শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন

ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, এডিস নিয়ন্ত্রণে কর্মকৌশল জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ সারাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়েই চলছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২ হাজার ৭১৬ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১১৮ জন। এদিকে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি শনাক্ত হয়েছে চলতি (অক্টোবর) মাসে। অক্টোবর মাসের ২৪ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ৬২৪ জন। এছাড়া এ মাসে মারা গেছেন ৬৩ জন।

সম্প্রতি একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। রোববার (২৩ অক্টোবর) এক হাজার ৩৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। বর্তমানে সারাদেশের হাসপাতালে তিন হাজার ৪১৬ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর প্রকোপকে মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে মনে করছেন।

সামনে আরও একমাস কিংবা তার চেয়েও বেশি সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকতে পারে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে কিছু বিশেষ দিক আছে। যেমন এবার বছরজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরেও উল্লেখযোগ্য হারে ডেঙ্গু সংক্রমণ হচ্ছে।

সার্বিকভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও এ থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেন জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক, রোগতত্ত্ববিদ এবং অ্যাসেন্ড বাংলাদেশ’র কান্ট্রি লিড অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, এখানেই শেষ নয়, সামনে আরও একমাস কিংবা তার চেয়েও বেশি সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকতে পারে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে কিছু বিশেষ দিক আছে। যেমন এবার বছরজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে এ বছর ঢাকার বাইরেও উল্লেখযোগ্য হারে ডেঙ্গু সংক্রমণ হচ্ছে। এ দুটো দিক মিলিয়ে দেখলে সেটা খুব চিন্তার বিষয়ই। এটা শুধু এ বছরের জন্য নয়, সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় যে সামর্থ্য আমাদের রয়েছে তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না- এসব নিয়ে ভাবতে হবে।

প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে প্রতিটি মানুষের চার ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে হিসাবে মোট জনসংখ্যার চারগুণ অর্থাৎ ৬৮ কোটি মানুষের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তাত্ত্বিক সম্ভাবনা রয়েছে।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এখন আর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সারাদেশেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঢাকায়ই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বাইরে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই রাজধানীর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ডেঙ্গু কীটবাহিত (এডিস মশা) রোগ। এক্ষেত্রে এটি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত সংখ্যক কীটতত্ত্ববিদ, ল্যাবরেটরিজ, কীটতত্ত্ব টেকনিশিয়ান, নানা ধরনের পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রপাতি দরকার। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম মূলত মশক নিধন কর্মীর ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে কথাবার্তা হওয়ার পর বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকজন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিয়েছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া ডেঙ্গু রোগের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে না পারলে মশা নিয়ন্ত্রণ আদৌ সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাড়ে তিন শতাধিক পৌরসভায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। নগরায়ণ হলে এডিস মশা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে পৌরসভাগুলোতে নগরায়ণের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকলেও নগরকে বাসযোগ্য করে রাখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থ কোনোটাই নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে রক্তনালি থেকে জলীয় অংশ বেরিয়ে যায়। জলীয় অংশ বেরিয়ে গেলে রক্তচাপ কমে যায়, রোগীর ডেঙ্গু শকড সিনড্রোম হয়। তাই জ্বরের রোগীকে প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে।

তিনি বলেন, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে প্রতিটি মানুষের চার ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে হিসাবে মোট জনসংখ্যার চারগুণ অর্থাৎ ৬৮ কোটি মানুষের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তাত্ত্বিক সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটা হলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা সেবা দিতে যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও তেমনটা হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি পৌরসভায় কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ, যন্ত্রপাতি ও কীটনাশক কিনতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কীটতাত্ত্বিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা আসা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা সময়মতো চিকিৎসা নিতে আসেন না। একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন কখন তার হাসপাতালে যাওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, জ্বর হলে প্রচুর পানি খেতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে রক্তনালি থেকে জলীয় অংশ বেরিয়ে যায়। জলীয় অংশ বেরিয়ে গেলে রক্তচাপ কমে যায়, রোগীর ডেঙ্গু শকড সিনড্রোম হয়। তাই জ্বরের রোগীকে প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে। কিন্তু তারপরও যদি রোগী দুর্বল হয়ে যায় তাহলে প্যাকড সেল ভলিউম (পিসিভি) পরীক্ষা করতে হবে। পিসিভি ভলিউম যদি ৪০-এর বেশি হয় তবে রোগী ঝুঁকিপূ্র্ণ। তখন অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালে ভর্তির পর রোগীকে স্যালাইন দিয়ে প্যাকড সেল কমাতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335