শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন

রংপুর বিভাগে গরুর দাম কম, দুশ্চিন্তায় দেড় লাখ খামারি

জিটিবি নিউজঃ আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় খামার ও বাসাবাড়িতে কোরবানির জন্য প্রায় ৯ লাখ পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।

করোনা ও বন্যা দুর্যোগের কারণে গবাদি পশুর প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে এ বিভাগের দেড় লাখ খামারি সংশয়ে পড়েছেন। অনেকেই কম দামে গরু বিক্রি করছেন।এ অবস্থায় খামারিদের লোকসান ঠেকাতে অনলাইনে পশু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ। সেই সঙ্গে হাট-বাজারগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু বিক্রির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। অঞ্চল ভেদে পশু পরিবহনের ব্যবস্থা হিসেবে প্রথমবারের মতো সড়কের পাশাপাশি রেলপথকেও বেছে নেয়া হয়েছে।এত কিছুর পরও পশুর কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া নিয়ে খামারিরা সংশয়ে পড়েছেন।

করোনা ও বন্যার প্রভাব পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের পশুর হাটগুলোতে। সেই সঙ্গে বিস্তার করেছে গরুর লাম্পিং স্কিন ডিজিজ। জমে ওঠেনি গরু কেনার হাট। তেমন আগ্রহও নেই ব্যবসায়ীদের। হাটে কোরবানীর পশু ক্রেতাদেরও নেই ভিড়।

খামারিরা জানান, ক্ষতিকর হরমোন কিংবা ইনজেকশনের ব্যবহার ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদি পশু পালন করছেন তারা। কিন্তু করোনার এই পরিস্থিতিতে গরুর ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটে গরু উঠানোর দাবি খামারিদের। গবাদি পশু খাদ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে দেশে ছোট বড় খামারিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এতে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

রংপুর মহানগরীর দর্শনা সুতরাপুর এলাকার খামারি শাহ মোঃ আশরাফুদৌলা আরজু জানান, ঈদে বিক্রয়ের জন্য তার খামারে ব্রাম্মা, শাহীবল, ফ্রিজিয়ান ও ভারতীয়সহ বিভিন্ন জাতের প্রায় শতাধিক গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। একটি গরুর পিছনে প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে ২০৬ টাকা থেকে ২১০টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি গরু ভাল ও তরতাজা। তাই ভাল দাম পাওয়ার প্রত্যাশা করছি।

জেলার মিঠাপুকুরে বলদিপুর এলাকার গরু খামারি নজরুল ইসলাম জানান, ৪৫ হাজার টাকায় ৩ বছর আগে হলেস্টিয়ান জাতের একটি গরু কিনেছিলাম। গত বছর এর দাম সাড়ে ৫ লাখ টাকা উঠেছে, কিন্তু বিক্রি করিনি। তিনি আরও জানান, গরুটির বয়স ৩ বছর ১১ মাস। শরীরের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট, প্রস্থ ৬ ফুট। এর ওজন প্রায় ২০ মণ। ষাঁড়টির কাঁচা ঘাস, খৈল, গমের ভুসি এবং চালের পালিশ (ধান ভাঙানোর সময় চালের গায়ে থাকা ভিটামিনসমৃদ্ধ গুঁড়ো) নিয়মিত খাওয়ানো হয়। নিয়মিত গোসল করানো হয়। প্রতিদিন এর পিছনে প্রায় ২০০ টাকা খরচ হয়।

রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের শরিফুল ইসলাম জানান, একটি গরুর জন্য দিনে ১৩৫ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন খাবার হিসেবে খৈল, ভুসি, কুড়া, ফিড ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়।

তিনি আরও বলেন, এ বছর ১২টি গরু মোটাতাজা করছেন। মানভেদে প্রতিটি গরুর দাম ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত হবে। গরু বিক্রি করে এবার লাভের আশা করছি। একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে গরু মূল্য নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। তিনি বলেন, যদি হাটে গরু ছাগল উঠাতে না পারি তা হলে কীভাবে ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাবে।

রংপুর জেলা ডেইরি ফার্মাস এসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা চালু রেখেছেন। ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করা হচ্ছে। কৃষকরা প্রণোদনা পাচ্ছেন। কিন্তু রংপুর জেলায় সাড়ে তিন হাজারের উপরে গরুর খামার রয়েছে। এখানে প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কর্মচারীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই দুর্যোগে তারা কোনো জায়গা থেকে সাহায্য পায়নি। এতে করে ছোট বড় অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুক ভরা আশা নিয়ে তার মতো অনেকেই গরু লালন-পালন করলেও এ বছরও শঙ্কায় আছেন রংপুর বিভাগের এক লাখ ৫৫ হাজার ৮০২ জন খামারি।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতরের উপ-পরিচালক ডা. হাবিবুল হক সাংবাদিকদের জানান, চলতি বন্যা ও লাম্পিং ডিজিজের প্রভাব পড়বে না কোরবানির পশুতে। বিভাগের আট জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা সাড়ে ছয় লাখ হলেও কোরবানি যোগ্য পশু মজুত আছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৮১টি।এর মধ্যে ষাঁড়, বলদ, গাভী, মহিষ চার লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৪টি, ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য দুই লাখ ৭১ হাজার ২৩৩টি এবং গৃহপালিত পশু আছে এক লাখেরও বেশি। তাই স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে পশু যাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এজন্য সড়ক পথের পাশাপাশি নতুন সংযোজন হিসেবে রেলপথকেও বেছে নেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদের যৌথ উদ্যোগে অনলাইনে সহজে পশু কেনার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে গোটা বিভাগে প্রায় ৪শ” কোরবানির পশুর হাটে কেনাবেচার ব্যবস্থা করছে জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে নিরাপদে পশু কেনাবেচা করতে পারেন সেজন্য সব ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি পশুর হাটে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধাসহ জালটাকা শনাক্তকরণ মেশিন থাকবে। তৎপর থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, দেশীয় শিল্প রক্ষায় ভারতীয় গরুর প্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদে পশু পরিবহনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335