মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন
সুজন মোল্লা:এই পথ চলার শেষ হবে কবে। জন্ম থেকে’ই অকেজো একটি পা নিয়ে মায়াহীন বিচিত্র এই ভূবনে বেড়ে ওঠা আব্দুর রহমানের এমনই প্রত্যাশা এই সমাজের কাছে। দীর্ঘ বছরেও তার সেই কবে শেষ হবের উত্তরটা খুঁজে পাননি তিনি। সৃষ্টির ওপরে সম্পুর্ণ শুকরিয়া আদায় করে এর জন্য নিজেকে কখনও তিনি দুঃখী মানুষ মনে করেননি।
বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের শাঁখারিয়া গ্রামের মৃত শাহেদ আলী হাওলাদারের ছেলে আব্দুর রহমান। পিতার মৃত্যুর পরে অন্য ভাইয়েরা যার যার মতো করে আলাদা হয়ে যায়। এর পর থেকেই মা, স্ত্রী,দুটি সন্তান সহ ৫ জনের সংসারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েন আব্দুর রহমান। শুরু হয় তার কষ্টের পথচলা।
অন্যসব মানুষের মতো তার দুটি পা-সচল না থাকলেও মানুষের কাছে তিনি হাত পাতেননি কখনও। সংসারের একমাত্র চালিকা শক্তি হয়ে ভাড়ার রিক্সা নিয়ে নেমে পড়েন উপজেলা শহরে। তবে আব্দুর রহমানের একটি পা পঙ্গু হওয়ায় তার রিক্সায় চড়তে চান না অনেকেই। এর মধ্য থেকেও যেটুকু পরিমাণ অর্থ সে আয় করেণ তার বেশির ভাগই দিতে রিক্সার মালিককে।
পরের অবশিষ্ট সামান্য পরিমান অর্থ দিয়েই কোনমতে চালিয়ে নিচ্ছেন সংসার নামক তার নিজস্ব পৃথিবীটাকে। যে নিজস্ব পৃথিবীতে আছে কেবল হাহাকার আর যন্ত্রনা। তারপরেও সবার মুখে অন্য তুলে দিতেই তার জীবন যুদ্ধ। তবুও সারাদিন যুদ্ধ করেও সংসার চালানোটা নুন আনতে পানতা ফুরানোর মতনই। পেটপুরে তিন বেলার কোন বেলাই খাওয়া হয় না তার। নিজের অবুঝ সন্তানের সস্তা সরল আবদারও মেটাতে পারেনা পঙ্গু আব্দুর রহমান। তার পেশা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ, তার বাম পা সম্পূর্ণ অচল হওয়ায় রিক্সা পিছনের দিকে নেওয়ার সময় নিতে হয় অন্যের সাহায্য।
অন্য কোন কাজ করতে না পারায় তার জন্য মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে রিক্সা চালানো। এই অবস্থায় আব্দুর রহমানের প্রয়োজন একটি ইজি-বাইক বা বৌ-গাড়ির। তবে অসহায় পঙ্গু রিক্সা চালকের পক্ষে তা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাই দিন শেষে আব্দুর রহমানের মনের ভিতরে অজান্তেই গেয়ে ওঠে মনমাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলামনা। তবে সংসারের বৈঠা যে তাকে বাইতে’ই হবে,কেননা জন্ম জননী মা,স্ত্রী ও দুটি অবুজ সন্তান রয়েছে তার বৈঠার ওপরে ভরসা করে। এমনটা ভেবেই সকাল হলেই রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন পঙ্গু আব্দুর রহমান। তবে রিক্সা নিয়ে পঙ্গু অবস্থায় ছুটে চলা কবে শেষ হবে এমনই ছাপ ছিলো তার অসহায় অবয়বে।