মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরে গেলো কয়েকদিনের টানা যানজটে যাত্রীদের অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এক ঘণ্টার রাস্তা তিন ঘণ্টায় পার হওয়া যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন সড়কে চলাচলকারীরা। ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে এ দুর্ভোগ যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে এমনটাই ভাবছেন এ রোডে চলাচলকারী পরিবহন মালিক, শ্রমিক, কর্মজীবী মানুষসহ সাধারণ যাত্রীরা।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টিপাতে মহাসড়কে ছোট–বড় গর্ত তৈরি হয়ে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে গেলো কয়েকদিন ধরেই যানজট হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ যানজট গাজীপুর থেকে থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত রয়েছে। ফলে ঢাকাগামী যাত্রীরা যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।
পুলিশ, যাত্রী ও বিভিন্ন পরিবহনের চালকেরা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারি বৃষ্টির কারণে সোমবার থেকে যানজট তৈরি হচ্ছিল। টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় সড়কে খানাখন্দগুলো বর্তমানে ছোট–বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। বিআরটি কর্তৃপক্ষ খানাখন্দ মেরামতে ইট–সুরকি দিলেও ভারি যানচলাচল করায় তা টিকছে না। বৃহস্পতিবার গাজীপুরের বড়বাড়ি থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত ঢাকাগামী লেনে প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় যানজট তৈরি হয়।
টঙ্গীর যানজটের কথা মাথায় রেখেই ভোরে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা রওয়ানা হয়ে তিন ঘণ্টায়ও টঙ্গী পৌঁছাতে পারেননি অনেকে। ভোগড়া এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তিনি ভোরে ঢাকা উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। টঙ্গীর মিলগেট এলাকাতেই প্রায় দুই ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে।
গাজীপুর পরিবহনের চালক মো. আব্দুর কাইয়ুম বলেন, ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাই। কিন্তু যানজটের কারণে গাড়িটি সকাল ৯টায় গাজীপুরের বড়বাড়ি এলাকায় গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছে। গাড়ি ঢাকায় ঢুকতেই পারেনি। গাড়ি থেকে নেমে অনেক যাত্রী হেঁটে ও বিকল্প পথে ঢাকা চলে যান।
তিনি বলেন, যানজটের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে। যানজটের কারণে আমাদের ট্রিপ কমে গেছে। চড়া বাজারে আমাদের আয়–রোজগারও কমে গেছে।
পরিবহন মালিক আকরাম হোসেন বলেন, পুলিশ ও বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা ইট, বালুসহ নানা উপকরণ দিয়ে সেই খানাখন্দ মেরামত করলেও ভারি যানবাহন চলাচল করায় তা উঠে গিয়ে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব খানাখন্দ ও গর্তের কারণেই যানজট তৈরি হয়েছে। অপরদিকে টঙ্গীর মিলগেট ও মুন্নুগেট এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের কাজ করতে গিয়ে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে মহাসড়কে গর্ত হয়ে পুরোনো রাস্তা বের হয়ে পড়েছে। রাস্তায় গর্ত সাময়িকভাবে মেরামত করলেও তা উঁচু–নিচু হয়ে আছে। ফলে রাস্তায় যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না।
গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. সুলতান উদ্দিন বলেন, গাজীপুরের যানজট দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আমাদের পরিবহনগুলো দৈনিক ঢাকায় ছয়বার যাতায়াত করতো, আর যানজটের কারণে এখন এক–দুই বার যাতায়াত করায় কঠিন। এতে মালিক, শ্রমিকদের আয়–উপার্জন কমে গেছে, তারা খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ–পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আজ থেকে ঢাকামুখী লেনের মেরামত কাজ শুরু হবে। এছাড়া সড়ক ভবনে সওজের প্রধান প্রকৌশলীর সভাপতিত্বে বুধবার হাইপ্রোফাইলদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে শুক্র ও শনিবারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের এ অংশটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণভাবে যানবাহন চলাচল উপযোগী স্থায়ী রাস্তা করে দেবে বিআরটি কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছি। এ অংশে কোনো গাড়ি ফেঁসে গেলে আমাদের স্ট্যান্ডবাই দুইটি রেকার রয়েছে তা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা উদ্ধার করে সচল রাখার চেষ্টা করছি। এ অংশ চওড়া করাও হচ্ছে। ঢাকাগামী গাড়িগুলো দুই–তিন লেনে এসে টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় এক লেনে ঢাকায় প্রবেশ করছে। যানজট নিরসনে গত রাতে ওই অংশে ময়মনসিংহমুখী মহাসড়কে এক লেনের মেরামত কাজ হয়েছে।