীকরণে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। বর্তমানে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কমিউনিটি পুলিশ কতটা কার্যকর

সাধারণত আইনি সহায়তার প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষের থানা বা পুলিশের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। আর আইনি সহায়তার জন্য পুলিশ বা থানায় যাওয়ার প্রয়োজন হয় ৫-১০ শতাংশ মানুষের। বাকি ৯০-৯৫ শতাংশ মানুষের থানা বা পুলিশের সংস্পর্শে যাওয়া হয় না। ফলে কমিউনিটি বা বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালুর আগে পুলিশ বা থানায় যেতে সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তিবোধ ছিল। পুলিশের সংস্পর্শে না থাকায় পুলিশের কর্মপরিধি এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না সাধারণ মানুষ। কিন্তু কমিউনিটি পুলিশিং চালুর ফলে থানা ও পুলিশের সংস্পর্শে যেতে মানুষের অস্বস্তিবোধ নেই।

ফলে যে কোনো দরকারে সাধারণ মানুষ পুলিশের পাশে থেকে পুলিশের কাজকে সহজ করে দিয়েছে। এমনকি প্রতিটি বিটে ওপেন হাউজ ডে চালু করা হয়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষ তাদের অভিযোগ বলতে পারছে অনায়াসে।

সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশ

কম জনবল দিয়ে কীভাবে নিত্যনতুন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে সমাজে শান্তি বজায় রাখা যায় এজন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নতুন নতুন পদ্ধতি চালু করে পুলিশ। আর কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম চালুর ফলে স্বল্প জনবল দিয়েও সমাজের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অপরাধ প্রতিরোধে অনেকটা সফল হয়েছে পুলিশ।

জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (কমিউনিটি অ্যান্ড বিট পুলিশিং) মোহাম্মদউল্লাহ  বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণ এবং পুলিশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ যেমন- মাদক, নারী-শিশু নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা, ইভটিজিং ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। এছাড়া জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণেও প্রয়োজনীয় আগাম তথ্য দিয়ে কমিউনিটির সদস্য তথা সমাজের মানুষ পুলিশকে সহযোগিতা করতে পারে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটি ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে জেলে দিলো, এতে কিন্তু সমস্যার সমাধান হলো না। কারণ এক সময় তার মধ্যে আর জেলের ভয় থাকে না, বরং তার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আরও সুন্দরভাবে তাকে অপরাধ মনোবৃত্তি থেকে ফেরানো যায়। ঠিক এই জায়গাতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ভূমিকা বেশি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335