বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন

কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানা: ৬ বছরেও শুরু হয়নি বিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে ‘জাহাজ বিল্ডিং’য়ে রাতভর অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিন সকালে এক ঘণ্টার মূল অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় সাড়ে তিন বছর আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির দশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। তবে এখনো মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। দীর্ঘ ছয় বছরেরও মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন আসামিপক্ষ।

অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ বলছেন করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব ও এক আসামি পলাতক থাকায় বিচারিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তবে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা রাষ্ট্রপক্ষের।

মামলাটি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। মামলাটি অধিকতর অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন মামলার আসামি আব্দুস সবুরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।এ জন্য বিচারক আগামী ১২ সেপ্টেম্বর মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে ‘জাহাজ বিল্ডিং’য়ে রাতভর অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিন সকালে এক ঘণ্টার মূল অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় আহত হন রিগ্যান নামে আরও একজন। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্য বলে জানায় পুলিশ।

অভিযানের দুই দিন পর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহ জালাল আলম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়।

২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- রাকিকুল হাসান রিগ্যান (২১), সালাহ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরুল্লা হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩) ও হাদিসুর রহমান সাগর (৪০)। এদের মধ্যে আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট পলাতক রয়েছেন।

২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা (হলি আর্টিজান) মামলার আট আসামির মধ্যে সাতজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে হতাহতের ঘটনায় করা মামলার ছয় আসামি রয়েছেন। তারা হলেন- আসলাম হোসেন র্যাশ, মো. হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপন।

মামলার বিচার শুরু না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার খান জাকির  বলেন, ‘মামলাটির তদন্তে প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছে। তদন্ত শেষে সাড়ে তিন বছর আগে ২০১৯ সালের ১৮ মে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলায় কোনো আসামি পলাতক থাকলে বিচার শুরু করতে একটু সময় লেগে যায়। এ মামলার আসামি আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলে কিছু সময় লেগেছে। মামলায় আসামি পলাতক থাকলে আইনগত কিছু পদ্ধতি নিতে হয়। এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবেরর কারণে গত দুই বছর মামলার বিচারিক কার্যক্রম এগোয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি। আশা করছি, আগামী তারিখে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেবেন বিচারক। এরপর মামলায় সাক্ষীদের হাজির করে দ্রুতবিচার শেষ করার চেষ্টা করবো।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সুব্রত দেবনাথ রানা বলেন, মামলাটির দীর্ঘ ছয় বছরের বিচারিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আসামিরা। আমরা মামলায় ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য রয়েছে। এ আশা করছি, মামলাটির অভিযোগ গঠন হবে। মামলাটি হলি আর্টিজান মামলার মতো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলেও প্রত্যাশা করছি। আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবো বলে আশা করছি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335