বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন

পলাশবাড়ীতে আওয়ামীগ নেতার পরিচয় দিয়ে শতাধিক গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চাঁদাবাজিএলাকাবাসীর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধা জেলার   পলাশবাড়ী উপজেলায় আওয়ামীগ নেতার পরিচয়ে শতাধিক গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ও একের পর এক হয়রানী মুলক মিথ্যা মামলা হামলার প্রতিবাদে বিক্ষুদ্ধ  এলাকাবাসীর  উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) সকাল ১১ টায় রাইগ্রাম জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত   হয়েছে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এরাকাবাসী জানান রাইগ্রামের মৃত গোলাম আলীর ছেলে মিলন ব্যক্তিগত জীবনে মূলতকিছুই করেন না।আয়ের একমাত্র উৎস আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গনের আঙ্গিনা।তিনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে কখনোই জড়িত ছিলেননা বা এখনো নন।স্থানীয় সচেতন রাজনৈতিক বোদ্ধারা তাকে যারা চিনেন তারা তাকে পরীক্ষিত সুবিধাবাদী বলেই চিনেন বা জানেন।তিনি আওয়ামী লীগের স্বয়ং এমপিসহ উপজেলা দলীয় প্রথমসারির কতিপয় নেতা ঘেঁষা।আর এমন ঘেঁষাঘেঁষির সুবাদে মিলনও হয়ে উঠেছেন অন্যতম ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী রুপে।একারনে আওয়ামী লীগের প্রকৃত ত্যাগি ও নিবেদিত অনেক নেতাকর্মিই দ্বিধাবিভক্তসহ বিরাগভাজন হয়ে পড়েছেন।বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে আংাগুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।
একটি সময় এ অঞ্চলের অন্যতম হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকের অভয়ারণ্য বা প্রধান ঘাঁটি মাদক অধ্যূষিত বলে পরিচিত উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের বর্তমানে পলাশবাড়ী পৌর শহরের রাইগ্রাম।এই ঘাঁটিটি উচ্ছেদে সময়ের ব্যবধানে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এমনকি সেনা সদস্যরাও একাধিক অভিযান চালিয়েছেন।কিন্তু  প্রথমত মাদকবিহীন বেশ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলেও পরবর্তিতে ওই যা তাই-ই। যদিও অতীতের সেই পরিস্থিতি বর্তমান সময় আমুল পরিবর্তন ঘটেছে।এই মাদকঘাঁটি বেষ্টিত এই এলাকায় মিলনের বসতবাড়ী।প্রশাসনের দফায়-দফায় পৃথক অভিযানে অদ্যাবধি অগণিত মাদক মামলা দায়ের হয়েছে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ১৫৩টি মামলার স্বাক্ষী এই মিলন।অর্থাৎ সুবিধাবাদী এই মিলনের কলকাঠির ইশারায় এসব মামলার মূল উৎপত্তি।যার পুরোটাই রহস্যজনক।অর্থাৎ যে হরা সেই হরি।মিলন জ্বরে আক্রান্ত পুরো রাইগ্রামবাসি।মিলন যেমন চোরকে বলেছে চুরি করতে ঠিক তেমনি গৃহস্থকে বলেছে জেগে থাকতে।আর এমনিভাবে একই ব্যক্তি পর-পর ১৫৩টি মাদক মামলার স্বাক্ষী বনেছেন।স্বাক্ষী হবার সুবাদে দু’হাতে কামিয়েছেন অবৈধ লক্ষ লক্ষ টাকা।এর হাত থেকে রক্ষা পায়নি দিন মজুর, জেলে , ভাটা শ্রমিক, বাদাম বিক্রেতা, গার্মেন্টস কর্মী, রিক্সা চালকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার অসহায় মানুষ।মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে বলে এলাকাবাসী জানায়। চাঁদা না দিলেই এসব অসহায় মানুষকে মাদক মামলায় ফাসিয়ে দেয়া হয়।তাকে  এ কাজে সহযোগিতা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু কিছু কর্মকর্তা।
তারা আরো জানায় এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাতে চলাচলের রাস্তায় অবস্থিত ব্রিজের রেলিংয়ে বসাকে কেন্দ্র করে মিলনের নেতৃত্বে মানিক,সুমন ও মাহফুজ গংদের হামলায় দরিদ্র দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম(৩৮)ও তার ভাতিজি বেবি আক্তার (২৭)গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়েছেন।অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে চাচা-ভাতিজি দু’জনই হয়েছেন ক্ষত-বিক্ষত।আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক  ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।ঘটনার কয়েকদিন পরেেিয় গেলে ও পুলিশ মামলা গ্রহন করেনি।
গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ও একের পর এক হয়রানী মুলক মিথ্যা মামলা হামলার প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ,স্থানীয় সংসদ সদস্য  ও পুলিশ সুপারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
পলাশবাড়ীতে দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট টাকা নিয়ে অনেকেই জমি, ঘর-বাড়ী হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব : করেছেন আত্মহত্যাও || আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরব 
গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে দৈনিক কিস্তি থেকে শুরু করে চেক বন্ধক, সাপ্তাহিক ও মাসিক দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য যেন দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যবসার কল্যাণে অনেকেই হয়েছেন ‘জিরো থেকে হিরো’। অপরদিকে এদের ফাঁদে পড়ে অনেকেই হারিয়েছেন জমি ও বাড়ীঘর। শুধু কি তাই দাদনের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যাও করেছেন। আর এই সুদখোর দাদন ব্যবসায়ীদের কারণে সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক অবক্ষয়। কে রুখবে এদের প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে। এদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, রিকশাচালক থেকে শুরু করে শিক্ষক, ব্যবসায়ী এবং চাকুরিজীবি।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চল থেকে শুরু করে হাট-বাজারে এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে শুধুমাত্র সাধারণ একটি পাশবহি’র মাধ্যমে একটি অফিস ঘর সৃষ্টি করে জমজমাট ভাবে দৈনিক কিস্তির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যবসা এখন আর শুধু গ্রামের মধ্যেই সিমাবদ্ধ নেই। এ ব্যবসা এখন শহরের বাসা-বাড়ী থেকে শুরু করে একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে আবার কোথাও নাম সবর্স্ব সাইনবোর্ড এবং নামমাত্র সমিতি বা ক্লাব তৈরি করে প্রকাশ্যেই সুদ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন দাদন ব্যবসায়ীগণ। যার নেই কোনো সরকারি অনুমোদন।  ফলে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পৌরশহরসহ উপজেলার  প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলে অবৈধভাবে পুঁজি গড়ে তুলে দাদন ব্যবসা শুরু করেছে। এসব দাদন
ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ঘড়-বাড়ী, জমিজমা এমনকি নিজ বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শতশত মানুষ। অনেকেই পাওনা দারের চাপে মানসম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নিয়েছেন। সম্প্রতি সুদের টাকার জন্য সাদুল্লাপুরে এক ইমাম আত্মহত্যা করে। ময়না তদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে মামলাটি পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো পিবিআই তদন্ত করছে।
গত বৃহস্পতিবার সুদের টাকা দিতে না পেরে লজ্জায় ক্ষোভে আত্মহত্যা করেন পলাশবাড়ী পৌরশহরের মুসলিম উদ্দিন। আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৮ লক্ষ টাকার জমি দিতে হয়েছে তাকে। বাবু নামে জনৈক্য ব্যক্তি তার নিকট সুদের টাকা পাওনা থাকায় টাকা পরিশোধের জন্য নিহত মুসলিমের উপর কঠোর চাপ প্রয়োগ করে আসছিলো। টাকা পরিশোধের কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। দাদন ব্যবসায়ীদের টাকা
পরিশোধ করতে গিয়ে ঘর, বাপদাদার জমি ও ট্রাক বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছেন পৌরশহরের বৈরী হরিণমারী গ্রামের সাজ্জাত মিয়া। তিনি বিপদে পড়ে দাদন ব্যবসায়ীর নিকট কখনো দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তির উপর টাকা নিয়ে নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে আজ নিঃস্ব অবস্থায় অন্যের জমিতে স্ত্রী, ছেলেদের নিয়ে বসবাস করছেন। দুঃখজনক ঘটনা যে দাদন ব্যবসায়ীর নিকট টাকা নিয়েছিলেন সেই দাদন ব্যবসায়ীকে তার শেষ সম্বল থাকার জায়গা ঘরবাড়ি ও দাদনের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে লিখে দিতে হয়েছে।
অপরদিকে পৌরশহরের বৈরী হরিণমারী গ্রামের বিশিষ্ট কলা ব্যবসায়ী আনিছ তিনিও দাদনের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বিক্রি করেছেন জমি। হারিয়েছেন মানসন্মান। বর্তমানে নিঃস্ব অবস্থায় দীর্ঘদিন থেকে বাড়ি থেকে রাগে ক্ষোভে চলে গেছেন বাহিরে। আর এসব লোক দাদনের টাকার জন্য জমিজমা, গাড়ী-বাড়ি বিক্রি করার বিষয়ে অনেকেই জানে। তবে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় সুদখোর (দাদন ব্যবসায়ীদের) বিরুদ্ধে সরাসরি ভুক্তভোগীগণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট অভিযোগ না করার কারণ মানসন্মান ও হয়রানি। তারপরও কি তাদের মানসন্মান রক্ষা হয়েছে! হয়নি। হবেও না? রাষ্ট্র যদি দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শিঘ্রই পদক্ষেপ গ্রহণ না করতে পারে তাহলে আগামীতে শুধু সামাজিক অবক্ষয় নয়, ঘরে ঘরে দাদনের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভের সঙ্গে এ প্রতিবেদক কে জানান, ব্যাংকে লোন নিতে গেলে ভাই দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কে চেনেন না! তারা চেনেন দালাল কে? সেই সঙ্গে আজ নয় কাল করতে করতে চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট টাকা নিয়ে ব্যবসা করতে হয়। তিনি সরাসরি ব্যবসায়ীদের কে দালাল এবং হয়রানি ছাড়া লোন দেওয়ার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা আলহাজ্ব একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ এ প্রতিবেদককে জানান, দাদন ব্যবসায়ীদের বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং-এ আলোচনা হয়েছে। আমিও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। দাদন ব্যবসায়ীরা সমাজের শত্রু! এদের কারণে কয়েকদিন আগে পৌরশহরের প্রফেসর পাড়ায় মুসলিম নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। যা অত্যান্ত দুঃখজনক। তিনি পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং-এ দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তাব করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি আরও বলেন, দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শিঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন।
দাদন ব্যবসায়ীদের বিষয়ে পলাশবাড়ী প্রেসক্লাব সভাপতি ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য রবিউল হোসেন পাতা  এ প্রতিবেদকে জানান, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং-এ দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আজ অবধি দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না।
সচেতন অভিজ্ঞমহল বলছেন, দ্রুত জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে (সুদখোর) দাদন ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে তাদের অবৈধ সম্পদ বাজোয়াপ্ত করাসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করেন। সেই সঙ্গে সব ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে সহজ শর্তে লোন দেওয়ার আহবান জানান ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © gtbnews24.com
Web Site Designed, Developed & Hosted By ALL IT BD 01722461335